বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
১৯৮৯ সাল থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ও ইসলামপুরে একের পর এক কৃষিজমি চা বাগানে রূপান্তরিত করা হচ্ছিল। বিনিয়োগকারী, পুঁজিপতিরা চাষিদের কাছ থেকে কম দামে একরের পর একর কৃষিজমি কিনে চা বাগান তৈরি করতে থাকে। সে সময় জমি কেনাবেচার জন্য দালাল চক্রও গজিয়ে ওঠে। কেউ জমি বিক্রি করতে না চাইলে তাঁকে নানাভাবে সমস্যায় ফেলা হতো। চাষিরা বাধ্য হয়ে ওই জমি বিক্রি করে দিতেন। জমির দামও খুবই কম দেওয়া হতো। অনেক চাষির দুই-তিন বিঘা জমিই সম্বল ছিল। তা চাষ করে সংসার প্রতিপালন করতেন। কিন্তু বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করে তাঁরা দিনমজুরে পরিণত হন। কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে ছুটতে হয় তাঁদের। পরিবারের অন্য সদস্যরা চা বাগানের শ্রমিকে পরিণত হন। প্রতিবাদ করেন করিম।
করিমের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৫ সালে জ্যোতি বসু তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় করিম সাহেব দাবি করেন চা বাগানের জন্য কৃষি জমি নেওয়া যাবে না। সরকার সেই দাবি না মানায় তিনি মাথায় গামছা বেঁধে প্রতিজ্ঞা করেন যত দিন তাঁর দাবি পূরণ না হবে মাথায় গামছা বাঁধা থাকবে। তারপর থেকে যেখানেই করিম সাহেব যেতেন, তাঁর মাথায় পাগড়ির মতো গামছা বাঁধা থাকত। ২০০১ সালে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করেন চা বাগানের জন্য চাষের জমি নেওয়া যাবে না। তারপর করিম সাহেব বলেন, চাষিদের জমি খুবই কম দামে কেনা হয়েছে। তাই বাগানের ১০ শতাংশ লাভ চাষিদের দিতে হবে। আগামীতেও কোনও কাজের জন্য চাষের জমি নেওয়া হলে লাভের ১০ শতাংশ জমিদাতাকে দিতে হবে। এই দাবি বুদ্ধবাবু মানেননি। কিন্তু কৃষিজমিতে চা বাগান করা যাবে না বলে ঘোষণা করায় করিম সাহেব মাথা থেকে গামছা খুলে নেন। কিন্তু তা গলায় জড়িয়ে নেন। তিনি ঘোষণা করেন, লাভের ১০ শতাংশ যতদিন না কৃষকরা পাবেন তত দিন তিনি গলার গামছা খুলবেন না। শুধু চা বাগানই নয়, তৃণমূল সরকারের আমলে কৃষিজমিতে ইটভাটা গড়া শুরু হলে তারও প্রতিবাদ তিনি করেন।
এবার উপনির্বাচনে প্রার্থী করিম সাহেব প্রার্থী হওয়ায় কৃষকের স্বার্থে তাঁর আন্দোলনের কথাও ঘুরে ফিরে আসছে। উঠে আসছে তাঁর রাজনৈতিক বেশের চর্চা। করিম সাহেবের সাফ কথা, কৃষি জমিতে চা বাগান করা চলছিল। তা বন্ধের দাবিতে আমি ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মাথায় গামছা বেঁধে রেখেছিলাম। এখন গামছা গলায় রাখছি। এটাই আমার পরিচয়। আমার দাবি চাষিদের জমি নিয়ে প্রকল্প করা হলে তাদের জমির দামের পাশাপাশি প্রকল্পের লাভের ১০ শতাংশ টাকা দিতে হবে। এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত গলায় গামছা থাকবে।
প্রশাসন জানিয়েছে, চাষের জমি কিনে এখন নতুন চা বাগান তৈরি আইনত বন্ধ আছে। ইসলামপুর ও চোপড়ায় ২৪টি টি এস্টেট আছে। এছাড়া প্রায় ২০টি ছোট চা বাগান আছে। অনেক চাষি নিজের জমিতে নিজেই চা বাগান করেছে।