বিজ্ঞান। শব্দটি শুনলে অনেকেরই মনে হয় এবার তাহলে বুঝি একগুচ্ছ সমীকরণ, ফর্মুলা, যৌগ এবং গোলমেলে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়। বরং সত্যিটা হল, বিজ্ঞান আসলে কৌতূহলের দরজা খোলার চাবি! অথবা বিজ্ঞান হল এমন একটি নৌকা যার উপর চেপে হারিয়ে যাওয়া যায় বিশালাকায় জ্ঞানসাগরের বুকে! বিজ্ঞান আসলে অসীম এক জিজ্ঞাসার জায়গা, যেখানে জ্ঞান আহরণের কোনও সীমা নেই। আমরা চারপাশে যা কিছু ঘটতে দেখি, যা কিছু বিস্ময়কর বোধ হয়, সেই সবকিছুর উত্তর রয়েছে বিজ্ঞানের কাছে! বিজ্ঞান আসলে জীবন এবং মহাবিশ্বের সবকিছু জানার এক উপায়। প্রকৃতি থেকে শুরু করে জীবনের কোনও ঘটনা কেন ঘটে ও কেন নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতিতেই ঘটে— তার ব্যাখ্যা দেয় বিজ্ঞান। যাইহোক, সোনি বিবিসি আর্থ-এর শো ‘গট সায়েন্স’ নামক অনুষ্ঠানে রোজকার জীবনে ঘটে যাওয়া এমনই নানা ঘটনার ব্যাখ্যা করবে বিজ্ঞানের সাহায্যে। এছাড়া প্রতিটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করে তা নিয়েও আলোচনা হবে। ঠিক কেমন হতে চলেছে ওই অনুষ্ঠানটি, তা বোঝার জন্য কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ রইল—
কুকুর কীভাবে মানুষের ভাষা বোঝে?
তোমরা কখনও ভেবে দেখেছ যে, মানুষের গলার শব্দ শোনার পর কুকুরের মাথায় ঠিক কী ঘুরপাক খায়? তবে জেনে রাখো একটা মজার বিষয়। জানা গিয়েছে, কুকুর ভালোভাবেই মানুষের ভাষা বোঝে! তবে সেই সব কথার প্রকৃত অর্থ ঠিক কী তা তারা বোঝে না। তবে কথা বলার ধরনে বোঝে মানুষটি রেগে কথা বলছে নাকি ভালোবেসে! কীভাবে তারা মানুষের কথা ধরতে পারে? গবেষণায় জানা গিয়েছে, ব্রেনের রাইট হেমিস্ফিয়ার বা মস্তিষ্কের ডানদিকের অংশে কুকুর ভাষার বিশ্লেষণ করে। অন্যদিকে কথা বলার ভঙ্গি ও আবেগ বিশ্লেষণ করে ব্রেনের লেফট হেমিস্ফিয়ার বা মস্তিষ্কের বাম অংশের সাহায্যে! কুকুরের ব্রেনের এই বিশেষ ধরনের ক্ষমতার কারণেই তারা শব্দের সঙ্গে স্বরের ওঠানামাকে মিলিয়ে তার মানে বোঝার চেষ্টা করে। অর্থাৎ মানুষ কী বলছে আর কীভাবে বলছে তা কুকুর বুঝতে পারে। এমনকী আলাদা আলাদা কথার মানেও যে আলাদা তাও তারা বোঝে! তাই পরেরবার বানিয়ে বানিয়ে নয়, বরং সৎভাবে কুকুরের প্রশংসা করবে। কারণ ওরা ঠিক বুঝতে পারবে তুমি সত্যি তারিফ করছ নাকি মিথ্যে!
মাছি মারা সহজ নয় কেন?
