উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য, ব্যবসায় গোলোযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
টেনশন সবসময় খারাপ নয়। পরীক্ষা নিয়ে অল্প টেনশন থাকা ভালো। এর ফলে প্রস্তুতিটাও যেমন জোরদার হয়, তেমনই ভালো ফল করার তাগিদও বাড়ে। তবে ভীতি যদি ফোবিয়ায় পরিণত হয়, তাহলে মুশকিল। অনেকেই এমন রয়েছে, যাদের ব্যক্তিত্বের মধ্যে প্রথম থেকেই স্ট্রেসের লক্ষণ থাকে। এর পিছনে তাদের বেড়ে ওঠার পারিপার্শ্বিক পরিবেশও দায়ী থাকে। বিশেষ করে বাবা-মায়ের আচরণ একটা বড় ভূমিকা নেয়। সন্তানের উপর নিজের ইচ্ছেগুলোকে চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। এই প্রত্যাশার চাপ থেকেই অনেক পড়ুয়া মারাত্মক পরীক্ষা-ভীতিতে ভুগতে থাকে। অতএব এই চাপ কমাতে হবে। দেখা যাক, কীভাবে আমরা পরীক্ষা নিয়ে ফোবিয়া কাটাতে পারি—
পরিকল্পনা বা প্ল্যানিং
পরীক্ষা-ভীতি কাটানোর প্রথম টোটকাই হচ্ছে, অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করা। পুরোটাই আগে থেকে পরিকল্পনা করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে একদিকে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অন্যদিকে, পরীক্ষা নিয়ে অযথা টেনশন করার প্রবণতাও কমবে।
সময়ের সদ্ব্যবহার
সময় ভাগ করে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষার ফল ভালো হবেই। রাতে হোক দিনে, নিজের সুবিধেমতো পড়ার জন্য সময় বের করে নিতে হবে। আর সেটা করতে হবে নিষ্ঠার সঙ্গে। নিজের দুর্বল জায়গাগুলির জন্য বেশি সময় দিলে আপনা থেকেই প্রস্তুতিটা ভালো হবে।
পুনর্মূল্যায়ন
পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে অনবরত পুনর্মূল্যায়ন চালিয়ে গেলে পরীক্ষা-ভীতি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। যা পড়ছি, তা মনে থাকবে কি না, সেটা যাচাই করে নেওয়াই পুনর্মূল্যায়ন। যত বেশি পুনর্মূল্যায়ন হবে, সংশ্লিষ্ট বিষয়টিতে ভয়ও ততটাই কমে যাবে।
ভিস্যুয়াল মেমরি
যখন পরীক্ষার আর দিন কুড়ি বাকি, তখন এই ভিস্যুয়াল মেমরির অনুশীলন শুরু করা যেতে পারে। কোনও বিষয় পড়ার পর যদি মনে হয়, পরীক্ষার হলে সেটা মাথায় নাও থাকতে পারে, তখন সেই বিষয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অন্য কোথাও লিখে রাখতে হবে। তারপর অবসর সময়ে সেগুলিতেই শুধু চোখ বুলিয়ে যেতে হবে। খেতে বসে বা ছাদে-বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে করতে এটা করা যেতে পারে। এভাবে অন্যান্য বিষয়গুলির ক্ষেত্রেও আলাদা করে পয়েন্ট লিখে রাখলে পরীক্ষার সময় উত্তর লিখতে অনেকটাই সুবিধা হবে পরীক্ষার্থীদের।
পর্যাপ্ত ঘুম এবং শরীরচর্চা
অনেকের মধ্যে এই ধারণা রয়েছে যে, পরীক্ষার আগে রাত-দিন পড়াশোনা করলে ফল ভালো হতে বাধ্য। সেটা করতে গিয়ে অনেক সময়ই পড়ুয়ারা খুবই কম সময়ের জন্য ঘুমোয়। এটা একেবারেই উচিত নয়। অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে। না হলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও। কারণ, যা পড়ছি, তা আত্মস্থ করতে মস্তিষ্কের এই ঘুম প্রয়োজন। এর সঙ্গে শরীরচর্চাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। টেনশন বা স্ট্রেস কাটানোর অন্যতম ভালো উপায় হল শরীরচর্চা। তা সে স্কিপিং হোক বা জগিং।
একটানা পড়াশোনা নয়
পরীক্ষার আগে সিলেবাস শেষ করার তাগিদে একটানা পড়ে যাওয়া কিন্তু ঠিক নয়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিরতি নিতে হবে। কারণ, আমাদের মস্তিষ্কের গঠন যা তাতে একটানা পড়ার ধকল সে সইতে পারে না। ফলে পরীক্ষার হলে গিয়ে সব তালগোল পাকিয়ে যায়। যাদের অমনযোগিতার ধাত রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। তাই ১ ঘণ্টা পড়ার পর ৫-১০ মিনিটের বিরতি নেওয়াটাই শ্রেয়। সেই সময়টায় যা পড়লাম, সেটাই মাথার মধ্যে একবার ঝালিয়ে নিতে হবে।
ডায়েট
