Bartaman Patrika
গল্পের পাতা
 

অঙ্গুরীমাল
সঞ্জয় রায়

বাবার পাশে বসে বিনোদ দেখত পুকুর ধারে ভেজা মাটি খুঁড়তেই কিলবিল করতে থাকা ক্ষুদ্র কীটগুলো উঠে আসছে। বাবা বলত, ‘এগুলো মাছের খাবার।’ তারপর কিলবিল করতে থাকা সরু লম্বা লম্বা কীটগুলোকে বাবা একটা ভাঁড়ে মাটির ভিতর জমিয়ে রাখত। সরু লম্বা কীটগুলোর দীর্ঘ শরীরটা আংটির মতন গোলাকার খণ্ড জুড়ে জুড়ে যেন তৈরি হয়েছে। সামান্যতম স্পর্শ করলেই ওগুলো এক্কেবারে গুটিয়ে গোল্লা পাকিয়ে যেত। বিনোদ ওগুলোর গায়ে হাত দিয়ে বেশ মজা পেত। ওরা কেমন সুন্দর গোল্লা পাকিয়ে দেহটা ছোট্ট করে নেয়। বাবা বলত,  ‘এগুলোকে বলে কেঁচো।’ তারপর বাবা কী করবে তার সবটুকুই বিনোদের জানা। এরপর ওগুলোর শরীর ফুটো করে বঁড়শিতে গেঁথে দিয়ে পুকুরের শান্ত জলে ছিপ ফেলে একদৃষ্টে ফাতনার দিকে চেয়ে বাবা বসে থাকবে। দুপুরের নিস্তব্ধ প্রকৃতি জুড়ে কয়েকটা পাখির ডাক খালি চারপাশটা একটু মাতিয়ে রাখত। মাঝেমধ্যে কয়েকটা মাছরাঙা পুকুরের উপর ঝুঁকে পড়া গাছগুলোয় এসে বসত। বিনোদ বাবার পাশে ধৈর্য ধরে বসে থাকত ফাতনায় টান পড়ার অপেক্ষায়। ছটফটে বিনোদ ভাবত বাবার কী ধৈর্য! কতক্ষণ ধরে একদৃষ্টে ফাতনার দিকে চেয়েই বসে আছে। তারপর একসময় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ধরা দিত পেল্লাই সাইজের এক রুই মাছ। বিনোদ মাছ দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠত। তারপর ভাঁড় থেকে আরেকটা গুটিয়ে থাকা কেঁচো বের করে বঁড়শির মুখে আবারও গেঁথে দিত।
বিনোদ পরবর্তী সময়ে ওদের পাঠ্য বই পড়ে জেনেছে আংটির মতো গোলাকার খণ্ড জুড়ে থাকা শিরদাঁড়াহীন কেঁচোর দল চাষিদের খুব উপকারী বন্ধু। নীচের মাটি উপরে তুলে এনে, আবার উপরের মাটি নীচে দিয়ে এরা চাষের জমি উর্বর করে। বিনোদ ভাবে চাষির উপকারী বন্ধুটিকে বাবা আবার অন্য এক উপকারে ব্যবহার করছে। সত্যিই, একটা ক্ষুদ্র কীট কতজনেরই না উপকারী বন্ধু হতে পারে! তবে বিনোদ বাক্য গঠনে ‘কেঁচো’ শব্দটার ব্যবহার শুনেছিল পরাণ মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে। পরাণ মাস্টার ওদের ইতিহাস পড়াতেন। হাতে থাকত একটা ছড়ি। পড়া না পারলেই মাস্টারমশাই সেই ছড়ির ঘায়ে সারাটা শরীর একেবারে জ্বালিয়ে দিতেন। পরাণ মাস্টারকে খুবই ভয় পেত বিনোদ। পড়া ধরবার জন্য  মাস্টারমশাই বিনোদকে উঠে দাঁড়াতে বললেই ও কেমন যেন ভয়ে একেবারে কুঁকড়ে যেত। মাস্টারমশাই বিনোদের অবস্থা দেখে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে চেঁচিয়ে উঠতেন, ‘আমি তোকে বেঞ্চে উঠে দাঁড়াতে বললেই তুই কেঁচোর মতো গুটিয়ে যাস কেন বলত?’
