সুখেন্দু পাল ,বহরমপুর : মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা ওভারলোডিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযানে নামায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে। প্রতি মাসে ৮০লক্ষ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, লাগাতার অভিযান চালানোয় জেলায় ওভারলোডেড ট্রাক বা লরির সংখ্যাও কমেছে। কয়েক মাস আগেও বীরভূম থেকে অতিরিক্ত পাথর বা বালি ভর্তি ট্রাক মুর্শিদাবাদ হয়ে কলকাতা যেত। বহরমপুর শহর দিয়েও অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই ট্রাক যাতায়াত করত। তার ফলে রাস্তার অবস্থার দফরফা হয়ে গিয়েছে। টোল ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য ট্রাকগুলি গ্রামীণ রাস্তা ব্যবহার করত। সেই কারণে গ্রামের রাস্তাগুলিও বেহাল হয়ে পড়েছে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ওভারলোডিং বন্ধের জন্য লাগাতার অভিযান চলবে। কোনও ট্রাক বা লরি দেখে সন্দেহ হলেই সেটি আটক করা হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক(সাধারণ) সিরাজ দানেশ্বর বলেন, অতিরিক্ত সামগ্রী নিয়ে লরি বা কোনও ট্রাক যাতায়াত করলে জরিমানা আদায় করা হয়। এখন গড়ে প্রতি মাসে ৮০লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে। কোনও কোনও মাসে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ছে। প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, প্রায় তিন মাস আগেই রাজ্য থেকে ওভারলোডিং বন্ধের জন্য কড়া নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তারপর থেকেই ধরপাকড় শুরু হয়েছে। পুলিস ছাড়াও পরিবহণ দপ্তরও অভিযানে নেমেছে। বীরভূম থেকে মুর্শিদাবাদ ঢোকার রাস্তাগুলিতে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে। বেশিরভাগ ট্রাক মোড়গ্রাম হয়ে এই জেলায় ঢোকে। সেই কারণে মোড়গ্রাম থেকে নলহাটি যাওয়ার রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। গ্রীষ্মের সময় ধুলোর দাপটে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়ত করা দায় হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনাও হামেশাই ঘটছে। ওই রাস্তা ছাড়া পাঁচগ্রাম হয়েও বেশকিছু ট্রাক যাতায়াত করে। এই পয়েন্টগুলিতে লাগাতার অভিযান চলছে। এক আধিকারিক বলেন, বিভিন্নভাবে জরিমানা আদায় করা হয়। প্রথমবার কোনও ট্রাক অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে ধরা পড়লে ২০হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। এছাড়া প্রতি টন ওভারলোডিংয়ের জন্য দু’হাজার টাকা অতিরিক্ত জরিমানা আদায় করা যায়। দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে দ্বিগুণ জরিমানা গুনতে হতে পারে। তারপর ধরা পড়লে পারমিট বাতিল করার কেন্দ্রীয় আইন রয়েছে। তবে একবার জরিমানা দিলে দ্বিতীয়বার ভুল সাধারণত ট্রাকচালকরা করেন না। ট্রাকগুলিতে বেশিরভাগ সময় পাথর এবং বালির ওভারলোডিং করা হয়। তাতে রাস্তা বেহাল হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। ট্রাক মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রথমে তাদের সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরই অভিযানে নামা হয়। প্রতিটি চেকপোস্টে সব সময়ই চেকিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারপরও রাতের দিকে কোনও কোনও সময় কিছু ট্রাক অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যাতায়াত করছে বলে অভিযোগ।
ওভারলোডিং বন্ধ হওয়ায় তার খেসারত একশ্রেণির আমজনতাকেও দিতে হচ্ছে। বিশেষ করে যাঁরা নতুন বাড়ি তৈরি করছে, তাঁদের বাড়তি খরচ হচ্ছে। মোড়গ্রাম এলাকার বাসিন্দা সাফিকুল শেখ বলেন, ওভারলোডিং বন্ধ থাকায় রাস্তা ভালো থাকবে, দূষণও কমবে। আগে ধুলোর চোটে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা দায় হয়ে উঠত। ওভারলোডিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বালি বা পাথরের দাম বেড়ে গিয়েছে। আগে এক ট্রাক্টর বালি বা পাথর যে দামে পাওয়া যেত, এখন তার থেকে অনেক বেশি দাম দিয়ে তা কিনতে হয়। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম ঠিক করছে। ওই দামেই নিতে হচ্ছে।