সংবাদদাতা, মাথাভাঙা: কোচবিহার ঢুকতে তখনও খানিকটা দেরি। নদীয়ার রানাঘাট থেকে আসা বেসরকারি বাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সাকুল্যে জনা কুড়ি যাত্রী। সোমবার,ঘড়িতে তখন সকাল দশটা পাঁচ। ঘোকসাডাঙা চৌপথির কাছে আসতেই পিছনের সিটে বসা এক মহিলা সহ চার যুবক হঠাৎই উঠে এগিয়ে আসে সামনের দিকে। তখনও কী হতে চলেছে,বুঝতে পারেননি সহযাত্রীরা। কিন্তু কেবিনে পা রাখতেই বদলে যায় তাদের শরীরী ভাষা। লুকিয়ে রাখা আগ্নেয়াস্ত্র বের করে মুহূর্তে স্ব-মূর্তি ধারণ করে তারা।  প্রথমে চড়াও হয় সহ চালকের উপর। বন্দুক ঠেকায় তার মাথায়। বাস থামাতে বলে। চালক না শোনায় কেবিনেই গুলি চালিয়ে দেয় এক দুষ্কৃতী। এই দৃশ্য দেখে তখন আত্মারাম খাঁচা যাত্রীদের। ধারালো অস্ত্র, কুঠার ও বন্দুক হাতে দুষ্কৃতীরা তখন গোটা বাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। চিৎকার করে বলতে থাকে, চালকের সিটের নীচে থাকা পার্সেলটা কোথায়! চটপট বের করে দে। না হলে কপালে দুঃখ আছে। সবমিলিয়ে দু’মিনিটের অপারেশন। পার্সেল হাতে পেতেই বাস থেকে নেমে গাড়ি চেপে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের অবশ্য দাবি, অপারেশন শেষ করে নেমে যাওয়ার সময় এক মহিলার গলায় থাকা সোনার হারও ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। 
জেলা পুলিস সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, বাসের চালক ও সহ চালকের উপর হামলা চালিয়ে দু-তিনটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ওদের কাছে হয়তো খবর ছিল ব্যাগে কিছু রয়েছে। দুষ্কৃতীদের ধরার চেষ্টা চলছে। পুলিস সূত্রে খবর, ডাকাতদের ব্যবহার করা গাড়িটি কোচবিহারের একটি গ্যারেজ থেকে রাতে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।  
ঘটনায় স্পষ্ট, নিছক ডাকাতি নয়, দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য ছিল ড্রাইভারের সিটের নীচে থাকা পার্সেলটি। আর এখানেই প্রশ্ন, এমন কী ছিল ওই পার্সেলে! বাসের চালক ও সহ চালক কি এ ব্যাপারে সবটাই জানতেন? কেনই বা ওই পার্সেলটি চালকের সিটের নীচে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল? যদিও পুলিসের দাবি, তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে এখনও কিছু বলা সম্ভব নয়।
চলন্ত বাসে ডাকাতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন পুলিস সুপার, মাথাভাঙার অতিরিক্ত পুলিস সুপার সন্দীপ গড়াই, এসডিপিও সমরেন হালদার। যাত্রীদের পাশাপাশি বাসের চালকের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। দুষ্কৃতীদের মারে জখম হওয়ায় ঘোকসাডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয় সহ চালক আশিস পালকে।  পরে তাঁকে রেফার করা হয় কোচবিহার মেডিক্যালে। 
দুষ্কৃতীদের ধরতে মাথাভাঙা-কোচবিহার রাজ্য সড়ক সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় নাকা চেকিং শুরু করে পুলিস। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর ধূপগুড়ি নাকা চেকিং পয়েন্টের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়া একটি গাড়ির ছবি পোস্ট করে পুলিস জানায়, ওই গাড়িতে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। 
বাসের যাত্রী স্মৃতি সরকার বলেন, কোচবিহারে যাওয়ার জন্য ঘোকসাডাঙা চৌপথি থেকে বাসে উঠেছিলাম। পিছনে সিট ফাঁকা না থাকায় কেবিনে গিয়ে বসি। বাস কিছুদূর যেতেই পিছনের সিট ছেড়ে কয়েকজন কেবিনে আসে। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। কিছু একটা পার্সেল চাইছিল তারা। কেবিনে একটি গুলিও চালিয়ে দেয়। ভয়ে চিৎকার করে উঠি। আমাকেও ওরা মেরে ফেলার ভয় দেখায়। তারপর চালকের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।