কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। ব্যবসায়ীদের উন্নতির আশা রয়েছে। বিদ্যার্থীদের সাফল্যযোগ আছে। আত্মীয়দের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেবে। ... বিশদ
কী ধরনের শাক-সব্জি-ফল অথবা দৈনন্দিন খাবার আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে তা নিয়ে অনেক প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। এরফলে আমরা অনেকেই যে এখন স্বাস্থ্য সচেতন একথা অনস্বীকার্য। কিন্তু যে খাবার বা ওষুধ আমরা খাই তা কোন পাত্রে রাখা হচ্ছে সেটা নিয়ে অনেকেই ভাবেন না। অথচ এমন অনেক পাত্র বা বাসনপত্র আছে যাতে খাবার বা পানীয় রাখলে শরীরে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। বর্তমানে আমাদের সবার রান্নাঘরেই প্লাস্টিকের পাত্র এবং বোতল থাকে। এরকম বাড়ি প্রায় নেই বললেই চলে যেখানে প্লাস্টিকের বাসন নেই। এছাড়া বাজারে গিয়ে সব্জি থেকে শুরু করে তেল, নুন, পাউরুটি, দুধ যা কেনা হচ্ছে তার প্রায় সবকটিই প্লাস্টিকের মধ্যে থাকে।
প্লাস্টিক পাত্র প্রধানত দু’ধরনের হয় পলিকার্বোনেট এবং পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি)। এদের মধ্যে দু’টি অত্যন্ত ক্ষতিকর পদার্থ থাকে যা হল বিসফেনল-এ (বিপিএ) এবং থ্যালেট। দীর্ঘদিন এই ধরনের পাত্র ব্যবহার করার ফলে শিশুদের হর্মোনের গণ্ডগোল সহ নানা অসুখ আর প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যান্সার, হার্টের সমস্যা ওবেসিটি, ডায়াবেটিস এবং ইনফার্টিলিটি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে।
আবার ধাতুর পাত্রও সবক্ষেত্রে নিরাপদ নয়। বিভিন্ন ফল ও সব্জিতে অ্যাসিড থাকে যার ফলে এদের অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে রাখলে বিক্রিয়া হতে পারে। আবার পেতলের পাত্রে আচার বা চাটনি রাখলে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হতে পারে। আবার অনেকের মতে টেফলন কোটেড ননস্টিক বাসন থাইরয়েড, লিভার এবং কিডনির অসুখের কারণ।
এবার তাহলে জানা দরকার কোন ধরনের পাত্র রান্না এবং খাওয়ার কাজে ব্যবহার করা নিরাপদ। স্বনামধন্য সাহিত্যিক লীলা মজুমদার ১৯৭৯ সালে লেখা ‘রান্নার বই’ গ্রন্থে কাঁসার এবং অ্যালুমিনিয়ামের বাসনের পরিবর্তে গৃহস্থলীর কাজে কাচ, সেরামিক, পাথর, স্টেনলেস স্টিল এবং হিন্ডেলিয়ামের বাসন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
অন্নপ্রাশনের সময় শিশুকে রুপোর বাসনে খাদ্য ও পানীয় পরিবেশনের রীতি আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। বাচ্চাদের জন্য রুপোর বাসন সবচেয়ে নিরাপদ। গরম খাবার, দুধ, ফল সবকিছুই এই বাসনে রাখা যায়। অনেকের মতে রুপোর বাসনে জীবাণু সংক্রমণ হয় না তাই এই বাসন স্টেরিলাইজ করারও প্রয়োজন পড়ে না। এই বাসনে রাখলে খাবারের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। শুধু যে সব খাবারে সালফার আছে (যেমন ডিম) সেসব খাবার এই পাত্রে রাখা চলবে না। তবে রুপোর বদলে কাচের বাসনও অত্যন্ত নিরাপদ। এতে সব ধরনের খাদ্য ও পানীয় রাখতে পারা যায়। এই ধরনের পাত্র নিরাপদ হওয়া সত্ত্বেও ভারী এবং ভঙ্গুর হওয়ায় এর ব্যবহারের প্রতি মানুষের আগ্রহ খুবই কম।
তাহলে এমন পাত্র প্রয়োজন যা খুব দামিও নয় আবার চট করে ভেঙে যায় না। এক্ষেত্রে প্রথমেই আসে স্টেনলেস স্টিলের কথা। এই বাসনে সব ধরনের খাবার নিশ্চিন্তে রাখা যায় এবং খাওয়া যায়। তবে সব সময় ভালো মানের স্টেনলেস স্টিল কেনা উচিত এবং এই বাসন একবার ভেঙে গেলে বা এতে আঁচড় লাগলে (স্ক্র্যাচ) তা আর ব্যবহার করা চলবে না। এতে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। সেরামিকের বাসন দামে সস্তা, নিরাপদ এবং এতে রান্না করতে কম জ্বালানি খরচ হয়। সেরামিক কোনও খাবারের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটায় না। এতে কম তেলে রান্না হয় বলে ননস্টিক পাত্রের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে অ্যালুমিনিয়ামের ওপর সেরামিকের কোটিং দেওয়া হালকা বাসনও পাওয়া যাচ্ছে।
