কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘটনার সূত্রপাত। নিহত জয়দেব রায় পেশায় রাজমিস্ত্রি। রাতে খানা জংশন এলাকায় কাজ সেরে সাইকেলে বাড়ি ফেরার সময় সাটিনন্দী গ্রামে কলাদিঘির পাড়ে কয়েকজন সশস্ত্র দুষ্কৃতী তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি বাঁচার জন্য চিৎকার করেন। সেই সময় তৃণমূল কর্মীরা দলবেঁধে ছুটে আসেন। কিন্তু, রাতের অন্ধকারে জয়দেব রায়কে টেনে হিঁচড়ে কিছুটা দূরে নিয়ে চলে যায়। তাঁকে এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। ডান পা, থুতনিতে কোপ মারা হয়। পা ভেঙে দেওয়া হয়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়ান আরও কয়েকজন তৃণমূল কর্মী। জয়দেব রায়কে সঙ্কটজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পর মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর গোটা এলাকা থমথমে। গ্রামে পুলিস টহল রয়েছে। ওই ঘটনায় আরও তিন তৃণমূল কর্মী অনিল মালিক, মোহন পুইলে ও বামাপদ মালিক জখম হয়েছেন। তাঁরা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তৃণমূল কর্মীদের কয়েকটি বাড়িতে অ্যাসবেসটসের ছাউনি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এদিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে চাপ চাপ রক্ত। বাড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের স্ত্রী চম্পা রায়। প্রতিবেশীরাও বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন। গ্রামে পুলিস ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের টহল রয়েছে। গ্রামজুড়ে চাপা আতঙ্ক রয়েছে। কয়েকদিন ধরে এলাকায় অশান্তি ছিল। গণ্ডগোলের পূর্বাভাস ছিলই। সেজন্য পুলিসও এলাকায় ছিল। যদিও তারপরও খুনের ঘটনা এড়ানো হয়নি। স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় ৩০জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন চম্পা রায়। পুলিস সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, খুনের ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সোমবার রাতে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে জয়দেব রায়ের বাঁচার আকুতি শুনে অন্যান্যদের সঙ্গে ছুটে গিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী রমেশ মালিক। তিনি বলেন, সন্ধ্যা থেকে কয়েকজন পুকুর পাড়ে বসে মদ খাচ্ছিল। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ জয়দেব রায় বাড়ি ফেরার সময় ওরা তাঁর উপর হামলা চালায়। চিৎকার শুনে আমরা ছুটে যাই। কিন্তু, অন্ধকারের মধ্যে ওকে টেনে নিয়ে পালিয়েছিল। এরপর আমরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করি। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিস চলে আসে। রাতে পুলিস আশঙ্কাজনক অবস্থায় জয়দেব রায়কে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
নিহত জয়দেব রায়ের ছেলে দীনু রায় বলেন, আমার বাবা তৃণমূল কংগ্রেস করতেন। পার্টির মিটিং মিছিলে অংশ নিতেন। লোকসভা ভোটের পর সাটিনন্দী এলাকায় বিজেপি-র হুমকি ধমকি চলছে। খণ্ডঘোষ বিধানসভার অন্তর্গত সাটিনন্দী গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে বিজেপি ১২৭ভোটের লিড পেয়েছে। বিষ্ণুপুর লোকসভা থেকে জয়ী হয়েছেন বিজেপি-র সৌমিত্র খাঁ। এরপরই আমাদের হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছিল। আমার বাবার খুনের ঘটনায় দোষীদের শাস্তি চাই।
এদিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, লোকসভা ভোটে বিজেপি ১৮টা আসন পাওয়ার পর ওরা রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। গরিব মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙছে। বিজেপি ভাবছে, আমাদের কর্মীদের খুন করে তৃণমূল কংগ্রেসকে শেষ করে দেবে। কিন্তু, ওরা সেটা করতে পারবে না। বিজেপি-র জেলা সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সাটিনন্দীতে খুনের ঘটনায় বিজেপির কোনওরকম যোগ নেই। দু’টি পাড়ার মধ্যে গণ্ডগোলের ঘটনা থেকে সংঘর্ষ হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের দু’টি শিবিরের মধ্যে কয়েকদিন ধরে গোলমাল হচ্ছিল। তারপর সোমবার রাতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় অযথা আমাদের জড়ানো হচ্ছে।