পরীক্ষায় সফল হওয়ার নেপথ্যে এই খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েটের কিন্তু বড় ভূমিকা রয়েছে। বাদাম, আখরোট, আমন্ডে খুব বেশি পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে যা মস্তিষ্কের স্নায়ুর সক্রিয়তা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রোজকার ডায়েটের মধ্যে বাদাম রাখতেই হবে। মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও বাদাম খাওয়ার একটা উপকারিতা রয়েছে। বাদাম খেলে যে ক্রাঞ্চিং সাউন্ড হয়, তা স্ট্রেস বাস্টারের কাজ করে। গাজর বা শসা খেলেও একইরকম শব্দ হয়। এতে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। টেনশনও কিছুটা লাঘব হয়।
বাদ সোশ্যাল মিডিয়া
জেন-ওয়াই কাছে এটা অসম্ভব মনে হলেও পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হলে প্রস্তুতির সময় সোশ্যাল মিডিয়া এবং মোবাইল ফোন থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। পড়াশোনার প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা গেলেও বাকি সোশ্যাল সাইটগুলি সচেতনভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ, এই সোশ্যাল সাইট থেকে পরীক্ষার্থীদের মনে বাড়তি চাপ তৈরি হয়ে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে নিজের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে যদি কোনও পরীক্ষার্থী দেখে যে বন্ধু তার থেকেও বেশি ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে, তাহলে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াটির উপর আলাদা করে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হয়। গ্রাস করতে পারে হীনম্মন্যতাও। এর পাশাপাশি মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতেও সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও জুড়ি নেই।
বাবা-মায়েদের করণীয়
সন্তানের উপর নিজেদের ইচ্ছেগুলোকে চাপিয়ে দেবেন না। এই প্রত্যাশার চাপেই অনেক পড়ুয়া পরীক্ষার আতঙ্কে ভুগতে থাকে। বাড়িতে এমন পরিবেশ তৈরি করুন যেখানে আপনার সন্তান উপলব্ধি করতে পারে যে এটাই জীবনের শেষ পরীক্ষা নয়। পরীক্ষার রেজাল্ট কী হবে, তা আমাদের হাতে নেই। যা আছে, তা হল, ভালো ফল করার প্রস্তুতিটা ঠিকভাবে নেওয়া। তাই সবসময় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সন্তানকে সাহায্য করে যেতে হবে। সবসময় সন্তানের পাশে থাকুন। ওর মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
বড়দের কথা
এবার আসা যাক বড়দের প্রসঙ্গে। ইন্টারভিউয়ের ভীতিও কিন্তু একধরনের সোশ্যাল অ্যাংজাইটি। অচেনা লোকের সঙ্গে কথা বলতে সংকোচ বোধ করা বা হলভর্তি লোকের সামনে মঞ্চে উঠতে ভয় পাওয়াটা একেবারেই স্বাভাবিক একটা বিষয়। ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে অনেকেরই টেবিলের অন্য প্রান্তে বসা মানুষটির সঙ্গে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করেন। এগুলিও একধরনের সোশ্যাল ফোবিয়া। এগুলি কাটানোর একাধিক উপায় আছে। যেমন— ইন্টারভিউয়ের জন্য বেশ কিছুদিন আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া। নিয়ম করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মক ইন্টারভিউ দেওয়া। অচেনা মানুষদের সঙ্গে (নিয়োগকর্তা) চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা অভ্যাস করতে হবে। ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বিনম্রতার সঙ্গেই নিয়োগকর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বললে আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়ে। এসব করেও ফল না পেলে বা এই ফোবিয়া বা ভীতি মাত্রাতিরিক্ত পর্যায় চলে গেলে শেষ অস্ত্র হিসেবে কাউন্সেলিংয়ের শরণাপন্ন হতে হবে। বুদ্ধিমান, মেধাবী হয়েও যদি কেউ ইন্টারভিউতে গিয়ে এইধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, তবে বুঝতে হবে তার কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। সঠিক পদ্ধতিতে কাউন্সেলিং করা হলে, এই ভীতি সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।