সংবাদদাতা, বহরমপুর: পরিযায়ী পাখির দল চাষিদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। রাত জেগে বোরো ধানের বীজতলা পাহাড়া দিচ্ছেন চাষিরা। কোথাও জমিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে কাকতাড়ুয়া। কোথাও জমির আলে চাষিরা টায়ার জ্বেলে দিয়ে আসছেন। কেউ বা বীজতলা পর্যন্ত ইলেকট্রিক তার টাঙিয়ে উজ্জ্বল হ্যালোজেন লাইট জ্বেলে দিয়ে পাখিদের গতিপথ বদলে দিচ্ছেন। তবুও ধানের বীজতলা পাখিদের থেকে বাঁচাতে পারছেন না চাষিরা। শীতের পরিযায়ী পাখির দল এখন চাষিদের চরম দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। চাষিদের বক্তব্য, ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল বীজতলায় নেমে রাতারাতি ধানের বীজ সাবাড় করে দিয়ে চলে যাচ্ছে। ক্ষতির পাশাপাশি নতুন করে বীজ ছড়াতে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এবার এমনিতেই মুর্শিদাবাদ জেলাজুড়ে বোরো চাষ পিছিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি চাষিরা ধানের বীজতলা তৈরি করে বীজ ছড়াতে শুরু করেছেন। বীজতলার অসুর এখন পরিযায়ী পাখির দল। প্রতিবছর শীতের সময় পরিযায়ী পাখির দল নির্দিষ্ট জলাশয়ে এসে ডেরা বাঁধে। জলাশয়ে মাছের চাষ কমে যাওয়ায় পরিযায়ী পাখিদের খাবারের সঙ্কট দেখা দিতে শুরু করেছে। ঝাঁক ঝাঁক পাখির দল খাবারের খোঁজে রাতের আকাশে উড়ছে। ঠিক এই সময়েই চাষিরা বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেন। শূন্য থেকে নীচে চকচকে জায়গা দেখলেই সেখানে পাখির দল ‘ল্যান্ড’ করছে। শয়ে শয়ে পাখি রাতভর খুঁটে খুঁটে ধানের বীজে পেট ভরিয়ে ভোর হওয়ার আগেই বাসায় ফিরে যাচ্ছে। সকালে মাঠে গিয়ে চাষিরা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ছেন। বীজতলায় পাখির পায়ের দাগ ছাড়া কিছুই নজরে আসছে না। ফের সেই বীজতলায় নতুন করে ধান ছড়াতে হচ্ছে। পরিযায়ী পাখি তাড়ানোর কৌশল নিতে এক এক চাষি নতুন নতুন উপায় বের করছেন। কেউ জমিতে দু’-চারটি কাকতাড়ুয়া বসিয়ে দিচ্ছেন। কেউ আবার জমিতে দড়ির সঙ্গে পলিথিনের প্যাকেট ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। বাতাসে পলেথিনের প্যাকেট ওড়ার শব্দ হচ্ছে। ভয়ে পাখি সেই জমিতে নামছে না। অনেকে আবার সন্ধ্যারাতে জমিতে সাইকেলের টায়ার জ্বালিয়ে দিয়ে আসেছেন। আগুন দেখে পাখির দল ভয়ে পালাচ্ছে। মাঠে হ্যালোজেনের চোখ ধাঁধানি আলোয় পাখির গতিপথ বদলাচ্ছে। এই পন্থাতেও যারা ভরসা হারাচ্ছেন তাঁরা রাত জেগে টিন বাজিয়ে পাখি তাড়াচ্ছেন।
জীবন্তি বিল এলাকার চাষি মহব্বত শেখ বলেন, অনেক রকম কৌশল নিয়ে দেখেছি ক্ষুদার্থ পাখিদের কিছুতেই বাগে আনা যায়নি। বাধ্য হয়ে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে। বোরো চাষের সময় এই সমস্যা প্রতি বছরের। রাঙামাটি চাঁদপাড়া এলাকার বাসিন্দা সজল বিত্তার বলেন, পরিযায়ী পাখির দাপট বোরো চাষে সমস্যা বাড়াচ্ছে। কৃষিদপ্তর উপায় বলে না দিলে বোরো চাষ মুখ থুবড়ে পড়বে।
চাষিদের দাবি, উন্নত ধানের বীজের প্রতি কেজির দাম ৬০-১২০ টাকা পর্যন্ত হয়। বিঘা প্রতি ১০ কেজি হারে বীজ লাগে। বীজ ফুটে সবুজ চারা বের হতে শুরু করলে আর পাখির ভয় থাকে না। কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, তবে পরিযায়ী পাখিদেরও যাতে কোনও ক্ষতি না হয় তাও দেখতে হবে। চাষিদের জমিতে দানা বিষ দিতে বারণ করা হয়েছে।