কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
স্ট্রেস বাড়লে সুগার কমবে না এমন হতে পারে?
সত্যিই তাই। স্ট্রেস বাড়লে সুগার কমতে চায় না। এমনকী যাঁদের ডায়াবেটিস নেই, তাঁদেরও ডায়াবেটিস হতে পারে। আবার যাঁদের ডায়াবেটিস আছে এবং নিয়ন্ত্রণে আছে, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া যাঁদের ডায়াবেটিসের উপর খুব ভালো নিয়ন্ত্রণ নেই, তাঁদের শারীরিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সুতরাং স্ট্রেস একটা বড় রিস্ক ফ্যাক্টর। এমনকী জানলে অবাক হবেন, স্ট্রেস কমাতে না পারলে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও মাথাচাড়া দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেশার, ফ্যাটি লিভারের মতো নন কমিউনিকেবল ডিজিজ যেমন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনই দেখা দিতে পারে মহিলাদের মধ্যে পিসিওডি বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ সহ বন্ধ্যাত্ব। উল্লেখ্য, পিসিওডি থাকলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কাও বাড়ে। স্ট্রেস বাড়ায় স্থূলত্বও। সবচাইতে যন্ত্রণার বিষয় হল, একটি নন কমিউনিকেবল ডিজিজ শরীরে বাসা বাঁধলে তখন অন্য অসুখকেও ডেকে নিয়ে আসে।
স্ট্রেস শরীরের ভিতরে কীভাবে প্রভাব ফেলে, যার প্রভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়?
স্ট্রেস মানে একদিনের স্ট্রেস-এর কথা বলা হচ্ছে না। কথা হচ্ছে ক্রনিক স্ট্রেস নিয়ে। ক্রনিক স্ট্রেস আসতে পারে অফিসের গন্ডগোল, ব্যবসায় মন্দা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, ক্রনিক অসুস্থতা থেকে। দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রেস-এ ভুগলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন হর্মোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এমনই একটি হর্মোন হল কর্টিজল। এই হর্মোনকে স্টেরয়েড হর্মোনও বলা হয়। স্টেরয়েড হর্মোন বাড়লে অন্যান্য নন কমিউনিকেবল ডিজিজের বৃদ্ধি ঘটার আশঙ্কা থাকে। দেখুন, শরীরে কর্টিজল হর্মোনের বৃদ্ধি ঘটলে তা কতকগুলি রিসেপটরে গিয়ে আবদ্ধ হয়। এরপর শরীরের আণবিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন হয়। এর ফলে ব্রেন থেকে নানা নিউরোট্রান্সমিটার বের হয়, যা আমাদের খিদে বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া ক্লান্তিবোধ হয় অনেক বেশি। রোজকার স্বাভাবিক কাজ যেমন এক্সারসাইজ করা, বাজার করা, হাঁটাহাঁটির মতো কাজগুলি আর করতে ইচ্ছে করে না। কারও কারও কথা বলতেও ইচ্ছে করে না। এর ফলে স্ট্রেস আক্রান্ত ব্যক্তির ওজনও বাড়তে থাকে। তার সঙ্গে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণও হয়ে পড়ে অসম্ভব। খেয়াল করে দেখুন, কোভিডের সময় বহু মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন। ঘটেছিল আত্মীয় বিয়োগ। মনের উপর পড়েছিল মারাত্মক চাপ। সেই স্ট্রেস-এ বহু লোকেরই ব্লাড সুগার গিয়েছিল বেড়ে। এছাড়া ডায়াবেটিস বাড়লেও অনেকের স্ট্রেস-এর মাত্রা বেড়ে যায়। কারণ এই অসুখের চিকিত্সায় প্রয়োজন হয় ওষুধের ও নিয়মিত চিকিত্সকের তত্ত্বাবধানে থাকার। সেগুলির একটা খরচ আছে। এছাড়া একটানা সুগার বেশি থাকলে ধীরে ধীরে চোখ, কিডনি, লিভার, হার্টে পড়ে ভয়ঙ্কর নেতিবাচক প্রভাব। ডায়াবেটিস রোগীর ফুট আলসার, নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকিও যায় বেড়ে। সেইসব আশঙ্কাতেও বাড়ে উত্কণ্ঠা।
তাহলে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের উপায় কী?
পাঁচটি উপায় বলব। প্রথমত, রোজ এক্সারসাইজ করুন। যোগা করতে পারেন। করতে পারেন জগিং, আবার চাইলে জিমেও যেতে পারেন। যেভাবেই পারবেন এক্সারসাইজ করুন, স্ট্রেস কমবে। কারণ এক্সারসাইজ করলে আমাদের শরীরে এন্ডোর্ফিন নামে একটি হরমোন বের হয়। এই হরমোন, আমাদের মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করে। দূরে রাখে স্ট্রেস। এই হরমোন এন্ডোজেনাস পেনকিলার হিসেবে কাজ করে। এই কারণে নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীরের ব্যথাযন্ত্রণা কমে যায়।
দ্বিতীয়ত, অভ্যেস করুন মাইন্ডফুলনেস এক্সারসাইজ। মাইন্ডফুলনেস এক্সারসাইজ আমাদের অতীত নিয়ে ভাবনা বা অজানা ভবিষ্যতের উত্কাণ্ঠা ছেড়ে বর্তমান পরিস্থিতির দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে শেখায়। তৃতীয়ত, যিনি যে ধর্মের মানুষই হন না কেন, সব ধর্মেই প্রার্থনার রীতি থাকে। তাই রোজ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে প্রার্থনা করুন। মন শান্ত হবে।
চতুর্থত, পরিবারের সঙ্গে রাখুন যোগাযোগ। বাবা-মা কিংবা স্ত্রী, সন্তানের নিবিড় সান্নিধ্যে থাকুন। ওদের সঙ্গে সময় কাটান। পঞ্চমত, পছন্দের হবি বা কাজ করুন। ইচ্ছে হলে ছবি আঁকুন, কবিতা পাঠ করুন, বই পড়ুন, গান শুনুন, বাগান করুন, নদীর ধারে বসে থাকুন! দেখবেন খুব ভালো থাকছেন। স্ট্রেস দূরে থাকছে।
শেষে আর একটা কথা বলি। বহু ডায়াবেটিস রোগী আসেন যাঁরা কড়া ডায়েটের বজ্রআঁটুনির চাপে অবসাদে ভুগতে থাকেন। তাঁদের জন্য ছোট্ট পরামর্শ, সারা মাস নিয়মে চলে, একদিন একটা মিষ্টি, একটু বিরিয়ানি খেতেই পারেন। তাতে যদি বিষণ্ণভাব কাটে, ডায়াবেটিস আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়— ক্ষতি কী?