নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অগ্রাহ্য করে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ। এই লক্ষ্যে মোদি সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে বলে আশঙ্কা বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলির। এরইমধ্যে জানা গিয়েছে, দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী জেলাগুলির স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ নাগরিক পরিচয়পত্র প্রদান করতে চায় কেন্দ্র। সেন্সাসের কাজ সমাপ্ত হলেই জনসংখ্যার সাম্প্রতিক তথ্য পরিসংখ্যান কাজে লাগিয়ে ও ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) অনুযায়ী তৈরি হবে কার্ড। প্রাথমিক পরিকল্পনা এরকমই। 
এই ভাবনা নতুন নয়। ২০১৯ সালে প্রথমবার এই পরিকল্পনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বর্ডার ম্যা঩নেজমেন্ট বিভাগের প্রস্তাব হিসেবে উত্থাপিত হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, হঠাৎ আন্তর্জাতিক সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যাসার্ধ এলাকায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর প্রহরার ক্ষমতাধীন করা হয়েছে। যা নিয়ে বিভিন্ন বিরোধী রাজ্য আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু সেই প্রতিবাদে কর্ণপাত করা হয়নি। করোনাকালে ওই প্রস্তাব কিছুটা ধামাচাপা পড়ে যায়। প্রধান কারণ সেন্সাস না হওয়া। নয়া পরিকল্পনায় সিএএ পরবর্তী সেন্সাসের ডেটাকেই সবথেকে প্রামাণ্য হিসেবে ধরা হবে বলে স্থির হয়েছে। তবে সরকারি সূত্রের খবর, পরিচয়পত্র প্রদানে রাজ্যের কোনও ভূমিকা এড়িয়ে যাওয়া হবে। সরাসরি কেন্দ্রীয় দপ্তর তথা এজেন্সিকে দিয়েই  কার্ড প্রদান কর্মসূচি নেওয়া হবে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী থাকবে তদারকি ও চিহ্নিতকরণের দায়িত্বে। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে এই মর্মেই সতর্ক করে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। তিনি  বলেছিলেন যে, সীমান্তবাসীদের কার্ড প্রদানের একটি কৌশলের কথা শোনা যাচ্ছে। সিএএ ও এনপিআরের পাশাপাশি ঘুরপথে এনআরসির চক্রান্ত চলছে। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, এভাবে দেশের বিশেষ কিছু অংশের বাসিন্দাদের জন্য পৃথক পরিচয়পত্র দেওয়ার আইন নেই। সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষকে পৃথক ভারতবাসী হিসেবে বিবেচনা করে আদতে নাগরিকত্ব হারানোর ভয় দেখানোই এর লক্ষ্য। 
মুখ্যমন্ত্রীর ওই শঙ্কা মতোই ২০২৫ সালে সেন্সাসের আগেই সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে কার্ড বিতরণের পরিকল্পনা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় দেড় কোটি পরিচয়পত্র দেওয়া হবে বলে স্থির হয়েছে। পাইলট প্রকল্প নেওয়া হবে সেন্সাসের আগে এনপিআর শুরুর পর। বাংলাদেশ, মায়ানমার, পাকিস্তান, চীন, নেপাল,ভূটানের সঙ্গে ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থাকলেও সবথেকে বেশি জোর দেওয়া হবে বাংলাদেশ সীমান্তে। কারণ প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত সীমান্ত অন্য কোনও দেশের সঙ্গে নেই। সবথেকে বেশি অনুপ্রবেশকারীও ওই দেশ থেকেই এসেছে। তাই বাংলা, অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দাদের তথ্য পরিসংখ্যানে জোর দেওয়া হচ্ছে।