উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। হিসেব করে চললে তেমন আর্থিক সমস্যায় পড়তে হবে না। ব্যবসায় উন্নতি ... বিশদ
তুলসী একটি দারুণ ভেষজ। প্রচুর গুণাগুন রয়েছে এতে। যত রকমের ভেষজ গুণ সম্পন্ন গাছ রয়েছে, তার মধ্যে তুলসীকে ‘রানি’ বলা হয়। আমাদের দেশে বহু বছর ধরে তুলসীর চাষ হয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বাণিজ্যিকভাবে তুলসীর চাষ করে কৃষক নিশ্চিত লাভবান হবেন। ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনমাসে প্রায় দু’লক্ষ টাকা আয় করা যেতে পারে। বাজারে তুলসীর প্রচুর চাহিদা। সারা বছর ধরেই চাষ করা যায়। তবে মোটামুটিভাবে বর্ষায় তুলসীর চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
এক হেক্টর জমির জন্য তুলসীর বীজ প্রয়োজন ১০ কেজি। তুলসীতে সেভাবে রোগপোকার আক্রমণ হয় না। তবে জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজন ভিত্তিতে সেচের দরকার হতে পারে। তুলসীর পাতা ও বীজ বাজারে বিক্রি হয়। বীজের দাম প্রতি কেজি দেড়শো থেকে দু’শো টাকা। তুলসীর পাতা থেকে তেল তৈরি হয়। সাতশো থেকে আটশো টাকা কেজিতে বিক্রি হয় ওই তেল। সব মাটিতেই তুলসীর চাষ করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত নোনা মাটি বা ক্ষারযুক্ত জমিতে চাষ করা উচিত নয়। যে জমিতে জল জমে থাকে, সেখানেও তুলসী চাষ না করাই ভালো। ৫.৫ থেকে ৭ পিএইচ যুক্ত মাটি তুলসী চাষের জন্য আদর্শ। তুলসী চাষে রাসায়নিক সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। জৈবসার প্রয়োগেই ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। কৃষি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রতি হেক্টর জমি থেকে প্রায় চার টন তুলসী পাতা পাওয়া যেতে পারে আড়াই থেকে তিনমাস অন্তর। যা শুকনো করলে এক টনের মতো হবে।
ভালোভাবে জমিতে লাঙল দিয়ে তুলসীর জন্য জমি তৈরি করতে হবে। ৬০ সেন্টিমিটার দূরত্বে তুলসীর চারা বসানো উচিত। বীজ বপন করতে হবে দুই সেন্টিমিটার গভীরতায়। জমিতে চাষ দেওয়ার ছয় সপ্তাহ পর তুলসীর বীজ বপন করতে হবে। মাটি বাহিত রোগ ও পোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে বোনার আগে ম্যানকোজেব ৫ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনের ভিত্তিতে ইউরিয়া, মিউরিয়েট অব পটাশ ও সিঙ্গল সুপার ফসফেট প্রয়োগ করতে পারেন কৃষকরা। প্রথম ও দ্বিতীয়বার কাটিং নেওয়ার পর নাইট্রোজেন যোগ করা যেতে পারে জমিতে। দরকার মতো প্রয়োগ করতে হবে অনুখাদ্য।
বর্ষায় তুলসীর জমিতে সেচের দরকার পড়ে না। গরমের সময় প্রতিমাসে একটি করে সেচ দিতে হবে। তুলসীর জমিতে লিফ রোলার পোকার আক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে একরে ১৫০ লিটার জলে ৩০০ মিলি কুইনালফস মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। পাউডারি মিলডিউ রোগ দেখা দিলে ম্যানকোজেব ৪ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে সুফল মেলে। ছত্রাকের আক্রমণে সিডলিং ব্লাইট দেখা দিতে পারে। এতে বীজ বা চারা মারা যায়। এছাড়া শিকড় পচা রোগ দেখা দিলে ব্যাভিস্টিন ১ শতাংশ জলে মিশিয়ে তুলসীর চারার বেড ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তুলসীর বহু প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি উল্লেখযোগ্য। মূলত বিষ্ণু তুলসী, রাম তুলসী, শ্যাম তুলসী, ভান তুলসী প্রভৃতির চাষ হয়ে থাকে। শরীরে নতুন রক্তকোষ তৈরিতে তুলসী দারুণভাবে সাহায্য করে। তাছাড়া শরীরের টক্সিন দূর করতেও কার্যকরী। নিয়মিত তুলসী রস সেবনে সর্দি-কাশি, জ্বর, ফ্লু থেকে দূরে থাকা যায়। কোলেস্টরল ও সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে তুলসীর। শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ কিংবা গলার প্রদাহ কমাতে পারে তুলসী। এতে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা স্বাভাবিক নিয়মে শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়তে শক্তি সঞ্চয় করে। ম্যালেরিয়া, ত্বকের নানা সমস্যায় তুলসীর গুণের তুলনা নেই। অ্যালার্জি প্রতিরোধে সক্ষম। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ব্যথায় উপকারি। রক্ত শোধন করে। উদ্বেগ কমায়। মানসিক অবসাদ দূর করে। অনিদ্রার সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।