আগেকার দিনে পাথরের থালা, বাটি, গ্লাস ব্যবহারের রেওয়াজ ছিল। পাথরের বাসনকে কেমিক্যাল ফ্রি বাসন বলা হয়। পাথরের বাসনে খাবার দীর্ঘ সময় পর্যন্ত গরম থাকে। কম আঁচে যে সব রান্না হয় সেই সব রান্নার জন্য পাথরের বাসন আদর্শ। এই ধরনের বাসন ব্যবহার করার আগে বেশ কয়েকদিন হলুদ ও তেলের প্রলেপ দিয়ে রেখে দিতে হবে।
আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরি করার জন্য মাটি, পাথর, ধাতু, কাঠ প্রভৃতি বিভিন্ন উপাদানে নির্মিত পাত্র ব্যবহার করা হয়। তামার পাত্র পানীয় জলের জন্য খুব ভালো। কোনও কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এই পাত্রে জল রেখে পান করলে মেটাবলিক রেট বাড়ে, ত্বকে কোলাজেনের পরিমাণ বাড়ে। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, তামার পাত্রের ব্যবহারে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে এবং দেহের টক্সিন দূর হয়।
ভালো মানের রুপোর পাত্রে আহার করলে মানসিক উত্তেজনা এবং ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে থাকে, গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল হয়, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে, তৃষ্ণা বোধ দূর হয় এবং ইনফার্টিলিটির সমস্যায় উপকার মেলে। একটি বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রুপোর পাত্রের ব্যবহারে মৃগী রোগীর উপকার হয়। পিতল এবং কাঁসার পাত্রে আহার করলে শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ত্বক এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে, অতিরিক্ত ওজন কমে এবং মানসিক উদ্বেগ কমে। তবে কাঁসার পাত্রে ঘি খাওয়া যাবে না।
মূল্যবান সোনার পাত্রে আহার করলে বার্ধক্য প্রতিরোধ হয়, স্মৃতিশক্তি বাড়ে, অ্যালঝাইমার্স রোগের উপকার হয়। মাটির পাত্রের ব্যবহারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে প্যাকেজিং মেটেরিয়াল হিসেবে হাই ডেনসিটি পলিইথিলিন ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের প্লাস্টিক হালকা এবং সহজে ভেঙে যায় না এবং দামেও সস্তা। তবে যে কোনও ধরনের ওষুধ রাখার জন্য কাচের পাত্র (অ্যাম্বার কালার) সর্বশ্রেষ্ঠ। কিছু কিছু ওষুধ যেমন ইনহেলার, স্প্রে প্রভৃতির ক্ষেত্রে অ্যালুমিনিয়াম এবং স্টেনলেস স্টিলের পাত্র ব্যবহৃত হয়। ওষুধের পাত্রের মুখে ধাতু বা রবারের ঢাকনা ব্যবহার করা হয়। সাধারণত, যে কোনও পাত্রে ওষুধ প্যাকেজিং-এর আগে ভালোভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয় তা কতটা নিরাপদ।
রোজকার রান্নাবান্না এবং খাওয়ার জন্য প্লাস্টিকের পরিবর্তে স্টেনলেস স্টিল এবং কাচের বাসন ব্যবহার করা শ্রেয়। যাঁরা প্লাস্টিক বাসন ব্যবহার করেন তাঁরা খুব বেশি আঁচে রাঁধবেন না। খালি ননস্টিক পাত্র অনেকক্ষণ আগুনে বসিয়ে রাখবেন না। রান্নাঘরে অবশ্যই ভেন্টিলেশন-এর ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং এই ধরনের বাসনের টেফলন কোটিং উঠে গেলে আর ব্যবহার করবেন না।
প্লাস্টিকের বাসনে কোনও খাবার গরম করা একেবারেই উচিত নয়, এমনকী কোনও গরম খাবার প্লাস্টিকের বাসনে রাখাও উচিত নয়। এছাড়া প্লাস্টিকের বাসন পুরনো হয়ে গেলে তা ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত।