তোমরা সবাই জানো, জনসংখ্যার নিরিখে পৃথিবীতে ভারতের স্থান একেবারে ওপরের দিকে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ভারতের মতো এত বড় দেশে অনেক বেশি জনঘনত্ব হওয়া সত্ত্বেও বিশাল বিস্তৃত এলাকা জুড়ে রয়েছে পাহাড়, পর্বত, বরফ, নদ- নদী, সমুদ্র, মরুভূমি ঘন জঙ্গল প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদ।
বয়স তখন ১৬। স্কুল থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন রিচার্ড ব্র্যানসন। আসলে লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন না। পরীক্ষায় খারাপ ফলের জন্য তাঁকে স্কুল ছাড়তে হয়। যদিও দোষটা পুরোপুরি তাঁর ছিল না। ভুগছিলেন ডিসলেক্সিয়া রোগে। রোগের জন্য সংখ্যা বা কোনও ইংরেজি অক্ষর আর পাঁচজনের মতো সোজাভাবে লিখতে পারতেন না ব্র্যানসন।
কোভিড পরিস্থিতিতে হাজারো বিধিনিষেধের গেরোয় আটকে আমাদের জীবন। স্কুল বন্ধ, বন্ধ বাইরে বেরনো, খেলাধুলো। তারমধ্যেই তিথি মেনে হাজির রথযাত্রা। কীভাবে হবে এবারের রথযাত্রা? ছোট্ট বন্ধুদের কার কী পরিকল্পনা তারাই লিখে জানিয়েছে। দেখো তো তোমাদের সঙ্গে মেলে কি না।
তোমরা কি জানো, সরীসৃপ প্রাণীরা প্রায় ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে বসবাস করছে। তারা ডাইনোসরদেরও আগে থেকে পৃথিবীতে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অন্যতম কারণ হল এরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে শারীরিক ও আচরণগতভাবে অভিযোজিত করতে পারে।
তোমরা সবাই নিশ্চয়ই ভালো আছো। মন দিয়ে নিজের লেখাপড়া যত্ন নিয়ে শিখছ। নাচ-গান-আঁকা-বই পড়া-গান শোনা-আবৃত্তি করা- বাড়ির সবার সঙ্গে গল্প করা আর ৭ -৮ ঘণ্টা লেখাপড়া করা, খেলা, শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত ঘুমানো একটি আদর্শ সুন্দর জীবন গড়ে দেবে।
গত দেড় বছরের মধ্যেই আমাদের চেনা পৃথিবীটা কত দ্রুত পাল্টে গেল। চেনা মানুষ অচেনা হয়ে গেল, বহু প্রিয় মানুষ চিরতরে বিদায় নিল, আরও হয়তো অনেকেই নেবে। করোনার প্রথম ঢেউ সামলে নিয়ে যেই সবাই একটু গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় আবার সবাই বেসামাল হয়ে গেল।
বিজ্ঞান। শব্দটি শুনলে অনেকেরই মনে হয় এবার তাহলে বুঝি একগুচ্ছ সমীকরণ, ফর্মুলা, যৌগ এবং গোলমেলে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়। বরং সত্যিটা হল, বিজ্ঞান আসলে কৌতূহলের দরজা খোলার চাবি!
