বৃহস্পতিবার, 17 জুলাই 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

ঠিকমতো ঘুম না হলে কী কী রোগ হতে পারে?

পরামর্শে বি পি পোদ্দার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ফিজিশিয়ান ডাঃ অভিজিৎ আইচ ভৌমিক এবং পিজি হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’র সহকারী অধ্যাপক ডাঃ ময়ঙ্ক কুমার। 

ঠিকমতো ঘুম না হলে  কী কী রোগ হতে পারে?

পরামর্শে বি পি পোদ্দার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ফিজিশিয়ান ডাঃ অভিজিৎ আইচ ভৌমিক এবং পিজি হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’র সহকারী অধ্যাপক ডাঃ ময়ঙ্ক কুমার। 

কথায় আছে - সুস্থ শরীর গড়ে তোলে সুস্থ একটি মন। আর শরীর ও মন সুস্থ রাখতে গেলে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভালো ঘুম। কিন্তু ভালো ঘুম বা পর্যাপ্ত ঘুম বলতে ঠিক কী বোঝায় ? কেন হচ্ছে না ঠিকমতো ঘুম? এতে শরীরের কী কী সমস্যা হতে পারে? মানসিক স্বাস্থ্যও কি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ? আসুন জেনে নেওয়া যাক কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভালো ঘুম বলতে কী বোঝায়?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা মহিলার দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমনো দরকার। কাটছাঁট করে ন্যূনতম সাড়ে ছয় ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে। এর থেকে কম হলেই সমস্যা।
কেন ঘুম হচ্ছে না? 
সবথেকে বড় কারণ বর্তমানের লাইফস্টাইল অর্থাৎ জীবনযাপনের ধরন। ঠিকসময়ে খাওয়া দাওয়া না করা, বেশি রাতে কাজ থেকে বাড়ি ফেরা, ভোর রাতে ঘুমোতে যাওয়া, দেরি করে ওঠা, ফোনের স্ক্রিনে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা, দুপুরে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমোনো এগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকর। একইসঙ্গে কর্মক্ষেত্রে লাগাতার নাইট শিফ্ট, অতিরিক্ত চাপ, চিন্তা, অবসাদও ঘুম না হওয়ার বড় কারণ। অনেকের আবার হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টের সমস্যা বা একাধিক অসুখ থাকে। এগুলিও পর্যাপ্ত ঘুমে বাধা দেয়। এক্ষেত্রে ওএসএ অর্থাৎ অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন অতিরিক্ত নাক ডাকার অভ্যাস। হঠাৎ শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। ঘুম থেকে ধড়পড় করে উঠে পড়তে হয়। আর এতে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। এছাড়াও রাতে অতিরিক্ত মদ্যপান, ক্যাফেইন জাতীয় জিনিস পান, ধূমপান ঘুম কমিয়ে দেয়। বেডরুমে লাউড মিউজিক, ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি চললেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
কী কী সমস্যা হতে পারে? 
মানসিক সমস্যা : ঘুম না হলে মনসংযোগে সমস্যা হয়। অনেক বিষয় আমরা মনে রাখতে পারি না। ক্রমে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দেয়। এর জেরে কাজকর্মে একাধিক ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় এটি হল কগনিটিভ ডিস্টার্বেন্স। অনেকসময় অস্থিরভাব, অবসাদ হয়। অল্পেতেই বিরক্ত হয়ে পড়ি আমরা। অনেকের মধ্যে ভুলভাল কথা বলার প্রবণতা, মুড সুইং, বাইপোলার ডিসঅর্ডার দেখা যায়। 
শারীরিক সমস্যা : ঘুমের অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার,হজমের সমস্যার পাশাপাশি স্থূলতা বৃদ্ধি পায়। চোখের তলায় কালি পড়ে। ত্বকের নানা সমস্যা হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্রে প্রভাব পড়ে। এমনকী কোনও রোগ থেকে সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
নিরাময়ের উপায়
রাতে ঠিকসময়ে অর্থাৎ ৮-৯ টার মধ্যে ডিনার করতে হবে। পরে খুব খিদে পেলে হাল্কা কিছু খেতে হবে। যা সহজে হজম হয়। খাওয়ার পর তড়িঘড়ি ঘুমিয়ে পড়লে চলবে না। একটু বসা যেতে পারে কিংবা পায়চারি করা যেতে পারে। তিনটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে- সঠিক সময়ে সঠিক খাওয়াদাওয়া, যথাযথ লাইফস্টাইল আর ঠিকঠাক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা। যেখানে সুষ্ঠুভাবে ঘুমোনো যায়। দিনে একটি নির্দিষ্ট সময় জিমে যাওয়া যেতে পারে। দৈহিক পরিশ্রম হলে রাতে ঘুম ভালো হয়। ঘুমোনোর নির্দিষ্ট একটি সময় মেনে চলতে হবে।
রাতে যাদের ঘুম হচ্ছে না, তাদের দুপুরে একেবারেই ঘুমোনো ঠিক নয়। কিছু ক্ষেত্রে দুপুরে পাওয়ার ন্যাপিং নেওয়া যেতে পারে। ওষুধ খেতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে তা মেনে চলতে হবে। এছাড়াও অল্পবিস্তর মেডিটেশন, যোগ ব্যায়াম, ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।

লিখেছেন শোভন চন্দ

রাশিফল