বিনোদ ফ্যাকাসে মুখখানা নিয়ে খালি মাস্টারমশাইয়ের দিকে চেয়ে থাকত।
***
ছেলেবেলা থেকেই বাবা ছিল বিনোদের কাছে একেবারে বন্ধুর মতো। বাবার সঙ্গে ঘুরতে ফিরতে পড়াশোনার বাইরেও বিনোদ কত কিছু শিখেছে। এই যে আজ বিনোদের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা, সেই  মঞ্চের ভিতটা তো বাবা-ই তৈরি করে দিয়ে গেছে । মা সবসময় বাবাকে বলত,  ছেলেটাকে আদর দিয়ে আর মাথায় তুলো না। মায়ের কথা শুনে বাবা হাসত। বিনোদ আজ বুঝতে পারে সেদিন বাবা ঠিকই মনে করতেন যে, তিনি ছেলেকে সঠিক পথেই পরিচালিত করছেন। তবে, বিনোদের জীবনটা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর থাকলেও ওর কুঁকড়ে থাকা স্বভাবটা জীবন থেকে ছেড়ে গেল না। অবশ্য এই স্বভাবের জন্য ও অনেক জায়গাতেই নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখতে পেরেছে। এই যেমন সেদিন অফিসের ঘটনাটাই ধরা যাক। অফিস দেখভালের দায়িত্বে থাকা শ্রীমন্তের পরেই সেকেন্ড ম্যান হিসাবে বিনোদ অফিসে ঢোকে। সেদিন বিনোদ অফিসে ঢুকেই আলমারির এক পাশে টেবিলে রাখা টাকার বান্ডিলটা দেখেছিল। আচমকা একটা টাকার বান্ডিল পড়ে থাকতে দেখে ও কেমন যেন মন থেকে কুঁকড়ে গেছিল। বিনোদের ভীত সন্ত্রস্ত চোখ মুখ দেখেই শ্রীমন্ত বলে উঠেছিল,  ‘আরে, এই সাত সকালে কী হল বিনোদদা?’
বিনোদের মুখ থেকে কথা সরছিল না। কোনওরকমে তোতলে গিয়ে বলতে পেরেছিল, ‘ন্-ন্-না, মা-মা-মানে ওইখানে এ-এ-একটা,  নো-নো-নোটের বা-বা-বা- বান্ডিল প-প-পড়ে আছে!’
শ্রীমন্ত চোখ ঘুরিয়ে দেখেছিল, সত্যিই তো একটা নোটের বান্ডিল! তারপর সে বিনোদকে বলেছিল, ‘তা আপনার এত ঘাবড়াবার কী আছে? আমি বাবুকে বলে দেব। হয়তো রাতে অফিস থেকে বেরনোর সময় আলমারিতে ঢোকাতে ভুলে গেছেন।’
এমন  সামান্য সব বিষয়েই বিনোদের মনটা কেঁচোর মতো এক্কেবারে গুটিয়ে যায়। মাঝে মাঝে বিনোদের মনে হয় সত্যিই বোধহয় ‘সাহস’ শব্দটা ওর জীবনের অভিধানে নেই! 
তবে এক সময় কলেজে ইউনিয়ন করা ছেলে বিনোদ বেশ ডাকাবুকোই ছিল। প্রিন্সিপালের কাছে নানান দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে বিনোদই ছাত্র ইউনিয়নে নেতৃত্ব দিত। তবে কলেজে বান্ধবীদের সামনে পড়লেই কেমন যেন কুঁকড়ে যেত। ওর বন্ধু মিজানুর একদিন বলেছিল, ‘আচ্ছা বিনোদ,  তুই মহিলা দেখলেই একেবারে কেঁচোর মতো গুটিয়ে যাস কেন বলত?’ সেদিন বিনোদ বন্ধুর ওই কথার কোনও উত্তর দিতে পারেনি।
খুশির সঙ্গে প্রথম আলাপের দিনেও একেবারে গুটিয়ে ছিল বিনোদ। তারপর যখন একটু একটু করে ওরা দু’জনে পরস্পর কাছাকাছি এল, তখন একদিন খুশি বিনোদকে বলেছিল, ‘পুরুষ মানুষদের এত কেঁচোর মতো গুটিয়ে থাকলে চলে! তাহলে মেয়েরা কী করবে!’