ম্যাজিক মানে শুধুই খেলা? পড়ার লেশমাত্র নেই? মোটেও না, ম্যাজিকে এবার লেখাপড়ার বিষয়গুলোও ভরে দেওয়া হল। পড়াশোনার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর দারুণ ম্যাজিক দেখাবেন থিম ম্যাজিশিয়ান সোমনাথ দে। এখন থেকে প্রতি মাসের একটা করে রবিবার তোমাদের জন্য থাকবে ম্যাজিকে লেখাপড়া। এবার পদার্থবিদ্যা। ম্যাজিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন কমলিনী চক্রবর্তী।
ছোট বেলা থেকেই বন্ধু হয়েছে ইছামতী।যেমন নদী তেমন তার চেহারা।জোয়ার-ভাটার খেলা চলে সব সময়। এপারে টাকি তো ওপারে বাংলাদেশ। মাঝিরা ইলিশ ধরলেই বিক্রি হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে। টুটুলের সঙ্গে তখনও ঠিক আলাপ হয়নি শাকিরের। বড্ড মুখচোরা ছেলে।
আমাদের এই পৃথিবীতে মহাসাগরীয় দৈত্য থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র পোকামাকড় পর্যন্ত সব প্রাণী বাস করে। সহজ ভাষায় একেই জীবের বৈচিত্র্য বলা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই জীব বৈচিত্র্যই ক্রমশ বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে।
তোমাদের জন্য চলছে জনপ্রিয় বিভাগ মার্কশিট। এই বিভাগে থাকছে পরীক্ষায় নম্বর বাড়ানোর সুলুক সন্ধান। এবারের বিষয় বাংলা। পরামর্শে বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষিকা সংহিতা চক্রবর্তী।
জাদুঘরে ঢুকলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। আমরা ইতিহাস বইতে যা কিছু পড়েছি, মনে হয় সেগুলোই জীবন্ত হয়ে উঠেছে চোখের সামনে। এ এক অদ্ভুত জাদু! লিখেছে তোমাদের বন্ধুরা।
বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
আমাদের এই দেশকে গড়ে তোলার জন্য অনেকে অনেকভাবে স্বার্থত্যাগ করে এগিয়ে এসেছিলেন। এই কলমে জানতে পারবে সেরকমই মহান মানুষের ছেলেবেলার কথা। এবার বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। লিখেছেন চকিতা চট্টোপাধ্যায়।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আজ যে বাংলা ভাষায় কথা বলছি সে জন্য আমরা স্যার আশুতোষের নিকট কৃতজ্ঞ ... তিনি বাংলা ভাষাকে সে যুগে ইংরেজির সমান মর্যাদা দেন।’স্যার আশুতোষ এক বিরল প্রতিভা।! যাঁর জন্ম হয়েছিল ১৮৬৪ সালের ২৯ জুন, কলকাতার বউবাজারে বাবা প্রসিদ্ধ চিকিৎসক গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও মা জগত্তারিণীদেবীর ঘরে। আশুতোষের পড়াশুনো শুরু হয়েছিল চক্রবেড়িয়া ও সাউথ সুবার্বান স্কুলে। পণ্ডিতবংশে জন্ম, তাই তাঁর রক্তেই ছিল পাণ্ডিত্য। ছেলেবেলায় স্বপ্ন ছিল সে যুগের বিখ্যাত বৃত্তি ‘প্রেমচাঁদ - রায়চাঁদ’ পাওয়া ও হাইকোর্টের জজ হওয়া! কৈশোরে কলকাতার এক বইয়ের দোকানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। বিদ্যাসাগর এক কপি ‘রবিনসন ক্রুশো’ বইতে সই করে উপহার হিসেবে কিশোর আশুতোষের হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‘মনোযোগ দিয়ে পোড়ো।’ সেই আদেশ তিনি সারাজীবন পালন করেছিলেন! তাই তো দেখি, এন্ট্রান্সে দ্বিতীয়, এফএ-তে তৃতীয়, বিএ এবং এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন তিনি! পূর্ণ হয় তাঁর আশৈশবের স্বপ্ন! পান ‘প্রেমচাঁদ- রায়চাঁদ’ বৃত্তি! কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনিই প্রথম ডবল এমএ। এরপর ১৮৮৮ সালে পাশ করলেন ওকালতি। ১৮৯৪ সালে হলেন ‘ডক্টর অফ ল’ এবং ‘টেগোর ল লেকচারার’ রূপে ‘ল অফ পারপিটুইটিজ’-এর প্রামাণ্য বইও লিখলেন। স্কুলজীবনেই ‘কেমব্রিজ মেসেঞ্জার অফ ম্যাথামেটিকস’-এ দুরূহ গাণিতিক সমস্যার সমাধান প্রকাশ করলেন! ‘ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস’ ও ‘ইকুয়েশান’-এ তাঁর সমাধানক্ষমতা বিদেশেও স্বীকৃত হল!
‘ফ্রিডম ফার্স্ট, ফ্রিডম সেকেন্ড, ফ্রিডম অলওয়েস’ -এ শুধুমাত্র তাঁর মুখের কথাই ছিল না, নিজের জীবনে বারবার তা প্রমাণ করেও দেখিয়েছেন তিনি! স্যার আশুতোষ সবক্ষেত্রে দাবি করতেন ইংরেজদের সমমর্যাদা। বিদ্যাসাগরের একনিষ্ঠ ভক্ত ও প্রেসিডেন্সি কলেজে নরেন্দ্রনাথ দত্ত অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দের সহপাঠী স্যার আশুতোষ নিজের জাত চেনাতেন নিজস্ব ভঙ্গিমায়!
