পারিবারিক সম্পত্তি ভাগাভাগিতে লাভবান হবেন । ব্যবসায়িক ক্ষেত্রটি কম বেশি চলবে। শিক্ষার্থীদের পক্ষে দিনটি শুভ। ... বিশদ
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। সৌরজগতের বাকি সব গ্রহের মোট ভরের দ্বিগুণ সে একাই। সে জন্য একে বলে গ্রহরাজ। গঠনের দিক থেকে এই গ্রহ গ্যাসীয় দানব। অর্থাৎ বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গলের মতো বৃহস্পতি পাথুরে নয়। গ্রহটি এত বড় যে এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০টি পৃথিবী অনায়াসে ঢুকে যাবে। সূর্য থেকে দূরত্বের দিক থেকে পঞ্চম এই গ্রহ। আর পৃথিবী তৃতীয়। আটটি গ্রহ ছাড়াও সৌরজগতে রয়েছে হাজার হাজার গ্রহাণু, ধূমকেতু, উল্কার মতো মহাজাগতিক বস্তু। অনেক সময় সেগুলি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। এমন অনেক এধরনের বস্তু রয়েছে, যেগুলি আঘাত হানলে পৃথিবীর পরিণতি হবে মারাত্মক। কিন্তু এক্ষেত্রে রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বৃহস্পতি। এমনটাই অনুমান বিজ্ঞানীদের।
ডাইনোসরের কথা আমরা তো সবাই জানি। পৃথিবীতে একটা সময় রাজত্ব করত অতিকায় সব ডাইনোসররা। আজ শুধু পাওয়া যায় তাদের হাড়গোড়-কঙ্কাল। কারণ, আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগে এক ভয়ঙ্কর ঘটনায় ধ্বংস হয়ে যায় এই বিশালাকায় প্রাণীর দল। গবেষকদের অনুমান, পৃথিবীতে এক বিরাট আকারের গ্রহাণু আছড়ে পড়েছিল। এর জেরে মহাপ্রলয় শুরু হয়েছিল। তখনকার পৃথিবীর পরিবেশটাই বদলে গিয়েছিল। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে সাগর-নদীর জল গিয়েছিল শুকিয়ে। এটাই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির কারণ বলে অনেকেরই ধারণা। পৃথিবী তো আজকের নয়। পৃথিবীতে মানুষের বসবাস প্রায় ২০ লক্ষ বছর। আর এই গ্রহের বয়স মোটামুটি ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি বছর। এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথে পৃথিবীকে কিন্তু ধূমকেতু, গ্রহাণু ও উল্কার আঘাত খুব কমই সহ্য করতে হয়েছে। আর তার ফলেই আমাদের এই গ্রহে টিকে থাকতে পেরেছে প্রাণ। আর এটা সম্ভব হয়েছে বৃহস্পতির সুরক্ষা প্রাচীরের জন্য। বৃহস্পতি না থাকলে পৃথিবীতে আরও অনেক গ্রহাণু আঘাত করত। এর ফলে পৃথিবীর পরিবেশ প্রাণীজগতের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারত।
বৃহস্পতির ভর বিপুল। শক্তিশালী মাধ্যকর্ষণ। গ্রহরাজের অভিকর্ষ শক্তির জেরে পাশ দিয়ে ছুটে চলা গ্রহাণু, উল্কা বা ধূমকেতুগুলির গতিপথ বদলে যায়। তা না হলে হয়তো ওই সব বস্তুর কোনও কোনওটি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারত। শুধু গতিপথ পরিবর্তনই নয়, অনেক সময় ছোটখাট গ্রহাণু, উল্কাগুলিকে নিজের বুকেও টেনে নেয় বৃহস্পতি। সেজন্য বৃহস্পতিকে সৌরজগতের ‘ভ্যাকিউম ক্লিনার’ বলা হয়। এই তো তিন দশক আগে ১৯৯৪ সালে ধূমকেতু শুমেকার-লেভি ৯ আছড়ে পড়েছিল বৃহস্পতির দক্ষিণ মেরুতে। গ্যালিলিও মহাকাশযান ও হাবল স্পেস টেলিস্কোপে এর প্রভাব ধরা পড়েছিল। এই ভাবেই বুলেটের মতো তীব্রগতিতে ছুটে আসা ধূমকেতু, গ্রহাণু বা উল্কার আঘাত সহ্য করে পৃথিবীকে রক্ষা করে চলেছে বৃহস্পতি। আর এধরনের আঘাতের ঘটনায় পৃথিবীর তুলনায় প্রায় দু’হাজার গুণ বেশি ঘটে বৃহস্পতিতে। বছরে প্রায় ১২ থেকে ৪৫ বার ছোটখাট আকারের বস্তু নিজের বুকে টেনে নেয় বৃহস্পতি।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বৃহস্পতির অবস্থান সৌরজগতে একটা নির্দিষ্ট ভারসাম্য এনে দিয়েছে। আর এরফলেই পৃথিবীতে প্রাণের বসবাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি হয়েছে।