কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
মাকড়সার জাল বিবর্তনের ফল। বিবর্তন তত্ত্ব হল প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বিভিন্ন প্রজাতির জীবের বহু প্রজন্ম ধরে চলা পরিবর্তন। এই তত্ত্ব অনুসারে, মাকড়সা জল থেকে স্থল জগতে বসবাস শুরু করার পর আত্মরক্ষা ও খাদ্য সংগ্রহের জন্য জাল বোনার কৌশল রপ্ত করেছে। মাকড়সার পেটে রয়েছে গ্রন্থি। সেখান থেকে রেশমের মতো সুতো বের করে জাল বোনে তারা।
মাকড়সার শরীরের গ্রন্থি থেকেই কি রেশমের মতো সুতো বেরিয়ে আসে? উত্তর হল- না। মাকড়সার শরীরে থেকে জাল তৈরির তরল উপাদান বের হয়। সেগুলি বাতাসের সংস্পর্শে এসেই বিশেষ ধরনের সুতোয় পরিণত হয়। এই সুতোগুলো সাধারণত দু’ধরনের। আত্মরক্ষার জন্য এক ধরনের সুতো। আর শিকার ধরার জন্য অন্য ধরনের আঠালো সুতো। কিছু প্রজাতির মাকড়সা তো আরও অনেক ধরনের আলাদা আলাদা সুতো তৈরি করতে পারে। জালের নকশা কাটার জন্য ওদের গ্রন্থি থেকে যে তরল বেরয়, সেগুলি আসলে বিশেষ ধরনের প্রোটিন। মাকড়সার গ্রন্থিগুলো শরীর থেকেই এই প্রোটিন সংগ্রহ করে। যে কোনও প্রাণী ও গাছের শরীরে থাকে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক-প্রোটিন। যেমন- আমাদের নখ ও চুল প্রোটিন দিয়ে তৈরি। এই প্রোটিনকে বলা হয় কেরাটিন। মাকড়সাও এমনই প্রোটিন দিয়েই তাদের শরীরের গ্রন্থিতে রেশমের মতো সুতো তৈরি করে। গ্রন্থি থেকে সেগুলো পায়ের সাহায্যে বাইরে বের করে প্রয়োজনমতো
জাল বোনে।
আগেই বলেছি, এই জাল মাকড়সার পুরো জীবনচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে। মাকড়সা তাদের জাল দিয়ে অনেক ধরনের কাজ করে। এই জালেই থাকে শিকার ধরার সুতো। তারপর শিকারকে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে ফেলতে অন্য ধরনের সুতো। আবার শিকারের ছটফটানি বা বাতাসের ধাক্কায় যাতে সে নিজেই জালের বাইরে যাতে পড়ে না যায়, সেজন্য আলাদা সুতো। জালে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত, বাসস্থান তৈরি বা ডিম পাড়ার জন্যও আলাদা আলাদা সুতো তৈরি করতে পারে তারা।
মাকড়সার জালে আঠাযুক্ত ও আঠাহীন উভয় ধরনের সুতোই থাকে। নিজেরা যে সুতোর উপরে চলাফেরা করে, সেগুলি আঠাহীন। আঠাযুক্ত সুতোর ছোঁয়াচ এড়িয়ে অত্যন্ত নিপুণভাবে ওরা হেঁটে চলে বেড়ায়। সেজন্যই জালে আটকায় না মাকড়সা।এজন্য ওদের পাগুলোও বিশেষভাবে বিবর্তিত হয়েছে। মাকড়সার জালের সুতোতে কিছু আঠার মতো বিন্দু থাকে। সেগুলো শিকারকে আটকে দেয়। পোকামাকড় অর্থাৎ মাকড়সার শিকাররা তো অনেক সময় অত্যন্ত দ্রুত ছুটে আসে। তখন তো জাল ছিঁড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু স্থিতিস্থাপকতার জন্য সাধারণত ওদের জাল ছেঁড়ে না। শিকার এসে সজোরে ধাক্কা খেলে জালটি পিছনে চলে যায়। এভাবে জাল শিকারের গতি নিয়ন্ত্রণ করে। তারপর শিকার সুতোয় আটকে পড়ে। আর সেটি যতই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে, ততই জালে জড়িয়ে পড়ে।
মাকড়সার তৈরি সুতো মানুষের চুলের চেয়ে ১০০ গুণ পাতলা। কিন্তু এই পাতলা সুতোতেই লুকিয়ে বিপুল শক্তি। গোল্ডেন ওর্ব স্পাইডারের সুতো প্রকৃতপক্ষে ইস্পাতের চেয়েও শক্তিশালী। যদিও এই সুতো ইস্পাতের চেয়ে অনেক বেশি হাল্কা। একই ওজনের ইস্পাতের সুতো ও মাকড়সার সুতোর তুলনা করে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
মাকড়সার জালের শক্তির রহস্য লুকিয়ে আছে এর প্রোটিন
কাঠামোয়। এর সিল্ক প্রোটিনগুলো লম্বা শিকলের মতো সাজানো। সেগুলো পরস্পরের সঙ্গে সুদৃঢ়ভাবে যুক্ত। তাই এই সুতো অনেক টানলেও শিকলগুলো আলাদা করা যায় না। বরং তা ইলাস্টিকের মতো বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে শক্তিও ধরে রাখে। এই অদ্ভুত শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতার কারণেই শিকার একবার জালে পড়লে তা ছিঁড়ে বেরতে পারে না।