বিদ্যায় অস্থির মানসিকতা থাকবে। কর্মপ্রার্থীদের কোনও শুভ যোগাযোগ হতে পারে। রাগ বা জেদের বশে কারও ... বিশদ
ভোকেশনাল এডুকেশন বা কারিগরি শিক্ষা একজন মানুষকে চাকরির বাজারে যোগ্য প্রতিযোগী হিসেবে গড়ে তোলার এক অন্যতম প্রয়াস। কারিগরি শিক্ষা তথাকথিত তত্ত্বীয় পড়াশোনার চেয়ে বাস্তবমুখী শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেয়, যাতে করে একজন কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে ভালো কাজের সুযোগ খুঁজে নিতে পারে। বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় কারিগরি শিক্ষার সহায়তায় চাকরির ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধে হয় না। একজন চাইলে খুব সহজেই কারিগরি শিক্ষাগ্রহণ করে নিজের কেরিয়ারকে সমৃদ্ধ করতে পারে। প্রতিযোগিতার বাজারে কারিগরি শিক্ষাযোগ্য প্রতিযোগী তৈরিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। সমমানের শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি এই পদ্ধতি কার্যকর এবং যুগোপযোগী।
যারা উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল্য ডিগ্রি কোর্স সম্পন্ন করেছেন এমন শিক্ষার্থীদের জন্য বি ভোক কোর্স করে চাকরি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই কোর্স সেই প্রার্থীদের জন্য যারা তাদের নিয়োগযোগ্যতা বাড়িয়ে ভবিষ্যৎ উড়ানের স্বপ্ন দেখে। বি কম বা বিএসসির মত সাধারণ ডিগ্রি কোর্সের তুলনায়, এই কোর্সে একাধিক চাকরির সুযোগ এবং এক্সপোজার রয়েছে। কাজের অভিজ্ঞতা একজন কর্মীর নিয়োগযোগ্যতা বাড়ায়। সাধারণ ডিগ্রি কোর্সের তুলনায় বি ভোক কোর্সের পাঠক্রম শিল্পক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতা ও কাজের ভূমিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বি ভোক একটি তিন বছরের ডিগ্রি কোর্স যা মাকাউট (MAKAUT) দ্বারা অনুমোদিত এবং যে কোনও শাখার ছাত্রছাত্রী উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করার পরেই ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রথম বছর সম্পন্ন হলে শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট পাবেন,দ্বিতীয় বছর পরে তারা অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা শংসাপত্র পাবেন এবং তিন বছর শেষ হওয়ার পর, BVoc ডিগ্রি প্রদান করা হবে। পাঠক্রমের ৪০ শতাংশ তত্ত্বমূলক এবং ৬০ শতাংশ বৃত্তিমূলক। এই ট্রেনিং প্রোগ্রাম সেমিস্টার ভিত্তিক যা উন্নত শিক্ষাদানের সহায়ক ।
এধরনের কোর্সের মধ্যে রয়েছে –
কোর্স – ট্রাভেল অ্যাড ট্যুরিজম
কাজের ক্ষেত্রে সুবিধে - বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক মুদ্রার সবচেয়ে বড় উপার্জনকারী শিল্প ভ্রমণ এবং পর্যটন শিল্প। পরিষেবা শিল্পের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ লোককে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নিয়োগ করা হয়। এই শিল্প সমস্ত ধরনের সরকারী পর্যটন বিভাগ এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলি থেকে শুরু করে ছোট ছোট প্রাইভেট ট্র্যাভেল এজেন্ট প্রভৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে।
এই শিল্পে বেতনক্রম যথেষ্ট ভাল। বিদেশি এয়ারলাইনস বা ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলিতে বেতন যথেষ্ট বেশি।