একবার, তিনি ট্রেনে চড়ে চলেছেন আলিগড়। সহযাত্রী এক মিলিটারি সাহেব। আশুতোষ ঘুমিয়ে পড়তেই তাঁর নাগরাজোড়া ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল সাহেব। আশুতোষ টের পেলেন কিন্তু কিছু বললেন না সাহেবকে। এরপর সাহেব ঘুমোনো মাত্র তিনি সাহেবের কোটটা বাইরে ফেলে দিলেন! ঘুম ভেঙে সবটা বুঝে সাহেব চিৎকার শুরু করামাত্র আশুতোষ বললেন, ‘তোমার কোট আমার জুতো খুঁজতে গেছে!’
স্যার আশুতোষের চিরস্থায়ী কৃতিত্ব শিক্ষাক্ষেত্রে। একাধারে তিনি ছিলেন আইনজীবী, বিচারক ও স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ! ১৯০৪ সাল থেকে আমৃত্যু একদিকে যেমন তিনি ছিলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, অন্যদিকে, তেমনই ১৯০৬ থেকে ১৯১৪ সাল পযর্ন্ত পরপর চার টার্মে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও ছিলেন। প্রথম থেকেই তাঁর প্রচেষ্টা ছিল মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রসারের। তাই এ বিষয়ে প্রথম প্রস্তাবকও হন তিনিই। আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো ‘গোলদীঘির গোলামখানা’ অর্থাৎ ব্রিটিশদের চাকর তৈরির কারখানা! কিন্তু তিনি এসেই ঘটিয়ে ফেললেন ‘রেনেসাঁ’! শুধু প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর আমলেই সেখানে শুরু হল এমএ ক্লাসের পঠনপাঠন। তিনি ছয়টি নতুন স্নাতকোত্তর বিভাগ চালু করলেন— ভাষাবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ববিজ্ঞান, ব্যবহারিক মনোবিজ্ঞান, ফলিত রসায়ন, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং ইসলামীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি। ভারতবর্ষের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়তেই সবচেয়ে বেশি বিভাগ ও ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা তাঁরই একার প্রচেষ্টার ফল। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিদ্যোৎসাহী ধনীদের কাছ থেকে অনুদানও জোগাড় করতেন তিনিই! আবার দেশ ও বিদেশ থেকে খুঁজে নিয়ে আসতেন শিক্ষকও— সিভি রামন, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মেঘনাদ সাহা, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, হাসান সুরাবর্দী, অক্সফোর্ডের অধ্যাপক পল ভিনোগ্রাফড, ফরাসি অধ্যাপক সিলভা লেভি প্রমুখদের। প্রশ্নপত্র যাতে ছাত্রোপযোগী হয় সেদিকেও ছিল তাঁর এমনই সজাগ দৃষ্টি যে এ জন্য গণিতের অধ্যাপক গৌরীশঙ্কর দে-কে দিয়ে ঘড়ি ধরে প্রশ্নপত্রের অঙ্ক আগে কষিয়ে পরীক্ষা করে নিতেন! পরাধীন ভারতবর্ষের বুকে দাঁড়িয়েও তিনি একক নির্ভীক প্রচেষ্টায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বয়ংশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন! ১৯১১ সালে তিনি ‘নাইট’ উপাধি পান।
১৯২৩ সালে লর্ড লিটন গভর্নর হয়ে এসে, যখন চেষ্টা করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আবার সরকারি কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার, তখন রাজশক্তির সঙ্গে প্রবল বিরোধিতা হল স্যার আশুতোষের! গভর্নর আবার তাঁকে শর্তসাপেক্ষে উপাচার্য পদে আহ্বান জানানো মাত্রই তিনি তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন! তাঁর এই তেজের কারণেই ভারতবাসী স্যার আশুতোষকে ‘বাংলার বাঘ’ আখ্যায় ভূষিত করল!
‘জাতীয় সাহিত্য’ নামে তাঁর প্রবন্ধ - সংগ্রহ সাহিত্যে তাঁর বিশিষ্ট অবদান। তিনি দক্ষ ছিলেন ফরাসি, রুশ ও পালি ভাষাতেও। বিদ্যাসাগরের আদর্শে নিজের বিধবা কন্যার পুনর্বিবাহও দিয়েছিলেন!১৯২৪ সালের ২৫ মে পাটনায় তাঁর জীবনাবসান হয়।
