সংবাদদাতা, লালবাগ: বৃহস্পতিবার সকালে ঘন কুয়াশার দাপটে ভাগীরথীর বিভিন্ন ঘাটে প্রায় চার ঘণ্টা বন্ধ থাকল ফেরি পারাপার। ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হলেন নিত্যযাত্রী থেকে সর্বস্তরের মানুষ। ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর অনেকেই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যান। এদিকে দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসায় রাস্তাঘাটে যানবাহন ও লোকজনের সংখ্যাও ছিল হাতেগোনা। ভাগীরথী দুই পাড়ে পূর্ব রেলের লালগোলা-শিয়ালদহ এবং আজিমগঞ্জ-হাওড়া শাখায় বেশ কিছু ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ের থেকে ২০-৩০ মিনিট দেরিতে চলে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। কুয়াশার জন্য দোকানপাট দেরিতে খোলে। সব্জি ও মাছের বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় অনেকটাই কম ছিল। সকাল ১০টার পর কুয়াশা সরে গিয়ে হালকা রোদের দেখা মিলতেই জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করে। মুর্শিদাবাদ জেলার বুক চিরে চলে গিয়েছে ভাগীরথী নদী। ফরাক্কা, জঙ্গিপুর, জিয়াগঞ্জ, লালবাগ, বহরমপুরে ভাগীরথীর দুই পাড়ের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফেরি পরিষেবার গুরুত্ব অপরিসীম। ঘাটগুলিতে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মানুষ গমগম করে। জিয়াগঞ্জ ও লালবাগে ভাগীরথীর দুই পাড়ের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ফেরি পরিষেবা। জিয়াগঞ্জ ও লালবাগ শহরের ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে লালগোলা-শিয়ালদহ এবং পশ্চিম পাড়ে আজিমগঞ্জ-হাওড়া শাখা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই দুই পাড়ের ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতাযাত করে থাকেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঘন কুয়াশার দাপট শুরু হয়। এক ফুট দূরের কিছু দেখা যাচ্ছিল না। বিশেষ করে নদীর কুয়াশার ঘনত্ব অনেকটাই বেশি ছিল। ফলে ওই পরিস্থিতিতে নদী পারাপারের সময় দিকভ্রষ্ট হয়ে বিপদের আশঙ্কায় ঘাট কর্তৃপক্ষ ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখে। পরে পুলিসের উপস্থিতিতে ফেরি পরিষেবা চালু হয়। নবগ্রামের বাসিন্দা ইকবাল শেখ বলেন, লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে এক আত্মীয় ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে দেখতে এসে দুই ঘণ্টা ইচ্ছাগঞ্জ ফেরিঘাটে আটকে ছিলাম। সকাল ১০টার পর ফেরি পরিষেবা চালু হওয়ায় হাসপাতালে যাই। বহরমপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আজিমগঞ্জের মিন্টু দত্ত। তিনি বলেন, ১০টার পর ফেরি পরিষেবা চালু হয়। তখন ওপারে গিয়ে ট্রেন পেতাম না। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছি। আজিমগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন পড়ুয়া জিয়াগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করতে আসে। ফেরি বন্ধ থাকায় তারা বাড়ি ফিরে যায়। 
কুয়াশার কারণে জেলাজুড়ে গণ পরিবহণও ব্যাহত হয়। বহরমপুর-সাইথিয়া রুটের বেসরকারি বাসের এক চালক বলেন, খুব প্রয়োজন না থাকলে মানুষ বেরননি। তাই এদিন যাত্রী সংখ্যা বেশ কম ছিল। বাস চালিয়ে তেলের খরচ উঠবে না। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ বোটম্যান সংগঠনের সদস্য অজিত বিশ্বাস বলেন, ভোরের দিকে কুয়াশার দাপট ছিল না। তাই ৬টার আগে পর্যন্ত ফেরি পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তারপর থেকেই চারিদিক ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায়। এক হাত দূরের কিছু দেখা যাচ্ছিল না। কাজেই কোনওপ্রকার ঝুঁকি না নিয়ে ফেরি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। -নিজস্ব চিত্র