চাকরির সুযোগ - পর্যটন সংস্থা, বিমান সংস্থা ও বিমানবন্দর, রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশন, আতিথেয়তা সেক্টর, ক্রুজ লাইন, ভ্রমণ বিপিও, অনলাইন ভ্রমণ কোম্পানি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংগঠন, উদ্যোক্তা মাধ্যমে স্বয়ং কর্মসংস্থান, চিকিৎসা পর্যটন সংস্থা, গন্তব্য ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, সেবা বিপণন সেক্টরে কাজের সুযোগ রয়েছে।
কোর্স – ব্যাঙ্কিং, ফিন্যান্স সার্ভিস অ্যান্ড ইনসিওরেন্স
কাজের ক্ষেত্রে সুবিধে - বিএফএসআই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানগুলি বৈচিত্রময়, ফলস্বরূপ চাকরির সুযোগ অনেক। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে, আইন, অ্যাকাউন্টিং, বিনিয়োগ ব্যাঙ্কিং কর, জনসাধারণের সম্পর্ক, গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা প্রভৃতির নানা ধরনের ভূমিকায় প্রায় সর্বদাই চাকরির সুযোগ থাকে ।
চাকরির সুযোগ– আর্থিক হিসাবরক্ষক, আর্থিক বিশ্লেষক, ব্যবসায় বিশ্লেষক, ঋণ কর্মকর্তা, বিনিয়োগ ব্যাঙ্কার, কর্পোরেট ফাইন্যান্স, ইক্যুইটি রিসার্চ প্রভৃতি জায়গায় কাজের সুযোগ রয়েছে।
কোর্স – মেডিকেল ইমেজিং টেকনোলজি
কাজের ক্ষেত্রে সুবিধে - মেডিকেল ইমেজিং ক্ষেত্রে চাকরি সুযোগ এবং বেতনক্রমের সম্ভাবনা যথেষ্ট ভালো। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৬ সালের মধ্যে রেডিওলজি এবং এমআরআই কর্মীদের যেখানে ১২ শতাংশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রত্যাশা রয়েছে, সেখানে ডায়াগনস্টিক সোনোগ্রাফারদের একই সময়কালের জন্য ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি হবে।
চাকরির সুযোগ – রেডিওগ্রাফার, নিউক্লিয়ার মেডিসিন টেকনিশিয়ান, সোনোগ্রাফার, আল্ট্রাসাউন্ড টেকনোলজিস্ট হিসাবে কাজের সুযোগ রয়েছে।
কোর্স- হার্ডওয়্যার অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং
কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা – সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ইলেক্ট্রনিক্স এবং হার্ডওয়্যার ক্ষেত্রে খুব দ্রুত উন্নতি ঘটছে। প্রাইভেট সেক্টর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যঙ্ক, কলেজ সর্বত্র প্রতিদিনের কাজের জন্য হার্ডওয়্যার এবং নেটওয়ার্কিং এক্সপার্টদের নিয়োগ করছে। এই কোর্সে সঠিকভাবে হার্ডওয়্যার এবং নেটওয়ার্ক ডিভাইস সম্পর্কে জনানো হয় বলে পরবর্তী সময়ে হার্ডওয়্যারের, পিসির বড় ধরনের সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়।
চাকরির সুযোগ – প্রাইভেট সেক্টর, ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কলেজে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। নিজস্ব ব্যবসা গড়ে তোলা যায়।
কোর্স – ইলেক্ট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিসেস
কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা – এদেশের ইলেক্ট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি বিশ্বের মধ্যে বৃহৎ এবং উন্নয়নশীল শিল্প। ইলেক্ট্রনিক্স, আই টি এবং টেলিকম পণ্যর চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আশা করা যায় ২০২০ সালে এই চাহিদা বেড়ে ৪০০ বিলিয়ন ইউএস ডলারে পরিণত হবে। বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ফোন, লাক্সারি এবং অটোমোবাইল ব্র্যান্ডসের জন্য এদেশ ফরেন ইনভেস্টমেন্টের জন্য অনুকূল। আশা করা যায় ২০২৫ সালে ম্যানুফ্যাকচার সেক্টরে আয় এক ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারে পরিণত হবে।