সেদিন খুশির কথায় বিনোদ বড্ড লজ্জা পেয়ে গিয়েছিল। তারপর খুশির কাছে ওর বান্ধবীদের জীবনসংগ্রামের অনেক কথাই শুনেছে। খুশি বলেছিল, মেয়ে হিসেবে এই সমাজে ওরাও একদিন কেঁচোর মতো গুটিয়েই থাকত। বিনোদ জানে, খুশি মানুষ হিসেবে ওর থেকে অনেক বেশি সাহসী। একদিন খুশির সঙ্গে সিনেমা দেখতে গিয়েই ও সেটা টের পেয়েছিল।
তখন খুশি আর বিনোদের প্রেম জমে একদম ক্ষীর। ছুটির দিন পেলেই ওরা দু’টিতে সিনেমা হলে যেত। এমনই একদিন একটি হলে সিনেমা শেষে বাইরে বেরতে গিয়ে বিনোদের চোখে পড়েছিল এক ছিনতাইবাজ একটি মেয়ের ভ্যানিটি ব্যাগে ব্লেড চালাতে যাচ্ছে। ঘটনাটা দেখেই বিনোদ কেমন যেন মনে মনে কুঁকড়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র অস্ফুটে কিছু শব্দ বলে খুশিকে একটা ধাক্কা দিয়েছিল। খুশি ততক্ষণে দেখে নিয়েছে ছিনতাইবাজটা মেয়েটার ব্যাগ সাফাই করতে চলেছে। তৎক্ষণাৎ চোরটার উপর একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল খুশি। ভিড়ের মাঝে চোর বাবাজি আর পালাতে না পেরে সেদিন ধরা পড়ে গিয়েছিল খুশির তৎপরতায়। বিনোদের গুটিয়ে থাকা মনটা খুশিকে শাবাশ জানিয়েছিল। এই খুশিই জীবনের প্রথম রাতটিতে বিনোদকে বলেছিল, ‘জীবনটা জুড়ে খালি কেঁচোর মতো অমন করে গুটিয়ে থেকো না।’
খুশির কথায় বিনোদ বরাবরই লজ্জা পায়। তবুও ভয়ে ভয়ে চলতে থাকা মনটায় কিছুতেই সাহস করে উঠতে পারে না।
***
খুশি-বিনোদের বিবাহিত জীবন পঁচিশ বছর পার করল। বাবা-মা কবেই বিনোদের জীবন ছেড়ে চলে গেছেন। বিনোদের একমাত্র ছেলে কিঙ্কর বেঙ্গালুরুতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। নির্ঝঞ্ঝাটের সংসারে স্বামী-স্ত্রী বেশ বহাল তবিয়তেই আছে। অফিস ফেরত বিনোদ শিঙাড়ার ঠোঙা নিয়ে বাড়িতে ঢোকে। সন্ধ্যার নিঝুম পরিসরে বারান্দায় বসে  দু’জনেই চায়ের পেয়ালায় ঠোঁট ছোঁয়ায়। বিনোদ বলে, ‘জানো, জীবনে কিছু কিছু জিনিস না পাওয়াতেই মনে হয় জীবনটা অনেক সুখের। ওই যে গো অনুপমের গানটার মতো। সব পেলে বুঝি জীবনটা নষ্টই হয়ে যায়!’
বিনোদের কথায় খুশি বলে ওঠে,  ‘তুমি এমন করে বলছ কেন! জীবনে সবটুকু পেলেই যে জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল তেমনটা বোধহয় নয়। তবে হ্যাঁ, এটা তো ঠিক যে, কোনও কিছু পাওয়ার ক্ষেত্রে কষ্ট করে পেলে তার আনন্দই আলাদা। আর তা না হলে কেমন যেন মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মতো ব্যাপারটা হয়ে যায়!’
বিনোদ বলে, ‘না, তা হয়তো নয়। তবে কী জানো, এই সময়টায় জীবন জুড়ে সুখের দাঁড়িপাল্লাটা যেন এক্কেবারে নিক্তি মেপে এগচ্ছে। মাঝেমধ্যে মনে বড় ভয় হয়। কী জানি কখন যে...’
