শুক্রবার, 20 জুন 2025
Logo
  • শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

এন্টালিতে আড়াই কোটির ডাকাতি কাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড এসটিএফ কনস্টেবল গ্রেপ্তার

কথায় বলে, রক্ষকই ভক্ষক। কিন্তু এ যে শুধু কথার কথা নয়, এন্টালিতে আড়াই কোটি টাকা ডাকাতির তদন্তে তা আরও একবার প্রমাণিত হল। 

এন্টালিতে আড়াই কোটির ডাকাতি কাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড এসটিএফ কনস্টেবল গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কথায় বলে, রক্ষকই ভক্ষক। কিন্তু এ যে শুধু কথার কথা নয়, এন্টালিতে আড়াই কোটি টাকা ডাকাতির তদন্তে তা আরও একবার প্রমাণিত হল। কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগ মঙ্গলবার রাতে মিন্টু সরকার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ, ডাকাতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন—সবটাই তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। কিন্তু ধৃত ব্যক্তি পুলিসের খাতায় নাম থাকা কোনও দাগী দুষ্কৃতী নন! তিনি কলকাতা পুলিসের এসটিএফের কনস্টেবল! ধৃতের কাছ থেকে দু’টি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
গত ৫ মে এন্টালির ফিলিপস মোড়ের কাছে দিনেদুপুরে দুই দুষ্কৃতী ট্যাক্সিতে উঠে বন্দুক ঠেকিয়ে ২ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা লুট করে। একটি বিদেশি মুদ্রা লেনদেন সংস্থার (ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি) দুই কর্মী এই টাকা পার্ক সার্কাস এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই সংস্থার এক কর্মী সহ ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঋজু নামে সংস্থার এক কর্মী জানান, কত টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কারা নিয়ে যাচ্ছে এবং তাঁদের মোবাইল নম্বর তিনি দিয়েছিলেন এক পরিচিতকে। এখান থেকেই তদন্ত নতুন মোড় নেয়। তাঁর মোবাইলের কল রেকর্ড থেকে জানা যায়, ডাকাতির আগে ও পরে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে ঘনঘন ফোন গিয়েছে। নম্বরটি মিন্টু সরকারের। ইতিমধ্যে গোয়েন্দাদের হেফাজতে থাকা শাহনওয়াজের মোবাইল ঘেঁটে দেখা যায়, তার সঙ্গেও ঘটনার দিন একাধিকবার কথা হয়েছে মিন্টুর। তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, গোটা ঘটনায় ওই কনস্টেবলের ভূমিকা বেশ সন্দেহজনক। ছয় অভিযুক্ত ধরা পড়ার পর তিনি নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। অফিসও আসছিলেন না। এতে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। সেই সূত্রে মঙ্গলবার তাঁকে বাড়ি থেকে এনে রাতভর জেরা করা হয় লালবাজারে। তিনিই যে এই ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড, দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে ওই কনস্টেবল তা কার্যত স্বীকার করে নেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তে জানা গিয়েছে, জঙ্গিদের বিভিন্ন নেটওয়ার্কে কীভাবে হাওলার মাধ্যমে অর্থের জোগান দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে খবরাখবর সংগ্রহের জন্য মিন্টুর ঘনিষ্ঠ দুই ‘সোর্স’ ছিল। তাদের মধ্যে একজন কোম্পানির কর্মী ঋজুর পরিচিত। মিন্টুর ‘সোর্স’ ঋজুকে জানিয়েছিল, তার কোম্পানিতে হাওলার কারবার চলে। তার পরিচিত এক পুলিসকর্মী আছে। তাকে দিয়ে টাকা বাজেয়াপ্ত করিয়ে দেওয়া হবে। সেই মতো ৯মে ঋজু মিন্টুর ‘সোর্স’-কে জানিয়ে দেন, কোম্পানি থেকে নগদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ব্যাঙ্কে। যাঁরা টাকা নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের মোবাইল নম্বর দিয়ে দেন তিনি। মিন্টুকে সমস্ত তথ্য পাঠিয়ে দেয় তাঁর ‘সোর্স’। এরপর মিন্টু টাকা নিয়ে যাওয়া কর্মীদের ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে রুট জেনে নেন। শাহনওয়াজকে তার ‘টিম’ নিয়ে ফিলিপস মোড়ে চলে যেতে বলেন। সেইমতো হয়ে যায় ‘সফল’ অপারেশন। মিন্টুর কাছে দেড় কোটি পৌঁছে দিয়ে বাকি টাকা তারা নিজেদের কাছে রাখে। তদন্তকারীরা আরও জেনেছেন, তিনজন ধরা পড়ার পর বাকিরা ভিন রাজ্যে পালায়। গোয়েন্দাদের টিম কোনও রাজ্যে গেলে পলাতকদের ফোন করে মিন্টুই পালিয়ে যেতে বলেন। এই কনস্টেবলই মাস চারেক আগে পার্ক স্ট্রিট এলাকায় পুলিস পরিচয় দিয়ে দু’জনের কাছ থেকে হাওলার টাকা লুট করেন বলে অভিযোগ। কোনও ‘কেস রেফারেন্স’ ছাড়াই তিনি কীভাবে সংস্থার দুই কর্মীর ফোনের টাওয়ার লোকেশন ‘ট্র্যাক’ করলেন, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।