সংবাদদাতা, রামপুরহাট: গোরু পাচার নিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত চলছে। কিন্তু তারপরও ঝাড়খণ্ড হয়ে এরাজ্যে নানা কৌশলে গোরু পাচার অব্যাহত রয়েছে। পুলিসি অভিযান, ধরপাকড়ের পরও মরিয়া পাচারকারীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে পিকআপ ভ্যানে ত্রিপল ঢাকা দিয়ে গোরু পাচার চলছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রামপুরহাটের বাইপাস রোডে জাতীয় সড়কে ওঠার মুখে গাড়িটি আটক করে পুলিস। ১৮টি গোরু উদ্ধার হয়। যদিও পুলিস গাড়ি দাঁড় করাতেই চালক নেমে চম্পট দেওয়ায় তাকে ধরতে পারা যায়নি। পুলিস জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ড থেকে গোরু বোঝাই করে ত্রিপল ঢাকা নিয়ে সীমানা পেরিয়ে রামপুরহাটের উপর দিয়ে যাচ্ছিল পিকআপ ভ্যানটি। বাইরে থেকে দেখে গোরু রয়েছে বলে বোঝা যায়নি। নির্দিষ্ট খবর থাকায় গাড়িটি আটক করে গোরুগুলি উদ্ধার করা হয়েছে। আটক গাড়িটি বিহারের রেজিস্ট্রেশন। পাচারকারীদের ধরতে তদন্তে নেমেছে পুলিস। আগে ঝাড়খণ্ড থেকে লরিতে চাপিয়ে বা শতাধিক গোরু একসঙ্গে হাঁটিয়ে সীমানা পেরিয়ে এরাজ্যের রাস্তা ব্যবহার করে কাঁটাতার পেরিয়ে পাচার হতো বাংলাদেশে। কিন্তু গোরু পাচার নিয়ে জেলায় সিবিআইয়ের তৎপরতা বাড়তেই সক্রিয় হয়েছে পুলিস। ধরা পড়ছে গোরু বোঝাই লরি ও গোরুর পাল। গ্রেপ্তারও করা হয়েছে বেশ কয়েকজন পাচারকারীকে। 
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপুরহাট লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের সারেষডাঙা গ্রামে প্রতি সোমবার গোরুর হাট বসে। সেখানে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা থেকে গোরু এনে রাখা হচ্ছে। পরে রাতের অন্ধকারে ঝাড়খণ্ডের দেবদোহা, চন্দনগড়িয়া, ঝাঁসাপাথর হয়ে রামপুরহাটের নারায়ণপুর, ঠাকুরপুরা, নলহাটির বৈধরা, মুরারইয়ের রাজগ্রাম, মল্লারপুরের হস্তিকাঁন্দা, মুলুটি সীমানা দিয়ে এরাজ্যে আনা হচ্ছে গোরুগুলি। কখনও পিকআপ ভ্যান, মোটরভ্যান, কখনও হাঁটিয়ে মল্লারপুর ও রামপুরহাটের উপর দিয়ে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার সরাসরি মাড়গ্রাম হয়ে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় পশুহাটে এনে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে ভুয়ো চালানের মাধ্যমে পিকআপ ভ্যানে গোরুগুলি গাদাগাদি করে বেঁধে, কখনও আবার হাঁটিয়ে এক হাট থেকে অন্যহাট হয়ে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার রামপুরহাটে এই কারবারের রমরমা বাড়ে। ওইদিন এখানে গোরুর হাট বসে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতি বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই বিশেষ কিছু গ্রামের রাস্তা কার্যত গোরু-মোষ পাচারকারীদের দখলে চলে যায়। মূলত শীতকাল গোরু পাচারকারীদের ‘লক্ষ্মী মাস’। কুয়াশা ও হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডার সুযোগ নিয়ে এই সময় পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। 
পুলিসের মতে, গোরু পাচার রোখার পথে সবচেয়ে বড় বাধা সীমানা লাগোয়া সারেষডাঙা পশুহাট। রামপুরহাট থেকে আট কিলোমিটারের মধ্যে ওই হাট রয়েছে। সীমানা লাগোয়া বিভিন্ন গ্রামের পথ ধরে গোরুগুলিকে ঝাড়খণ্ড থেকে এরাজ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে। নির্দিষ্ট কয়েকটি রুটও বানিয়ে ফেলেছে তারা।