স্বামীকে থামিয়ে দিয়ে খুশি বলে ওঠে,  ‘সেই আবার তোমার কুঁকড়ে থাকা মনটা জেগে উঠছে।’
বিনোদের জীবন জোড়া কেঁচোর মতো গুটিয়ে থাকা মনটা সুখের সাগরেও একটু স্বস্তিতে ভাসতে দেয় না। বারবার পিছন থেকে টেনে ধরে। কী জানি একটা অজানা আশঙ্কায় মনটা খালি ভয়ে-ভয়ে ভেসে বেড়ায়। বহুদূরে থাকা ছেলের চিন্তাতেও আজকাল বিনোদের মনটা বিষণ্ণতায় কেমন যেন খালি গুটিয়েই থাকে। তবুও এই সুখের সময়েও বিনোদকে শিখিয়ে যাওয়া বাবার কথাগুলো বিনোদ অক্ষরে অক্ষরেই পালন করে। সেই ছেলেবেলা থেকেই বাবার মতোই উপকারী বন্ধু হিসেবে নিঃসহায় মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো বিনোদের জীবনের এক অভ্যেস। আজও সেই পথেই সে এগিয়ে চলেছে । এই কাজে স্ত্রীও তার পাশে। সবসময় বলে,  ‘দেখো,  সবার জীবনে খানিক আলো ফোটানোর চেষ্টা করাটাও তো একটা সুখের ব্যাপার।’
বউয়ের কথায় মৃদু হাসে বিনোদ।
***
বিনোদের আজকাল অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হয়ে যায়। খুশি অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থেকে একা একাই বারান্দায় বসে চায়ে চুমুক দেয়। সুখী জীবনে অন্ধকার রাতের তারাগুলোও যেন তাকে ছুঁতে চায়। তার মনে উপচে পড়া আনন্দ কি ওরাও ভাগ করে নিতে চায়! গ্রীষ্মের দখিনা বাতাসে ভেসে আসা হাসনুহানার গন্ধ মনটাকে যেন আরও একটু ভরিয়ে দিয়ে যায়। এত শত আনন্দের সাগরে ভাসতে ভাসতে হঠাৎই ডিং-ডং শব্দে ডোর বেলটা বেজে ওঠে। উঠে গিয়ে খুশি দরজা খুলে দেয়। বিধ্বস্ত বিনোদ ঘরে ঢুকেই ধপ্ করে সোফার ওপর বসে পড়ে এক গ্লাস জল চায়। তারপর খানিক বিশ্রামের শেষে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢোকে সে। খানিকক্ষণের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে সোফায় এসে বসে।
‘খোকন আজ ফোন করেছিল। ও ফ্লাইটের টিকিটটা বুক করে ফেলেছে। নেক্সট মান্থেই কলকাতায় আসছে।’
ছেলের আগমনের খবরে খুশি আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে ।
‘আজ রাতে খোকনকে একটা ফোন করব। ও তো সারাক্ষণ বন্ধু বান্ধবদের নিয়েই পড়ে আছে। ফোন করলেই খালি নেটওয়ার্ক বিজি শোনায়। আজকাল তো ভিডিও কল করলেও ধরে না। মিসড্ কল দেখে পরে বলে দেয় ও নাকি ঘুমিয়ে পড়েছিল!’
খুশির কথায় বিনোদের কপালে ভাঁজ পড়ে। খানিক চুপ থেকে বলে, ‘ছেলেটাকে নিজেদের কাছে রাখলেই ভালো হতো। জানি না একা একা ওখানে পড়ে থেকে কেমন হয়ে উঠছে। আর এদিককার যা অবস্থা তাতে খোকনকে এখানে রেখেই বা কী করতাম বল? তার চেয়ে...।’
বিনোদকে কথা শেষ করতে না দিয়েই খুশি বলে ওঠে, ‘আবার তোমার গুটিয়ে যাওয়া মনটা জেগে উঠল! খোকনের জন্য অত চিন্তা কোরো না। ও তো তোমারই ছেলে। আর স্বভাবটাও তোমারই মতো। দেখবে খোকন আমাদের হীরের টুকরো হয়ে উঠবে।’