চাকরির সুযোগ – ইলেক্ট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে কাজের সুযোগ রয়েছে, এছাড়া নিজস্ব ব্যবসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতেও সুবিধা হয়।
কোর্স – অটোমোবাইল সার্ভিসিং টেকনোলজি
কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা – অটো সার্ভিসিং মার্কেট বর্তমানে ২০,০০০ কোটি টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। আশা করা যায় ২০২০ সালে এটি বেড়ে ৩৩,০০০ – ৩৪,০০০ কোটি টাকায় পরিণত হবে। এদেশের জিডিপির ৭ শতাংশ আসে অটোমোবাইল শিল্প থেকে। ২০২০সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্পে পরিণত হওয়ার আশা রয়েছে।
চাকরির সুযোগ – অটোমোবাইল শিল্পে কাজের সুযোগ তো আছেই। এসব জায়গায় অটোমেটিভ টেকনিশিয়ন, কার মেকানিক, ডিজেল মেকানিক, সেলস পার্সন, ইন্টারনেট মার্কেটিংয়ের মতো কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
কোর্স – বিউটি অ্যান্ড আস্থেটিক্স
কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা – কাজের বড় সুযোগ রয়েছে বিউটি অ্যান্ড অ্যাস্থেটিক্স বিষয়ে। এনএসডিএস অনুযায়ী ওয়ার্ক ফোর্স তিনগুন বেড়ে ২০১৩ সালে যা ছিল ৪০ লাখ তা ২০২২ সালে হবে ১.৪২ কোটি। এফআইসিসিআই এর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর এদেশে ২০,০০০ জন নতুন দক্ষ কর্মী প্রয়োজন।
চাকরির সুযোগ – পড়ার শেষে কাজের সুযোগ রয়েছে স্যলন এবং স্পাতে। এছাড়াও নেল আর্ট টেকনিসিয়ান, স্কিন স্পেশালিস্ট হিসাবে স্কিন ক্লিনিকে যোগ দেওয়া যায়। সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিংয়ের কাজ করা যায়।
কোর্স – ইন্টিরিওর ডিজাইন
কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা – বর্তমানে ১০০০০০ জনের বেশি সংখ্যক ইন্টিরিওর ডিজাইনার প্রয়োজন বিভিন্ন আর্কিটেকচরাল এবং রিয়েল এস্টেট ফার্মে কাজের জন্য। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাজের জন্য, হসপিটালিটি, হেলথ কেয়ার, ফার্নিচার কোম্পানি সর্বত্রই কাজের চাহিদা রয়েছে।
চাকরির সুযোগ - ইন্টিরিওর ডিজাইনার হওয়া যায়, এছাড়া ইনফ্রাস্টাকচার অ্যান্ড প্রপার্টি ডেভেলপার, ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, ডিজাইন ফার্ম সহ প্রভৃতি জায়গায় কাজের সুযোগ মেলে।
কোর্স – মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজি
কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা – মেডিক্যাল সেক্টরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোর্স মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজি। যে কোনও রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের কাছে আগে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার। যার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা শুরু করা যায়। আর এ কারণেই মেডিক্যাল ল্যাব টেকনিশিয়ানদের গুরুত্বও রয়েছে।
চাকরির সুযোগ– বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে, মেডিক্যাল প্যাথল্যাবে, ব্লাড ডোনার সেন্টারে, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কাজের সুযোগ রয়েছে। নিজস্ব স্বতন্ত্র ব্যবসাও করা যায়। এসব জায়গায় সিটি স্ক্যান টেকনিশিয়ান, অ্যানেস্থিসিয়া টেকনিশিয়ান,ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, এমআরআই টেকনিশিয়ান, অপারেশন থিয়েটার টেকনিশিয়ান, প্যাথোলজি টেকনিশিয়ান, প্লাস্টার টেকনিশিয়ান হওয়ার সুযোগ মেলে।