আমাদের এই পৃথিবীতে মহাসাগরীয় দৈত্য থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র পোকামাকড় পর্যন্ত সব প্রাণী বাস করে। সহজ ভাষায় একেই জীবের বৈচিত্র্য বলা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই জীব বৈচিত্র্যই ক্রমশ বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। চিন্তার বিষয় হল—যদি তাড়াতাড়ি কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এই পরিবেশ সংক্রান্ত সঙ্কট আমাদের সকলকেই ভীষণভাবে দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাবিত করবে। এরকম এক জরুরি বিষয় নিয়ে সোনি বিবিসি আর্থ একটি দারুণ শোয়ের আয়োজন করেছে। শোয়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এক্সটিংকশন: দি ফ্যাক্টস’। কীভাবে এবং কেন আমাদের এই বাস্তুতন্ত্র বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে চলেছে, সে সম্বন্ধে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ছবি তুলে ধরা হবে এই শোটিতে। জানতে পারবে অনেক অজানা কাহিনী। আশা করা যায়, এরকম একটি ভিন্ন ধরনের শো দেখে তোমাদের অন্যরকম অভিজ্ঞতা হবে। 

বৃক্ষচ্ছেদন
 গাছপালা থেকে আমরা প্রায় সব কিছুই পেয়ে থাকি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, তোমাদের সবারই জানা বায়ুমণ্ডল থেকে শ্বাস নেওয়ার জন্য আমরা যে অক্সিজেন পেয়ে থাকি তার সমস্তটাই আসে গাছপালা থেকে! গাছ আমাদের বাস্তুতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তোমরা হয় তো জানো না, আমরা বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে ফেলেছি, যা বাস্তুতন্ত্রের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবী  পৃষ্ঠের প্রায়  তিনের চার ভাগ পরিবর্তন করে ফেলেছি। এই পরিবর্তনের ফলেই অনেক প্রাণী বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা তাদের  বাসস্থানকেও হারিয়ে ফেলেছে। দুঃখের বিষয়, মানুষের জন্য  প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পরিমাণ জমি থাকা সত্ত্বেও তারা প্রতি বছর প্রায় ৩.৮ মিলিয়ন হেক্টর বনাঞ্চল ধ্বংস করে পরিষ্কার করে ফেলছে! এটিই আমাদের গ্রহের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। শুধু তাই নয়, এর ফলে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী তাদের প্রাকৃতিক আবাস থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়।

 অতিরিক্ত মাছ ধরা
গত প্রায় ৪০ বছরে বিশ্বে মাছ ধরার চাহিদা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবাক লাগলেও সত্যি, এখন মাছ ধরা একটি শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। অনেক সময় আবার মাছ ধরার ব্যাপারটি বড় বড় কর্পোরেশন দ্বারাও পরিচালিত হয়ে থাকে। ফলে যত দৈত্যাকার এবং প্রাপ্তবয়স্ক মাছগুলিকে ধরে ফেলা হচ্ছে, ততই জলে মাছের ডিমের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এর ফলে খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের মাছের সংখ্যা ক্রমশ ভীষণভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ফলস্বরূপ মহাসাগরগুলিতে মাছের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তাই অতিরিক্ত মাছ ধরা একটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, যার জন্য সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলছে। 

 দূষণ
পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংসের পিছনে অন্যতম কারণ হল লাগামহীন দূষণ। দূষণের সবচেয়ে বড় উৎস হল, অতিরিক্ত উৎপাদন এবং খনিজ শিল্প। আমরা রোজকার জীবনে এমন কিছু পণ্য ব্যবহার করি যেগুলি বিভিন্নভাবে আমাদের বায়ুমণ্ডল, মাটি ও জলকে দূষিত করে। এই দূষিত পদার্থগুলি প্রাণীর ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। ফলে বহু প্রজাতির প্রাণী আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। শুধু তাই নয়, এভাবে ক্রমশ জীব বৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। 

জলবায়ু পরিবর্তন
পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ হয়ে উঠছে। জীব বৈচিত্র্যের ভারসাম্যহীনতা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম একটি কারণ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কিছু প্রাণী ক্রমশ তাদের স্বাভাবিক বাসস্থানে টিকে থাকতে পারছে না। ফলে তারা উচ্চতর শীতল জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ক্রমশ পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন প্রাণীদের কাছে অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। 
তোমরা ‘এক্সটিংকশন : দি ফ্যাক্টদ’ শো-এ আরও অনেক আকর্ষণীয় অজানা তথ্য জানতে পারবে। দেখতে পাবে অনেক না দেখা ছবি। আশা করি সোনি বিবিসি আর্থ-এর এই শো তোমাদের খুব ভালো লাগবে।