অতিরিক্ত কর্মের চাপ গ্রহণ করে বেকায়দায় পড়তে পারেন। নতুন কর্মলাভের সম্ভাবনা। আয় বাড়বে। ... বিশদ
ঠিক সিনেমার সেট নয়। কিন্তু হাতে আঁকা ছবি। সাদায়-কালোয়। তার কোথাও কিশোরী মেয়ের মাথার ঝুড়িতে ইট তুলে দিচ্ছে বাবা। ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে করুণ চোখে তাকিয়ে মা। কোথাও আবার ড্রেনের বড় পাইপের মধ্যে শ্রমিকদের সংসার। পিছনে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে একের পর এক বহুতল। সেই সমস্ত বহুতলেই কাজ করেন শ্রমিকরা। কিন্তু প্রবল পরিশ্রমে যাঁরা এই বাড়ি গড়ে তোলেন, কাজ শেষের পর সেখানে আর প্রবেশের অধিকার থাকে না তাঁদের। সেই সব ইমারতের নেপথ্য শিল্পীদের সংগ্রামের কথাই এবার ফুটে উঠছে উল্টোডাঙা সংগ্রামীর মণ্ডপজুড়ে। শিল্পী সুরজিৎ রায়চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে টিন-বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে তাঁদের ঘর। সেই ঘরের মাতৃরূপে দেখা দেবেন দুর্গা।
আপামর সমাজেও দু’টি ভিন্ন জীবনযাত্রার ছবি আজ ভীষণভাবে স্পষ্ট। কোথাও উৎসবে, আনন্দে মাতোয়ারা মানুষ নির্দ্বিধায় খাবার নষ্ট করেন। অন্যদিকে একদল মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের আশায় চাতকের মতো বসে থাকেন। সেই ভাবনা থেকেই তেলেঙ্গাবাগানের প্রশ্ন—‘মানুষ বাঁচার জন্য খায়, নাকি খাওয়ার জন্য বাঁচে?’ মণ্ডপজুড়ে সেই প্রশ্নই ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী পরিমল পাল। ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে বিশাল এক থালা। তার উপরে রাখা উনুনে ঝলসে যাচ্ছে রুটি। এ এক গদ্যময় পৃথিবী। যার অন্য পাশে ঝাঁ চকচকে রেস্তরাঁ। যেখানে চলছে খাবারের দেদার অপচয়। এসব ছাড়িয়ে এগলেই দেখা মিলবে মা অন্নপূর্ণারূপী দুর্গার। জগতের আহার-অনাহারের টানা-পোড়েন মেটাতে ভরসা যে তিনিই।
কালের নিয়মে এগিয়ে চলেছি আমরা। চোখের সামনে বদলে যাচ্ছে একের পর এক দৃশ্যপট। নতুনকে সাদরে গ্রহণ করতে গিয়ে আমরা হারিয়ে ফেলছি চেনা ছন্দ। মাটির গন্ধ। প্রকৃতির হাতছানি। অনন্ত আকাশ এখন একফালি আকাশ হয়ে ধরা দেয় আমাদের কাছে। একদিকে নগরীর পুননির্মাণ, অন্যদিকে স্মৃতিঘেরা বাসভূমিকে প্রাণপনে আগলে রাখার প্রবল বাসনা। চিন্তা বাড়ছে বাসভূমির অনিশ্চয়তা, অন্নের যোগান নিয়ে। এই ভীষণ আঁধারে মানুষের কাছে মা অন্নপূর্ণা আসছেন আশার আলোরূপে। এই ভাবনা থেকেই এবারে উল্টোডাঙা করবাগানের সৃষ্টি—‘ভবপ্রীতা’।
পুজোর ভাবনায় চেনা ছকের কিছুটা বাইরে হেঁটেছে উল্টোডাঙা যুবকবৃন্দ। এবারে তাদের ভাবনাজুড়ে ‘মানসকন্যা।’ আসলে শিবের মানসকন্যা মা মনসা। চাঁদ সওদাগর, বেহুলা লখিন্দরের কাহিনির পথ ধরে এই মণ্ডপে তা মেলে দেবী দুর্গার কাছে। উৎসবের আলোকছটায় মায়ের সঙ্গে মিশে যায় ‘মানসকন্যা’র কথা, যা জন্ম দেয় পুরাণের এক বিশেষ অধ্যায়ের। বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবের মাধ্যমে।