সম্পাদকীয়

‘রাজার’ তন্ত্র!

দু’বছর আগে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালনের ডাক দিয়েছিল মোদি সরকার। এবার সংবিধান গৃহীত হওয়ার ৭৫ বছর উপলক্ষে বছর ব্যাপী উদযাপনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে যে কোনও ভারতবাসীর কাছে স্মরণীয় এই দুটি দিনই। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতীয় সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। তা কার্যকর হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি। তথ্যের খাতিরে বলে নেওয়া যাক, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় সংবিধানের মূল কপিটি ছিল হাতে লেখা। মূল সংবিধানে ২২টি ভাগে ৩৯৫টি অনুচ্ছেদ ছিল। গত সাত দশকে একাধিক সংশোধনের পর এখন তাতে ২৫টি ভাগে ৪৪৮টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। সংবিধান তৈরি করতে সময় লেগেছিল দু’বছর ১১ মাস ১৮ দিন। সংবিধানের খসড়ায় গণ পরিষদের ১৫ জন মহিলাসহ ২৮৪ জন স্বাক্ষর করেছিলেন। গঠন করা হয়েছিল ১৩টি কমিটি। দেশের প্রথম আইনমন্ত্রী ভীমরাও আম্বেদকর ছিলেন সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান। গোটা দেশ তাঁকে ‘সংবিধানের জনক’ বলে চেনে। এই সংবিধানেই লিপিবদ্ধ রয়েছে দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও কর্তব্য, সরকারের ভূমিকা, রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীদের ক্ষমতার বিবরণ। বলা আছে, আইনসভা, বিচার বিভাগের কাজ, দেশ পরিচালনায় তাঁদের ভূমিকার কথা। অনেকের মতে, সংবিধানই ভারতের সবচেয়ে বড় ‘ধর্মগ্রন্থ’। এই সংবিধান বলেই ভারতে ‘সবাই রাজা’-র শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি।
এই ‘সবাই রাজা’ মানেতেই প্রজাতন্ত্র বা সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গূঢ় অর্থ ছিল। স্বাধীন দেশের সংবিধানের চোখে সকলের সমান অধিকার থাকবে, বলবৎ হবে সাধারণের তন্ত্র। উদ্দেশ্য ছিল সংবিধানের মধ্য দিয়েই ভারতীয় গণতন্ত্রের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। সাত দশক পরেও সেই মূর্তি বিরাজমান। কিন্তু প্রাণশক্তির কতটা অবশিষ্ট আছে সেই অনিবার্য প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে এখন। একথা ঠিক, সংবিধান মেনে দেশে নির্বাচন হচ্ছে, রাজনৈতিক দল বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ও জুমলা বিতরণ করছে। ভোটে জিতে একদল ক্ষমতায় বসছে, তারা দেশও শাসন করছে। কিন্তু ‘সাধারণের তন্ত্র’ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কই! সংবিধান অনুযায়ী, সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রধান শর্তই হল, শাসক জনগণের কথা শুনবে, বিরুদ্ধ মতকে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করবে। এই স্বীকৃতির উপরেই কিন্তু যথার্থ সাধারণতন্ত্র দাঁড়িয়ে আছে। যে শাসক এটা মানে না, সে সাধারণতন্ত্রের ধারক নয়, ঘাতক। ভারতের বর্তমান শাসকপক্ষ বিরোধী মত দূরের কথা, প্রশ্ন শুনতেও নারাজ। এই অবজ্ঞা প্রদর্শনে প্রধান পুরোহিতের নাম নরেন্দ্র মোদি। গত দশ বছরের শাসনকালে তাঁকে কোনও প্রশ্নোত্তরে সেভাবে দেখা যায়নি! বরং শাসকের চোখে বিরোধী স্বর মানেই রাষ্ট্রদ্রোহী, যার প্রাপ্য হুমকি, কারাবাস, এমনকী মৃত্যুও। একমাত্র বিনা প্রশ্নে একাধিপত্য স্বীকার করে নেবে—এমন ‘প্রজা’ চায় দেশের বর্তমান শাসকেরা। প্রকৃত গণতন্ত্র নয়, তার মোড়কে নির্ভেজাল সংখ্যাগুরুবাদই এই রাষ্ট্রনায়কদের ধর্ম। সাধারণকে দাবিয়ে রাখার অনুশীলনের মধ্যেই সাধারণতন্ত্র দিবসের ডাক দেওয়াটা আসলে আত্মপ্রবঞ্চনা।
বর্ষপূর্তি উদযাপনে আনন্দ নয়, দেশবাসীর কাছে মোদিবাহিনীর ক্ষমা চাওয়া উচিত। কারণ সংবিধান হাতে মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়ে দেশটাকে তারা ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে চায়। স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরও সংবিধান বর্ণিত নাগরিকের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের মৌলিক অধিকার চূড়ান্ত মাত্রায় অবহেলিত। বহির্বিশ্বের কাছে দারিদ্র্য-অশিক্ষা-বেকারত্ব এদেশের সবচেয়ে বড় পরিচয় হয়ে উঠেছে। দেশের সংবিধান প্রণেতারা আর্থিক অসাম্য দূর করে সামাজিক সাম্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর মোদি জমানায় অসাম্য অতীতের সব রেকর্ডকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এখানেই থেমে নেই শাসকদল। তারা মনেপ্রাণে চাইছে, সংবিধানটাই পাল্টে দিতে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা, সাধারণতন্ত্রের মতো যে শব্দগুলি বহু ভাষাভাষী এই দেশের মূল ভাবনাকে তুলে ধরেছে, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা তা সমূলে উৎপাটিত করতে চাইছে। স্বৈরাচারী শক্তির সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন আম্বেদকর। দেখা যাচ্ছে, তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। তাই স্বাধীনতার ৭৫ বছরের মতো সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপনও যে আসলে মোদি ‘সাধু’ সাজার চেষ্টা, তা বলাই বাহুল্য।
26d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে  উন্নতি ও সাফল্যের যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.২৮ টাকা৮৬.০২ টাকা
পাউন্ড১০৪.৮৬ টাকা১০৮.৫৭ টাকা
ইউরো৮৬.৮৬ টাকা৯০.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     December,   2024
দিন পঞ্জিকা