খুশির কথায় বিনোদ মনে মনে ভাবে, সব মা-বাবাই তো তাই চায়। তবুও দিনের শেষে কেমন যেন সব হিসেবগুলো ওলট পালট হয়ে যায়।
সেদিন অফিসে বসেই বিনোদ কিঙ্করের ইনস্টিটিউট থেকে মেলটা পেয়েছিল। ছেলের সম্পর্কে কিছু গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। মেলটা পাওয়ার পর সে দু’-একবার ফোনে কিঙ্করকে ধরবার চেষ্টা করেছে কিন্তু পায়নি। ইনস্টিটিউট থেকে দিন দুয়েকের মধ্যেই বিনোদকে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। সেদিনই বিকেলে কিঙ্করকে না পেয়ে ওদের প্রিন্সিপাল স্যারকে ফোনে ধরেছিল বিনোদ। প্রিন্সিপালের কথায় বিনোদের হাত-পা গুলো ক্রমশ যেন ঠান্ডা হতে শুরু করেছিল। তারপর কথা শেষ করে একবার খুশিকে ফোনে ধরতে চেষ্টা করল, কিন্তু পেল না। অফিস থেকে তাড়াতাড়িই বেরিয়ে পড়েছিল। ঘরে ঢুকতেই স্বামীর থমথমে মুখখানা দেখে খুশি বুঝেছিল কিছু একটা ঘটেছে। আবারও সেই কুঁকড়ে যাওয়া বিনোদকে দেখে তার মনে অজস্র প্রশ্ন ভিড় করে এসেছিল। বিনোদ শুধু একটা কথাই বলেছিল, ‘কাল সকালের ফ্লাইটেই আমাকে একবার বেঙ্গালুরু যেতে হবে। আমার ফ্লাইটের টিকিট কনফার্ম হয়ে গেছে।’
স্বামীর কথায় খুশি যেন একেবারে আকাশ থেকে পড়ল। অনেক জেরা সত্ত্বেও বেঙ্গালুরুতে ছেলের কাছে যাওয়ার কারণটা খুশির কাছে গোপনই রাখল বিনোদ।
পরদিন কিঙ্করের ইনস্টিটিউটে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণটা শুনে জীবনে এই প্রথম বিনোদের কেঁচোর মতো কুঁকড়ে থাকা মনটাও কেমন যেন সাহসী হয়ে উঠেছিল। প্রিন্সিপাল স্যারকে বীর বিক্রমে বলে দিয়েছিল, ‘দ্য ল’ স্যাল ফলো ইটস্ ওন ডিকট্যাট, আই উইল নট ওরি অ্যাবাউট ইট। হি মাস্ট বি পানিশড্ ফর হিজ ডিডস্।’
কথাগুলো বলে এক ঝটকায় প্রিন্সিপাল স্যারের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল বিনোদ। হাজতে থাকা ছেলেকেও একটি বারের জন্য দেখতে যায়নি। বিনোদ ভেবেই পাচ্ছিল না কেঁচোর মতো সারাটা জীবন কুঁকড়ে থাকা বাবার ছেলে হয়ে কিঙ্কর এতটা সাহস কোথা থেকে পেল! 
আজ ছেলের কৃতকর্মের জন্য বিনোদের সারা জীবনের গুটিয়ে থাকা মনটা যেন একটা জায়গায় এসে জড়ো হয়েছে। সুদূর বেঙ্গালুরু থেকে ফোন করে খুশির কাছে কঁকিয়ে উঠেছিল সে। স্ত্রীকে হাঁপাতে হাঁপাতে কোনও রকমে বলেছিল, ‘জানো খুশি, আমাদের ছেলে শ্লীলতাহানির দায়ে হাজতবাস করছে। আচ্ছা, তুমি বলতে পার, সারাটা জীবন একটা কেঁচোর মতো গুটিয়ে থাকা বাবার ছেলে হয়ে আমার খোকন এতটা সাহস পেল কোথা থেকে?’
অলঙ্করণ : সোমনাথ পাল
11th  December, 2022
মেট্রোর দুপুর

সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছে দাঁড়িয়ে পড়ল দীপন। কারণ দুটো— এক, এতগুলো সিঁড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে উঠে একটু না দাঁড়ালে আর পারা যাচ্ছিল না। দুই, সামনে মধ্য দুপুরের কলকাতা বৈশাখের রোদে ঝলসাচ্ছে। পা রাখার আগে এটাই শেষ সুযোগ। পকেট থেকে সেলফোনটা বের করল। বসে পড়ল মেট্রোর সিঁড়িতে। চোখ রাখল স্ক্রিনে। 
বিশদ

21st  April, 2024
অথ দাম্পত্যচরিতম
সোমজা দাস

যে লোকটা ফুলকুল্লি স্টেশনের লাগোয়া বিন্তিমাসির চায়ের দোকানে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল আর শুক্কুরবার বেলা এগারোটা থেকে সাড়ে বারোটা অবধি বসে থাকে, ওই যে যার মাথায় খড়খড়ে মরচে রঙের চুল, গালে চটামটা লালচে দাড়ি, উদাস চোখ, তার কথা বলছি। সে-ই দশানন দাস।    বিশদ

07th  April, 2024
ছোট গল্প: বন্ধনহীন গ্রন্থি
বিতস্তা ঘোষাল

—অনেকদিন তোমার পোস্ট আমার অ্যাকাউন্টে দেখাচ্ছে না। আজ একজন বললেন, তোমার হ্যাজব্যান্ড চলে গেলেন। তিনি তোমার পেজ শেয়ারও করলেন। আমি জানতাম না অনিকেত তোমার স্বামী। ওঁর সঙ্গে বহুদিন আগে আমার দেখা হয়েছিল। বিশদ

31st  March, 2024
গুপ্ত রাজধানী: দারা শিকোহের গ্রন্থাগার
সমৃদ্ধ দত্ত

রামায়ণকে বুঝতে হলে, হিন্দু শাস্ত্রের অন্তর্নিহিত দর্শনকে আত্মস্থ করতে হলে, যোগ বশিষ্ট পাঠ করা দরকার। আর শুধু পাঠ করা নয়, প্রজাদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। সম্রাট শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা শিকোহকে একথা বলেছিলেন দরবারের অন্যতম হিন্দু পণ্ডিত চন্দ্রভান ব্রাহ্মণ। বিশদ

31st  March, 2024
অতীতের আয়না: হারিয়ে যাওয়া হাড়গিলে পাখি
অমিতাভ পুরকায়স্থ

নিউ মার্কেটের পূর্ব ও পশ্চিম গেটের একটু উপরের দিকে সবুজ বৃত্তাকার জায়গাটার দিকে কখনও নজর করেছেন? খেয়াল করলে দেখবেন একটি এমব্লেম বা প্রতীক। কলকাতা পৌরসংস্থার এই মোহরচিহ্ন শহরের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। বিশদ

31st  March, 2024
সম্পর্ক
অর্পিতা সরকার

 

ওদের তিনতলা বাড়ি, বাবা সরকারি চাকুরে। সুস্মিতা ওর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তারপরেও বাবার সাধারণ জীবনযাত্রার কারণেই স্কুল-কলেজে কখনও সেভাবে গর্ব করতে পারেনি সুস্মিতা। ওর বাবার মুখে একটাই কথা, ‘নিজে ইনকাম করো, তারপর বুঝবে রোজগার করতে কত কষ্ট করতে হয়। বিশদ

24th  March, 2024
তবু যেতে হয়

—কাজটা তালে ছেড়েই দিলি সুবি!
সুবি উত্তর দেয় না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সে। লাঙলপোতা গ্রামের ছোট্ট বাড়ির মাটির বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে পায়ের উপর পা ঘষে সুবিনয়। এ তার দীর্ঘ দিনের অভ্যেস। ঘরের ভিতরে তার শয্যাশায়ী মা অলকা। শুয়ে শুয়েই সান্ত্বনা দেন।
বিশদ

17th  March, 2024
গুরুদ্বার সিস গঞ্জ

দিল্লি দেখতে এসে চাঁদনী চক যাওয়া হবে না? তা কীভাবে হয়? অতএব দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় ভ্রমণস্থল চাঁদনী চক।
বিশদ

