কাজকর্মে আকস্মিক বিঘ্ন ও ভোগান্তি। আইনজীবী ও মুদ্রণ, কাগজ ও কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীদের শুভদিন। ... বিশদ
জঙ্গলমহলের একাধিক গ্রামে ইদানীং থেকে যাচ্ছে দলছুট হাতিরা। তারাই ত্রাহি ত্রাহি পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। তক্কে তক্কে থেকে গভীর রাতে হামলা, ভাঙচুর, তাণ্ডব স্কুলে। দরজা-জানালা ভাঙচুর করে লুট করছে মিড-ডে মিলের চাল। না পেলে উগ্রমূর্তি ধারণ করে হানা দিচ্ছে আশপাশের বাড়িতে হানা। শুঁড়ের সামনে যা কিছু পেয়েছে, সবই তছনছ করেছে। তাণ্ডবের সর্বশেষ সংযোজন ঝাড়গ্রাম ব্লকের ধোবাধোবিন জুনিয়র হাইস্কুল। রবিবার গভীর রাতে স্কুলে হানা দেয় দু’টি দলছুট হাতি। জানালা ভেঙে মিড মিলের চাল খাওয়ার চেষ্টা করে। সেটা না পেরে আশপাশের বাড়ি ভাঙচুর করে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িকেও কার্যত দলা পাকিয়ে দেয়। ভাগ্যিস, গাড়িটিতে চালক কিংবা কোনও যাত্রী ছিলেন না! তবে, এটা একটা উদাহরণ মাত্র। ঝাড়গ্রাম জেলার কোথাও না কোথাও রোজদিন হাতির তাণ্ডব চলছেই। বেঘোরে মারা যাচ্ছে মানুষ। ফসলের দফারফা হচ্ছে। এবার অভূতপূর্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে।
উদ্বিগ্ন জেলা শিক্ষাদপ্তর। ঝাড়গ্রাম জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘সত্যিই বিষয়টি আমাদের খুব ভাবাচ্ছে। ইতিমধ্যেই সমস্যার কথা আমরা বনদপ্তরকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’ ঝাড়গ্রামের ডিএফও পঙ্কজ সূর্য্যবংশী বলেন, ‘গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। হাতিগুলি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। সরকারি প্রক্রিয়া অনুসারে মানুষ ক্ষতিপূরণ পাবেন।’ ধোবাধোবিন জুনিয়র হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী জয়শ্রী পাত্র বলে, ‘রাত হলেই হাতি চলে আসে বাড়ির সামনে। সারা রাত জেগে সকালে আর স্কুলে আসতে পারি না। এছাড়া টিউশনেও পড়তে যেতে খুব ভয় করে। পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে খুব।’ জানা গিয়েছে, এদিন ঘড়ির কাটায় তখন রাত একটা। গুটি গুটি পায়ে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ে দুটি হাতি। প্রথমে স্কুলের জানালা ভাঙতে শুরু করে। সেই আওয়াজে ঘুম থেকে উঠে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। জানালা ভাঙলেও স্কুলের মিড ডে মিল শুঁড়ের সাহায্যে বার করতে পারেনি। সেই ক্ষোভে স্কুলের উল্টো দিকে বৃন্দাবন দাসের বাড়িতে হামলা চালায়। ৪টি গাছের কাঁঠাল খেয়ে নেয়। এরপর খাবারের সন্ধানে বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুর চালাতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে জঙ্গলে চলে যায় হাতি দুটি।
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম ডিভিশন এলাকায় মোট ৪৭ টি হাতি রয়েছে। এরমধ্যে ঝাড়গ্রাম, খাসজঙ্গল এলাকায় ১ টি, শালবনী এলাকায় ৩ টি, সিধাডাঙ্গা এলাকায় ১টি, বৃন্দাবনপুর এলাকায় ২ টি, পোষরো এলাকায় ৩ টি, কুসুমডাঙ্গা এলাকায় ১ টি, ধোবাধোবিন এলাকায় ২ টি, লোধাশুলি, কইমা এলাকায় ১ টি, ভাওদা এলাকায় ৫ টি, আমলাচটি এলাকায় ১১ টি, কাজলা এলাকায় ৩ টি, জারুলিয়া এলাকায় ১ টি, মানিকপাড়া, রাজাবাসা এলাকায় ৫ টি, গোবিন্দপুর এলাকায় ২ টি, ঠাকুরথান এলাকায় ১ টি, লাউরিয়াদম এলাকায় ১ টি ও গিধনী, চন্দুয়াজোকা এলাকায় ৪ টি হাতি রয়েছে। জঙ্গলের মধ্যে থাকা বিশেষ ক্যামেরার মাধ্যমেও নজরদারি চালানো হচ্ছে।