সামাজিক কর্মে সম্মান লাভ। স্ত্রী’র শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। দেরীতে অর্থপ্রাপ্তি। ... বিশদ
লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে চাতালের লাগোয়া খোলা ছাদটাতে এসে দাঁড়ায় রূপা। কর্মস্থলকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে এই বাড়ির অংশীদারেরা আজ বাসা বেঁধেছে নিজেদের পছন্দ মতো জায়গায়। মেরামতির অভাবে দাদুর শখের বাড়িটা এখন একেবারে পোড়োবাড়ি হয়ে গিয়েছে। ছাদের কিনারায় ফাটলের ভেতর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ছোট, বড় নানা দৈর্ঘ্যের অশ্বত্থগাছ। উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাড়িটাকে ঘিরে ফেলেছে আগাছার জঙ্গল। একটা অজানা কষ্ট জমাট বাঁধছে রূপার মনের মধ্যে। আর কিছুক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে জমাট বাঁধা কষ্টটা নোনা জল হয়ে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়বে। চোখের জলটাকে আটকানোর জন্য চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকায় রূপা। রক্তিম সূর্য ঢলে পড়ছে দিগন্তের দিকে। হালকা হাওয়ায় ভেসে আসছে খুব চেনা একটা গন্ধ। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয় রূপা। জামরুল ফুলের চেনা গন্ধটা এবার পাড়ি দেয় হৃদয়ের কোণে থাকা স্মৃতির সরণিতে। বাড়িটার গা ঘেঁষে থাকা জামরুল গাছটার দিকে এগিয়ে যায় রূপা। গাছটার ডালপালা এসে পড়েছে ছাদের ওপর। ঘন সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে সাদা সাদা ফুলের দল। এই ফুলগুলো রূপার খুব প্রিয়। ছোটবেলায় সবার বকুনি অগ্রাহ্য করে ইচ্ছে মতো গাছ থেকে ফুল ছিঁড়ে নিত। নাকের খুব কাছে এনে আঘ্রাণ নিত হালকা গন্ধটার। নাকের নরম ত্বকে সুড়সুড়ি দিত ফুলের পুংকেশরেরা। হাঁচি আসত রূপার। পুরনো কথা মনে পড়তেই ওর মনটা আনন্দে ভরে উঠল। কত্তো জামরুল হতো এই গাছটায়, বড় বড় আর কি মিষ্টি। ওরা সবাই মিলে খেয়েও শেষ করতে পারত না। তখন বিলিয়ে দিত চেনাজানাদের। তারপরেরও কত জামরুল অনাদরে পড়ে থাকত গাছের তলায়।
বাড়িটা বিক্রি হয়ে গেলে কি এই জামরুল গাছটা কাটা পড়বে?
‘দিদি,’ উত্তর খোঁজার আগেই পলাশের ডাকে রূপার চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে গেল।
‘এবার আমাদের ফিরতে হবে। শান্তনুদা, মানে এই বাড়িটা যে কিনবে, সেই প্রোমোটার ফোন করেছিল। মিনিট দশেকের মধ্যেই এসে পড়বে,’ ব্যগ্রভাবে বলল পলাশ।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও পলাশের পিছন পিছন নামতে শুরু করল রূপা। পলাশ তাড়া না দিলেও অবশ্য আর কিছুক্ষণের মধ্যেই রূপাকে ছাদ থেকে নেমে পড়তে হতো। কারণ, সিঁড়িতে বাহারি কাচের ল্যাম্পশেডে বাল্ব লাগানো থাকলেও সেগুলো এখন আর জ্বলে না। অনেকদিন ধরে ইলেক্ট্রিসিটি বিল মেটানো হয়নি তাই এবাড়ির বিদ্যুৎ-সংযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে ঢোকার আগেই ব্যাপারটা রূপাকে জানিয়েছিল পলাশ।
‘শান্তনুদা কে? তোদের চেনাজানা কোনও প্রোমোটার?’
