সম্পাদকীয়

অন্ধ হলে কি...

‘জাস্টিস ফর ইন্ডিজেনাশ পিপ্‌ল।’ দেড় বছর ধরে হিংসাদীর্ণ মণিপুরে এবার ন্যায়বিচারের দাবি উঠল। চলতি মাসেই অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুর, আইটিএলএফ-সহ কুকি-জো জনজাতিদের কয়েকটি সংগঠনের হাজার হাজার মানুষ কালো পোশাক ও কালো কাপড়ের মাস্কে মুখ ঢেকে এই ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্যে ‘জাস্টিসের’ দাবিতে পথে নেমেছিলেন। গত আগস্ট মাসে আর জি কর কাণ্ডের পরে এই স্লোগান শুনেছে বাংলা তথা গোটা দেশ। এবার উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রথমবার শোনা গেল ‘জাস্টিসে’র দাবি। প্রথমবার জাস্টিসের স্লোগান শোনার মতোই ভারতের মধ্যে মণিপুর প্রথম ড্রোন আক্রমণের সম্মুখীন হল! দেশে এতদিন কেউ, কোনও সামরিক সংস্থাও নিজের দেশের মধ্যে ড্রোন হামলা চালায়নি। কিন্তু ১ ও ২ সেপ্টেম্বর সেই বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল ইম্ফলের দুই গ্রাম। শুধু ড্রোন নয়, মণিপুরে এখন রকেট, হ্যান্ড গ্রেনেড, ডেটোনেটর, মর্টারও খেলনার মতো ব্যবহার করা হচ্ছে! সম্প্রতি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে রকেট ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। গত ১৬ নভেম্বর একদল উন্মত্ত জনতা রাজ্যের দুই মন্ত্রী ও তিন বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালানোর পর পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের একেবারে সামনে। পুলিস অবশ্য কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে জনতাকে কোনওক্রমে ছত্রভঙ্গ করে। 
এটাই আঠারো মাসের অশান্ত মণিপুরের সর্বশেষ ছবি। যেখানে হিংসার হাত থেকে একটা দিনও রেহাই পায়নি এই রাজ্য। আক্রমণ প্রতি-আক্রমণে প্রতিদিনই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে মণিপুর। মহিলা ও শিশুদের উপর আক্রমণ হচ্ছে বেশি। সরকারি হিসেবে, গত দেড় বছরে ২০০-র বেশি প্রাণ গিয়েছে, ঘরছাড়া ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনাস্থা জানিয়েছেন বিজেপি তথা এনডিএ-র বিধায়কদের অনেকে। মুখ্যমন্ত্রীর কোনও ডাকেই তাঁরা সাড়া দিচ্ছেন না। কেবল বিরোধী নয়, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ ও রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি উঠেছে শাসকদলের একাংশের পক্ষ থেকেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। রাজ্যের ছটি থানা এলাকায় সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘আফস্পা’ আইন ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন গোটা রাজ্যেই ‘আফস্পা’ ফিরিয়ে আনার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন শাসকগোষ্ঠীর কুকি-জো জনজাতির বিধায়করা। এই দাবিতেই স্পষ্ট হয় যে, প্রশাসনের প্রতি জনসাধারণের আস্থা-বিশ্বাস-ভরসা তলানিতে ঠেকেছে। কারণ, এক সময়ে যে ‘আফস্পা’ প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তাল হয়েছে মণিপুর, স্বাভাবিক জনজীবন ফেরাতে সেই কুখ্যাত ব্যবস্থাকেই আবার বরণ করে নিতে চাইছে সেখানকার মানুষ। ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ এই ছোট্ট রাজ্যটির মানুষ শান্তি চাইছেন, ‘জাস্টিসের’ দাবি করছেন। তাই প্রশ্ন উঠছে, এই কি তাহলে মোদি-শাহদের বহু কথিত ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের ‘সুশাসন?’ মাসের পর মাস মণিপুর জ্বললেও কেন তাঁরা নীরব? 
গত কয়েকসপ্তাহ ধরে মণিপুর ফের অশান্ত হয়ে ওঠায় সে রাজ্যে আদৌ কোনও সরকার আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা মণিপুরকে শান্ত করার পরিবর্তে অশান্তি জিইয়ে রাখতে বেশি আগ্রহী কি না! বিজেপি যে আদর্শগতভাবে ধর্মীয় বিভাজনের পক্ষে, এটাই তাদের ভোটে জেতার প্রধান অস্ত্র— সেটা তারা খুব বেশি গোপন করে না। মণিপুরেও সেই ধর্মীয় জাতপাতের বিভাজনকেই উস্কে দেওয়ার কাজ করে চলেছে গেরুয়াবাহিনী। পাহাড়ি এই রাজ্যে সমতলের বাসিন্দা মেইতেই জনগোষ্ঠী। এরা হিন্দু এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্যদিকে পার্বত্য বনাঞ্চলে কুকি-জো আদিবাসীরা খ্রিস্টান ও সংখ্যালঘু। যাকে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির আদর্শ কেন্দ্রস্থল বলা যায়। হিন্দুত্ববাদীরা এই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ উস্কে দিয়ে, জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বদ্ধপরিকর। যার পরিণতিতে রক্তের হোলিখেলা থামছে না। একপক্ষ অন্যপক্ষকে নৃশংস আক্রমণ করছে, নির্বিচার খুন করছে, ধর্ষণ করছে। মুখ্যমন্ত্রীর উপর তবু প্রবল আস্থা মোদি-শাহদের! গত দেড় বছরে সেই রাজ্যে একবারও পা রাখেননি প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি থেকে পরিস্থিতির উপর ‘নজর’ রাখছেন। আর মণিপুর আরও অতলে তলিয়ে যাচ্ছে!
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে  উন্নতি ও সাফল্যের যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.২৮ টাকা৮৬.০২ টাকা
পাউন্ড১০৪.৮৬ টাকা১০৮.৫৭ টাকা
ইউরো৮৬.৮৬ টাকা৯০.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     December,   2024
দিন পঞ্জিকা