উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। হিসেব করে চললে তেমন আর্থিক সমস্যায় পড়তে হবে না। ব্যবসায় উন্নতি ... বিশদ
জেলার সহ মৎস্য অধিকর্তা সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রুই, কাতলা, মৃগেল, বাটা, পুঁটি প্রভৃতি মিষ্টি জলের মাছের শরীরে রক্তের লবণাক্ততা অর্থাৎ পিপিটি শূন্য থেকে ০.৫। ফলে যে জলাশয়ে এই সমস্ত মাছ চাষ করতে হবে, তার পিপিটি আড়াই থেকে ৩ থাকতে হবে। তা না হলে মাছ দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে উৎপাদন কমবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মাটিতে নোনাভাব আছে। এখানকার মিষ্টি জলের পুকুর বা ভেড়িতে সাধারণভাবে লবণাক্ততার একক দুইয়ের বেশি থাকে। কোন পুকুরের জলে পিপিটি কত, তা জানতে পরীক্ষা চলছে। কীভাবে জলের লবণাক্ততার মাত্রা প্রয়োজনে বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। জেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবন অঞ্চলের খাঁড়িগুলির সঙ্গে যুক্ত পুকুর বা ভেড়ির জলের লবণাক্ততার একক ১০ থেকে ১৫-র মধ্যে থাকে। সেক্ষেত্রে এই সমস্ত জলাশয়ে চাষিরা বাগদা, নোনা ট্যাংরা, ভেনামি, ভেটকি, পার্সে প্রভৃতি মাছ চাষ করতে পারেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার শস্য শ্যামলা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মৎস্য বিশেষজ্ঞ ড. স্বাগত ঘোষ জানিয়েছেন, মাছ চাষের মূল কথা চুন আর নুন। এই দু’টিই প্রয়োজন অনুযায়ী জলাশয়ে প্রয়োগ করতে হবে। যদি কোনও জলাশয়ে লবণাক্ততার পরিমাণ কমে যায় তা হলে বাইরে থেকে নুন যোগ করতে হবে। এক্ষেত্রে কতটা নুন দরকার তা জলের পিপিটি দেখে বোঝা যাবে। নুন প্রয়োগে শুধু জলের পিপিটি বাড়ে তা নয়, মাছ অনেক রোগজীবাণুর হাত থেকেও রক্ষা পায়। আবার যদি কোনও জলাশয়ে বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকায় মাছ চাষের পুকুর বা ভেড়িতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যায়, তা হলে বাইরে থেকে ফ্রেশ ওয়াটার যোগ করতে হবে। তাতে লবণাক্ততার পরিমাণ কমবে। স্বাগতবাবু জানিয়েছেন, যদি মাছের দেহের তুলনায় জলের লবণাক্ততা কমে যায়, তা হলে অভিস্রাবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাছের দেহ থেকে নুন পুকুরের জলে চলে আসার সম্ভাবনা থাকে। ফলে মাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার মাছের দেহের তুলনায় পুকুরের জলে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে গেলে উল্টো ঘটনা ঘটতে পারে। কিছু মাছ জলে অতিরিক্ত নোনাভাব সহ্য করতে পারে। তারা নিজেদের শরীরে ওই নুন খানিকটা হলেও জমিয়ে রাখতে সক্ষম। কিন্তু অনেক মাছের ক্ষেত্রেই এই সহ্য ক্ষমতা না থাকায় সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায়। ফলে জলের লবণাক্ততা দেখেই মাছ করা জরুরি।
জেলার মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ উমাপদ পুরকাইত বলেন, উম-পুনের পরেই একশো দিনের কাজের প্রকল্পে জেলার পুকুর ও ভেড়িগুলি সংস্কার করা হয়েছে। এর পর চুন ও পটাশ দিয়ে শোধন করা হয়েছে পুকুরের জল। এজন্য জেলার প্রায় ৩০ হাজার মৎস্যজীবীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দেওয়া হয়েছে মাছ ধরার হাঁড়ি। মেরামত করে দেওয়া হয়েছে নৌকা। সবমিলিয়ে খরচের পরিমাণ ১৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুবিধা পেয়েছেন প্রায় এক লক্ষ মৎস্যচাষি। জল ধরো জল ভরো প্রকল্পে সরকারি ও বেসরকারি ৫৪৪ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৮৩টি পুকুর কাটা হয়েছে। এই সমস্ত পুকুরে মাছ চাষের জন্য মৎস্যজীবীরা সরকারি সুবিধা পাবেন। ক্যানিং, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ডহারবার, বাসন্তীর পাইকারি মাছবাজারগুলি সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলার ১১ হাজার ৩৮ বিঘা বন্ধ্যা জমিতে পুকুর কেটে মাছ চাষের উপযোগী করে তোলা হয়েছে।