17th  March, 2024
দেখা যায় না, শোনা যায় পুতুল বাড়ি
 

আকর্ষণ, বিতর্ক, কৌতূহলের চিরন্তন কেন্দ্রবিন্দু অলৌকিক দুনিয়া। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী দুই শিবিরেরই এব্যাপারে আগ্রহ ষোলোআনা। তাই ভৌতিক সাহিত্য হোক বা সিনেমা, বাজারে কাটতি বরাবরই বেশি।
বিশদ

17th  March, 2024
প্রস্থান
দীপারুণ ভট্টাচার্য

শববাহী গাড়িটা গেটের ভিতর ঢুকতেই অরুণবাবু চারপাশটা দেখলেন। বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে তার ছেলে নীলাঞ্জন আর বউমা সুতপা। নীলাঞ্জন বড় চাকরি করে। সে ফোন পেয়েছিল অফিসে যাওয়ার পর। সুতপাকে বলেছিল, ‘বেরতে একটু সময় লাগবে। বিশদ

10th  March, 2024
গুপ্ত রাজধানী: জাহান আরার সমাধি
সমৃদ্ধ দত্ত

নভরোজ পরব চলছে। আগ্রা জুড়ে উৎসবের উচ্ছ্বাস। এখন ১৬৪৪। বাদশাহ শাহজাহানের আগ্রা দুর্গে সবথেকে বেশি উজ্জ্বল আয়োজন। স্বাভাবিক। প্রতি বছর নভরোজের সময় আগ্রা দুর্গ এভাবেই সেজে ওঠে। সম্রাটের পুত্রকন্যারা এই সময়টায় পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হন। বিশদ

10th  March, 2024
অতীতের আয়না: বাঙালির সার্কাস
অমিতাভ পুরকায়স্থ

১৯২০ সালের ২০ মে। নিজের ‘গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’ নিয়ে সিঙ্গাপুরে ট্যুরে গিয়ে জন্ডিস হয়ে মারা গেলেন প্রিয়নাথ বসু। শুধু উপমহাদেশের সার্কাসের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও উৎকর্ষের নতুন মানদণ্ড ছাড়াও, বিনোদন শিল্প হিসেবে সার্কাসকে দৃঢ় ভিত দিয়ে গেলেন তিনি। বিশদ

10th  March, 2024
ভোগ
শুচিস্মিতা  দেব

পুতুলকে সদ্যই নিমতিতা থেকে ‘রায়চৌধুরী ভিলা’তে এনেছে তার পিসি সবিতা। সবিতা এই পরিবারের বহু দিনের থাকা-খাওয়ার মাসি। টিভি সিরিয়ালের মতো প্রকাণ্ড বাড়িখানা দেখে পেরথমেই ভেবলেছে পুতুল। ফুটবল মাঠের মতো বৈঠকখানা। বিশদ

03rd  March, 2024
রুপোর চাকু

আলমারিটা খুলতেই দাদার চোখ চলে গিয়েছিল। উপরের তাকে জামা কাপড়ের পাশে খালি জায়গায় শোয়ানো ছিল। বাজপাখির চোখ দাদার।
বিশদ

25th  February, 2024
একনজরে
রক্তক্ষরণ আটকাতে পারবে কি সিপিএম? আটকানো যাবে কি বামের ভোট রামে যাওয়া? —মূলত এই দু’টি প্রশ্নই এখন আলোচনার কেন্দ্রে। ব্রিগেড ভরাতে পারলেও ভোটবাক্স ভরাতে পারবেন কি না, তা নিয়েই এখন চিন্তিত সিপিএমের বঙ্গ রাজনীতির কুশীলবরা। ...

ভোট মরশুমে চোখ রাঙাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত গরম। আজ, শুক্রবার, লোকসভার দ্বিতীয় দফার নির্বাচন। বৃহস্পতিবার আগামী পাঁচদিনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক এবং উত্তরপ্রদেশের ...

