বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: আগামী মাস থেকে পণ্য ও পরিষেবার উপর জিএসটির হারে বড়সড় রদবদল হতে চলেছে। যেসব পণ্য ও পরিষেবার উপর ১২ শতাংশ কর ধার্য রয়েছে, সেগুলির অধিকাংশকেই ওই ‘স্ল্যাব’-এর বাইরে আনা হবে। কোনও ক্ষেত্রে জিএসটির হার কমে হবে ৫ শতাংশ, কিছু পণ্য ও পরিষেবার উপর জিএসটি বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করা হবে। সূত্রের খবর, আগামী ২ ডিসেম্বর মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। ২১ ডিসেম্বর জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ার কথা। কলকাতায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্প্রতি এক বৈঠকে কেন্দ্রীয় জিএসটি বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্তারা হাজির ছিলেন। সেখানে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ১২ শতাংশ জিএসটি বিভিন্ন পণ্যের বিপণনে সমস্যা তৈরি করছে। তখন শীর্ষকর্তারা তাঁদের জানান, ১২ শতাংশ জিএসটির ‘স্ল্যাব’ থেকে সিংহভাগ পণ্য ও পরিষেবা সরিয়ে নেওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আগামী মাসেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
বর্তমানে জিএসটির মূল চারটি ‘স্ল্যাব’ হল ৫, ১২, ১৮ এবং ২৮ শতাংশ। এর সঙ্গে আছে সোনার উপর ৩ শতাংশ জিএসটি। ১২ শতাংশ জিএসটি ‘স্ল্যাব’ থেকে পণ্য ও পরিষেবা সরিয়ে আনা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ছ’টি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে একটি কমিটিও গড়া হয়েছে। এর মাথায় রয়েছেন বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী। কমিটিতে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি জানান, জিএসটির হার সংক্রান্ত আলোচনা হতে পারে ২ ডিসেম্বর। যদিও সরকারিভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি। সাধারণ মানুষের উপর যাতে কোনওভাবে বাড়তি চাপ না পড়ে, তা মাথায় রেখেই ওই বৈঠকে কর-কাঠামো বদলের প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে সরকারেরও রাজস্ব বাড়ানোর দরকার আছে। দেখা গিয়েছে, ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বা ভ্যাট জমানায় ১৮ শতাংশের বেশি কর ছিল, এমন অনেক পণ্য এখন ১৮ শতাংশের ‘স্ল্যাবে’ রয়েছে। সেই সব ক্ষেত্রে জিএসটি হার বাড়ানো হতে পারে। অর্থমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে জিএসটির হার চূড়ান্ত হবে না। তার জন্য ২১ ডিসেম্বর রাজস্থানে জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সূত্রের খবর, খাতা, পেন, পেনসিলের মতো লেখাপড়ার সরঞ্জাম, স্টেশনারি পণ্য, ঘি, প্যাকেটজাত ফল ইত্যাদির উপর জিএসটি ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। রান্না করা খাবার, বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য, চিনি মিশ্রিত প্যাকেটজাত খাবার, দুগ্ধজাত এবং প্যাকেটজাত পানীয়র ক্ষেত্রে বাড়তে পারে জিএসটির হার। প্রসাধনী, হেয়ার ড্রায়ার বা সেলুনে ব্যবহারের যন্ত্রপাতির জিএসটি বাড়তে পারে আগামী মাস থেকে। এদিকে, জিএসটি চালু হওয়ার পর রাজ্যগুলি রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি মেটাতে চালু হয় ‘কমপেনসেশন সেস’। এই সেস বাবদ আদায় হওয়া টাকা কীভাবে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে ভাগ হবে, তা নিয়েও ডিসেম্বরের গোড়ায় বৈঠক হবে বলে জানা গিয়েছে।