দক্ষিণবঙ্গ

রাজ-মহিমার কিংবদন্তীতে কাজলাগড়, পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায় প্রশাসন

সৌমিত্র দাস, কাঁথি : পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পর্যটন মানচিত্রে নতুন পালক হিসেবে স্থান পেতে চলেছে কাজলাগড়। জেলার রাজ-ঐতিহ্যের গৌরব গাঁথা বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে এই উদ্যোগ নিয়েছে জেলা ও ব্লক প্রশাসন। ইতিমধ্যেই কাজলাগড়ের ভগ্ন ও জরাজীর্ণ রাজবাটিকে রক্ষা করতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সুরক্ষিত করা হচ্ছে রাজ-পুষ্করিণী, রাজ-পরিখা, রাজ-দেউল সহ ভগ্নস্তূপে পরিণত হওয়া রাজপরিবারের অন্দর মহলকে। তুলে ধরা হয়েছে ইতিহাসের পাতায় কাজলাগড়ের গুরুত্বকে। আবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলা সাহিত্যে রাজবাড়ির অবদানকেও। প্রখ্যাত নাট্যকার তথা কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় টানা প্রায় তিন বছর রাজ এস্টেটের সেটেলমেন্ট অফিসার ছিলেন। ওই সময় তিনি কাজলাগড়ে বসে বহু কবিতা ও নাটক লিখে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গিয়ে গিয়েছেন। সবমিলিয়ে, ইতিহাস প্রসিদ্ধ কাজলাগড়কে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছেন ভগবানপুর-১ ব্লকের বিডিও বিকাশ নস্কর ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা অরূপসুন্দর পণ্ডা। ব্লক প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ব্লকের ইতিহাস ও সাহিত্যপ্রেমী মানুষ। সেই সঙ্গে হেরিটেজ সাইটের আওতায় এনে সংরক্ষণের দাবিও তুলেছেন তাঁরা। 
ইতিহাস খুঁড়তে গিয়ে জানা যায়, ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে মেদিনীপুর ছোট ছোট রাজ্যে ভাগ করে শাসন করা হতো। ওইসব ছোট রাজ্যগুলির মধ্যে একটি ছিল সুজামুঠ্যা। তার ‘রাজধানী’ ছিল কাজলাগড়। এই নামের পিছনেও রয়েছে কিংবদন্তী। প্রায় পাঁচশো বছর আগে জায়গাটি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। হিংস্র পশুদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। রণঝাঁপ নামে তখন একটা গোষ্ঠী যাযাবরের ন্যায় জঙ্গলে জঙ্গলে ঘোরাফেরা করত। পশু শিকার করে বেড়াত। তারা ঘুরতে ঘুরতে এই এলাকায় এসে পড়ে। জঙ্গল সাফ করে বসবাস করতে থাকেন। একদিন গোষ্ঠীর অধিপতি শিকারের সময় দৈব স্বপ্নাদেশ পান। তাঁকে বলা হয় কাজলা কালীমাতার পুজো করতে। তিনি পুজোও শুরু করেছিলেন বলে কথিত। সেই থেকে জায়গাটির নাম হয় কাজলা। পরে কাজলা গড়। 
‘গড়’ গড়ে ওঠার পিছনে ইতিহাসটা এরকম—সুজামুঠ্যা বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গোবর্ধন রণঝাঁপ। তাঁর পরবর্তী বংশধর মহেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে বংশের স্বর্ণযুগ সূচিত হয়। সময়টা আনুমানিক ১৭৬৯ সাল। বর্তমানে যে জরাজীর্ণ রাজবাড়িটি পড়ে রয়েছে সেটি গড়ে তুলেছিলেন মহেন্দ্র নারায়াণ। গোপাল জিউ ও নবরত্ন মন্দিরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। পরে রাজা দেবেন্দ্র নারায়ণ প্রজাদের তৃষ্ণা মেটাতে বিশাল পুকুর খনন করেন। সেটি কাজলা দিঘি নামে এখনও দ্রষ্টব্য। আনুমানিক ১৮৬০ সাল নাগাদ সুজামুঠ্যার সাম্রাজ্য নিলামে ওঠে। সেটা কিনে নেন বর্ধমানের মহারাণী নায়ারণ কুমারী। তার পর থেকে কাজলাগড় বর্ধমান রাজবাড়ির কাছাড়ি বাড়ি হিসেবে ইতিহাসে পরিচিতি লাভ করে। 
কাজলা দিঘির পাড়েই ছিল ব্রিটিশ সরকারের সাব রেজিস্ট্রার অফিস। ১৮৯০ সালে এখানে কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বর্ধমান রাজার কোর্ট অফ ওয়ার্ডস স্টেটের সুজামুঠ্যা পরগনার জরিপ বিভাগের সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নেন। প্রায় তিন বছর স্ত্রী সুরবালাদেবীকে নিয়ে কাজলাগড়ে কাটিয়েছিলেন কবি। ১৯৪২ সালে আগষ্ট আন্দোলনের সময় স্বদেশী বিপ্লবীরা সেই অফিসটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। 
জানা যায়, ১৯৫৬ সালে জমিদারি অধিকার আইনের বিলুপ্তি ঘটায় সরকার। তার আগে পর্যন্ত এই রাজবাড়িতে রাজপরিবারের সদস্যরা থাকতেন। তার পর থেকে রাজবাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে থাকে। বর্তমানে রাজবাড়ি প্রাঙ্গণেই ব্লক প্রশাসনের অফিস। প্রতিবছর সেখানে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। বিডিও বিকাশ নস্কর বলছিলেন, ‘রাজবাড়িটিকে যাতে সংরক্ষণ করা যায়, সেব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।  আগামীদিনে দিঘিতে বোটিং চালু করা, পার্ক তৈরি সহ অন্যান্য পরিকল্পনা রয়েছে।’ অরূপবাবু বলেছেন, ‘প্রাচীন এই রাজবাড়িটি ভগবানপুরের একটি ঐতিহ্য। বাঁচিয়ে রাখতে প্রশাসন সদর্থক ভূমিকা নেবে।’ স্থানীয় বাসিন্দা তথা বাজকুল মণীষী চর্চাকেন্দ্রের সম্পাদক অশোককুমার বর্মন বলেন, ‘ইতিহাসে কাজলাগড়ের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’ - নিজস্ব চিত্র
25d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মসূত্রে বিদেশ যাত্রার প্রচেষ্টায় সফল হবেন। আয় খারাপ হবে না। বিদ্যা ও দাম্পত্য ক্ষেত্র শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.৮৮ টাকা৮৫.৬২ টাকা
পাউন্ড১০৫.৩৯ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৭.২৫ টাকা৯০.৬০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     December,   2024
দিন পঞ্জিকা