মতুয়া ঠাকুরবাড়ির মন্দিরের তালাভাঙা এবং মারধর সংক্রান্ত মামলায় শান্তনু ঠাকুর ও তাঁর পরিবারকে রক্ষাকবচ দিল হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতে নির্দেশ, তাঁদের বিরুদ্ধে আপাতত কোনও কঠোর পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিস। ...

লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসে হামলার ঘটনায় অবশেষে গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত। ধৃতের নাম ইন্দরপাল সিং গাবা। তিনি ব্রিটেনের হাউন্সলোরের বাসিন্দা। দিল্লি থেকে ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

১৮৮৪- উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী, সেতার ও সুরবাহার বাদক ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁর জন্ম
১৮৯৭- বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক নীতীন বসুর জন্ম
১৯২০- ভারতীয় গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজনের মৃত্যু
১৯২৪- সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যালের জন্ম 



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৮১.৫০ টাকা ৮৪.৯৩ টাকা
পাউন্ড ১০১.৪৭ টাকা ১০৫.৯২ টাকা
ইউরো ৮৭.১৪ টাকা ৯১.১৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৭২,৭০০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৭৩,০৫০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৬৯,৪৫০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৮১,৪৫০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৮১,৫৫০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

১৩ বৈশাখ, ১৪৩১, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪। দ্বিতীয়া ৬/১৩ দিবা ৭/৪৭। অনুরাধা নক্ষত্র ৫৮/৪০ রাত্রি ৩/৪০। সূর্যোদয় ৫/১১/৩০, সূর্যাস্ত ৫/৫৭/২৪। অমৃতযোগ প্রাতঃ ৬/৫৪ মধ্যে পুনঃ ৭/৪৪ গতে ১০/১৮ মধ্যে পুনঃ ১২/৫১ গতে ২/৩২ মধ্যে পুনঃ ৪/১৫ গতে অস্তাবধি। রাত্রি ৭/২৮ গতে ৮/৫৭ মধ্যে পুনঃ ২/৫৭ গতে ৩/৪১ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ রাত্রি ১০/২৭ গতে ১১/১২ মধ্যে পুনঃ ৩/৪১ গতে উদয়াবধি। বারবেলা ৮/২৪ গতে ১১/৩৪ মধ্যে। কালরাত্রি ৮/৪৫ গতে ১০/১০ মধ্যে। 
১৩ বৈশাখ, ১৪৩১, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪। দ্বিতীয়া দিবা ৬/২৮। অনুরাধা নক্ষত্র রাত্রি ২/২৬। সূর্যোদয় ৫/১২, সূর্যাস্ত ৫/৫৯। অমৃতযোগ দিবা ৬/৪৬ মধ্যে ও ৭/৩৮ গতে ১০/১৫ মধ্যে ও ১২/১৫ গতে ২/৩৫ মধ্যে ও ৪/২০ গতে ৫/৫৯ মধ্যে এবং রাত্রি ৭/৩২ গতে ৯/০ মধ্যে ও ২/৫০ গতে ৩/৩৪ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ রাত্রি ১০/২৭ গতে ১১/১১ মধ্যে ও ৩/৩৪ গতে ৫/১১ মধ্যে। বারবেলা ৮/২৪ গতে ১১/৩৫ মধ্যে। কালরাত্রি ৮/৪৭ গতে ১০/১১ মধ্যে। 
১৬ শওয়াল।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
আইপিএল: কেকেআর ৭/০ (১ ওভার)(বিপক্ষ পাঞ্জাব)

07:35:55 PM

আইপিএল: চোটের কারণে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে খেলছেন না কেকেআরের মিচেল স্টার্ক

07:28:29 PM

দেখে নিন ৫টা অবধি দেশের কোন অংশে কত ভোট পড়ল
লোকসভা নির্বাচন ২০২৪(দ্বিতীয় দফা): বিকেল পাঁচটা অবধি গোটা দেশে গড়ে ...বিশদ

07:25:25 PM

আইপিএল: টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত পাঞ্জাবের (বিপক্ষ কেকেআর)

07:15:19 PM

বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাংলার ৩ আসনে কত ভোট পড়ল
লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায়, বিকেল ৫টা অবধি বাংলার ৩ আসনে ...বিশদ

06:35:21 PM

সন্দেশখালিতে গেল এনএসজি টিম

05:12:03 PM