যারা বিদ্যার্থী তাদের মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। নানা বিষয়ে খুঁতখুঁতে ভাব জাগবে। গোপন প্রেম থাকলে ... বিশদ
ইতিহাস প্রসিদ্ধ মুঘল সম্রাট সাজাহানপুত্র ঔরঙ্গজেবের দুর্নীতি ও রাজ্যলাভের কাহিনী নিয়েই লেখা এই নাটক। পিতাপুত্রের অমানবিক আচরণ, দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে রচিত গল্পের ঐতিহাসিক নাটক বহুবার মঞ্চস্থ হয়েছে।
সম্প্রতি ফের এই নাটকটি থেসপিয়ানস নাট্যগোষ্ঠী মঞ্চস্থ করল স্টার থিয়েটারে। অমিতব্যয়ী শৌখিন বৃদ্ধ সম্রাট সাজাহানকে রাজপ্রাসাদে বন্দি করে দারা, সুজা ও মুরাদকে ঠকিয়ে সিংহাসন দখল করে ঔরঙ্গজেব। অসুস্থ সম্রাট সাজাহান আগ্রার দুর্গে বন্দি। তিনি দারার কাছ থেকে জানতে পারেন তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে চাইছে সুজা ও মুরাদ। প্রসঙ্গত, সাজাহানের চার ছেলে দারা, সুজা, মুরাদ ও ঔরঙ্গজেব। দাক্ষিণাত্য থেকে ঔরঙ্গজেব আসেন কৌশলে মুরাদকে সাহায্য করার জন্য। দারা বিদ্রোহকে বশীভূত করতে চায়। কিন্তু বিদ্রোহী পুত্রকে সাজাহান ক্ষমা করতে চান। সাজাহানের জ্যেষ্ঠা কন্যা জাহানারা বিদ্রোহ না করে শান্ত থাকতে পরামর্শ দেন এবং দৃঢ় পদক্ষেপ করার জন্য সম্রাটকে অনুপ্রাণিত করেন। শেষে সাজাহান বিদ্রোহকে দমন করার নির্দেশ দেন দারাকে। আগ্রার দুর্গে যখন সাজাহান ঔরঙ্গজেবের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তখন ঔরঙ্গজেবের পুত্র মোহম্মদ তাদের কাছে এসে পৌঁছলেন এবং জানালেন যে, দুর্গের কারাগারে বন্দি সাজাহান। তার প্রতি সহানুভূতিশীল শুধু জাহানারা। একাকী নিঃসঙ্গ সাজাহান দুর্গের মধ্যে খুব দুঃখে দিন কাটাচ্ছেন। মরুভূমিতে ভরা রাজস্থানে তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্থ দারা নিজেকে হত্যা করার কথা ভাবছে। সুজা মুঙ্গের দুর্গে অস্থির। যশোবন্ত সিং সাহায্য করতে অস্বীকার করেছেন। সুজা ও সাজাহানের জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় ঔরঙ্গজেবের সিংহাসন দখলে সৈন্যরা প্রশ্নবিহীন লড়াইয়ে সঙ্গ দিতে রাজি নয়। ঔরঙ্গজেব বিশ্বাস করেন যে, তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছায় সিংহাসনে আরোহণ করেছেন। ঔরঙ্গজেব দারার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন এবং জীহান খানকে কার্যকর করার নির্দেশ দেন। সাজাহানের মনের অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, তিনি প্রায় উন্মাদ হয়ে যান। অবশেষে ঔরঙ্গজেব বিবেকের তাড়নায় মাথা নত করে সাজাহানের কাছে তার পাপ স্বীকার করে ক্ষমা চায় এবং জাহানারাকেও অনুরোধ করেন ক্ষমা করার জন্য। সাজাহান তাকে ক্ষমা করে দেন। জাহানারা তার অসুস্থ ও বৃদ্ধ পিতার অনুরোধ মেনে চলেন ঠিকই, তবে তার বাবার হত্যাকারী ঔরঙ্গজেবকে অভিশাপ দিলেন।
মানুষের স্বাধীনতা, ভালোবাসা ও মর্যাদা বজায় থাকার ওপরেই নির্ভর করে একটি জাতির উন্নতি ও অগ্রগতি সেটাই প্রমাণ করে এই নাটক। বহু অভিনীত ও বহুল প্রশংসিত। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে কথাটি যে সত্য তা বোঝা যায় নাটক দেখে। বিষয়ের গভীরতা তুলে ধরতে এই ধরনের নাটকের সাজসজ্জা, শব্দ একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেদিক থেকেও এই প্রযোজনা সফল। অভিনয়ে প্রত্যেকেই সহজ, সাবলীলতার পরিচয় দিয়েছেন। ঔরঙ্গজেব, সাজাহানের ভূমিকায় যথাক্রমে পার্থ মুখোপাধ্যায় এবং শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায় দুজনেই তাঁদের চরিত্রের মধ্যেকার আবেগ, দ্বন্দ্ব, নিষ্ঠুরতা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। শায়েস্তা খাঁর চরিত্রে আশিসকুমার মজুমদার, জাহানারার ভূমিকায় আইভি বন্দ্যোপাধ্যায়, পিয়ারার চরিত্রে শ্রাবণী ঘোষ এবং নাদিরার চরিত্রে মনীষা টিকাদার যথাযথ। অন্যান্যদের মধ্যে তাপস সরকার, বিশ্বরূপ পুরকায়স্থ, অভিজিৎ সিনহা, শুভজিৎ চৌধুরি, তন্ময় বন্দ্যোপাধায়, বিজয়েশ, তাপসরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, উজ্জ্বল চক্রবর্তী, দেশবন্ধু মণ্ডল, দেবাদিত্য মুখোপাধ্যায়, ঐশানী দে, তনুশ্রী গোস্বামী, অঞ্জনা দে মুখোপাধ্যায় তাঁদের দায়িত্ব সুনিপুণভাবে পালন করেছেন। পার্থ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ও দুলাল ধরের সাজসজ্জা নাটকটির বাস্তব রূপ তুলে ধরতে সাহায্য করে।
কলি ঘোষ