নাকের কাছে ভনভন করছে মাছি! একটা কাগজের তাড়া নিয়ে টুক করে মারতে গেলে, অমনি সে উড়ে পালাল। আবার একবার চেষ্টা করলে, ফের উড়ে পালাল! কখনও ভেবে দেখেছ, কেন মাছি মারা এত কঠিন কাজ? আসল উত্তরটা লুকিয়ে রয়েছে ওদের চোখে! মাছির চোখ যৌগিক প্রকৃতির। প্রায় ৬ হাজার ওমাটিডিয়াম রয়েছে মাছির। ফলে মাছি প্রায় ৩৬০ ডিগ্রি কোণে সমস্ত কিছুই দেখতে পায়! এখানেই শেষ নয়। মাছির চোখ এত দ্রুত কাজ করে যে চারপাশে সমস্ত কিছুই সে ‘স্লো মোশনে’ বা ধীর লয়ে ঘটতে দেখে! কতটা ধীরে? মানবঅক্ষির তুলনায় অন্তত চারগুণ ধীরগতিতে ঘটতে দেখে মাছি! ঠিক এই কারণে যতই তাড়াতাড়ি মাছিকে মারার চেষ্টা করো না কেন, মাছি তোমার চাইতেও দ্রুতগতিতে উড়ে যায়!
কুকুরকে চকোলেট খাওয়াতে নেই কেন?
জানলে অবাক হবে, বেশ কিছু খাদ্য মানুষের খুব পছন্দ হলেও সেগুলি পোষ্যের জন্য বিষাক্ত প্রমাণিত হতে পারে! এমনই এক খাবার হল চকোলেট! কফির মতো চকোলেটেও বেশ কিছু রাসায়নিক থাকে। এগুলি হল— থিওব্রোমাইন, ক্যাফিন ইত্যাদি। অতিরিক্ত পরিমাণে এই রাসায়নিক কুকুরের পেটে গেলে তা কুকুরের পক্ষে ভয়ঙ্কর হয়ে যায়। কুকুরের পেটে মাত্র ৩০০ মিলিগ্রাম থিওব্রোমাইন গেলে কুকুরের বমি হতে থাকে। হার্টের গতি বেড়ে যায়, এমনকী শরীরের অন্দরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে! এমনকী হতে পারে খিঁচুনি! এই কারণেই কুকুরকে চকোলেট খাওয়ানো একেবারেই উচিত নয়।
ছারপোকা কামড়ায় কেন?
আপেলের বীজের আকারের ছারপোকা কীভাবে কামড় দিয়ে রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে ভুক্তভোগীরা জানেন। সবচাইতে অবাক ব্যাপার হল যে কোনও জায়গায় এরা বেঁচে থাকতে পারে! বিছানার চাদর, তোশকে দিব্যি বংশবৃদ্ধি করে। এমনকী ট্রেন আর বাসের সিটেও আরাম করে বাঁচতে পারে এরা। প্রশ্ন হল কেন এরা কামড়ায়? শুধু মানুষের রক্ত পান করবে বলে? মানুষের রক্ত উষ্ণ। আর উষ্ণ রক্তের মানুষ হল এই পোকার যোগ্য সঙ্গী। কারণ ছারপোকার ডিম পাড়ার জন্য দরকার পড়ে মানুষের রক্তের। অনেকে বলেন, রাতেও ছারপোকা কামড়ায়। আসলে অন্ধকারে আমরা চোখে দেখতে পাই না ঠিকই, তবে ছারপোকার শরীরে বিশেষ ধরনের সংবেদনশীল ব্যবস্থা থাকে যা দিয়ে ওরা রাতেও বুঝতে পারে কোথায় মানুষ রয়েছে! কীভাবে? আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করি। ফলে কোথায় কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেশি রয়েছে তা ওরা বুঝতে পারে। সেখানেই ছুটে আসে আর মানুষ আছে বুঝলেই রক্ত চুষে খায়! তাই ঘনঘন বিছানার চাদর কাচতে বলা হয়। এছাড়া বালিশ-তোশক রোদে দিতে বলা হয়।
সুতরাং তোমরা বুঝতেই পারছ, বিজ্ঞান ঠিক কতটা মজাদার হতে পারে! তাই আর দেরি করার প্রশ্নই নেই। নিজের চারধারে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার জবাব পেতে আর মনের ভিতরের কৌতূহলকে জাগিয়ে তুলতে অবশ্যই দেখ সোনি বিবিসি আর্থ-এর অনুষ্ঠান ‘গট সায়েন্স।’