‘হ্যাঁ। শান্তনুদাকে অনেকদিন ধরেই চিনি। পাল পাড়ায় থাকে। আগে একটা ছোটখাট চাকরি করত। এখন বোধহয় চাকরি গিয়েছে, তাই প্রোমোটারি করা শুরু করেছে। এটাই মনে হয় ওর প্রথম প্রজেক্ট।’ একটানা কথাগুলো বলে পিছন ফিরল পলাশ। রূপার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমিও মনে হয় চেনো ওকে। ও দীপু পালের ছেলে।’
না, দীপু পালকে ঠিক মনে পড়ছে না রূপার। ওর মুখ দেখে পলাশ ওর মনের ভাব আঁচ করতে পারল। সন্দেহভঞ্জন করার জন্য বলল, ‘দীপু পালকে মনে নেই তোমার? সেই দীপু পাল, যে লাইফ ইনস্যুরেন্স করত। শান্তনুদা সেই দীপু পালের ছেলে।’
এক ঝটকায় সব কিছু মনে পড়ে গেল রূপার। শান্তনুকে। শান্তনুর বাবা দীপু পালকে। লম্বা, ফর্সা, সুদর্শন দীপু পাল। টানা টানা চোখ, কোঁকড়ানো চুল, ক্যালেন্ডারে দেখা শ্রীকৃষ্ণের মতো রূপ। দীপু পালকে কি এত সহজে ভুলতে পারে রূপা? এই বাড়িটা আর দীপু পাল...
ছাইচাপা রাগ আর বাঁধভাঙা দুঃখ অস্থির করে তোলে রূপাকে। দ্রুত পদক্ষেপে দাদুর বাড়িটা থেকে বেরিয়ে যেতে চায় রূপা।
(২)
একতলার বসার ঘরটায় জড়ো হয়েছে বাড়ির বড়রা। রুদ্ধদ্বার বৈঠক হচ্ছে সেখানে। ওই ঘরে এখন বাচ্চাদের প্রবেশ নিষেধ। তারা জানলার ফাঁক দিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে ভেতরের ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে। একবার ধরা পড়লে আর নিস্তার নেই জেনেও কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে। তুতো-ভাইবোনেদের পাল্লায় পড়ে রূপাকেও নাম লেখাতে হয়েছে সেই দলে। কিন্তু এভাবে হুমড়ি খেয়ে, গুঁতোগুঁতি করে ঘরের ভেতর কী হচ্ছে, তা জানার ইচ্ছা ওর একেবারেই নেই, তাই ও সময় বুঝে টুক করে সেখান থেকে সরে পড়েছে। সবার অলক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছে বৈঠকখানার পিছনের বারান্দায়। এখানে কেউ নেই, ভাইবোনেরা সব সামনের দালানে দাঁড়িয়ে কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করছে। রূপা এগিয়ে যায় টানা বারান্দা ধরে। এ কী! সামনের দালানের দরজা-জানালা বন্ধ থাকলেও বারান্দার জানলা দুটো খোলাই আছে, ও দুটোকে বন্ধ করার কথা কারও মাথায় আসেনি। অন্যদের মতো এবার রূপার মনেও কৌতূহল জাগে ভেতরে কী হচ্ছে তা জানার। ও পা টিপে টিপে এগিয়ে যায় জানলার দিকে। ঘরের ভেতরের সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে এখান থেকে।
বৈঠকখানার মাঝখানে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে সেজোপিসি। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে ফেলছে চোখের জল। মা আর মেজোকাকিমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে দরজার পাশে। দাদু আজ আরামকেদারায় না বসে সোফায় বসেছেন। দাদুর পাশে বাবা বসে আছে, দু’জনেরই মুখ গম্ভীর। পাশের কাঠের চেয়ারটায় ঠাকুমা বসে আছে, মুখ থমথমে। ঠাকুমাকে এভাবে কোনওদিনও চেয়ারে বসে থাকতে দেখেনি রূপা। কারও মুখে কোনও কথা নেই শুধু মেজোকাকা নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আঙুল তুলে জোরগলায় কথা বলে যাচ্ছে। মেজোকাকার আচরণে একটু অবাক হয় রূপা, দাদুর সামনে এভাবে আঙুল তুলে কথা বলার সাহস মেজোকাকার হল কী করে?
পাছে কেউ দেখে ফেলে তাই জানলার পাশে সরে আসে রূপা। এখান থেকে ঘরের ভেতরের কিছু দেখা যাচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু কথাবার্তা সব স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। কান পেতে সবকিছু শুনে নেওয়ার চেষ্টা করে রূপা।
‘মান-সম্মান আর কিছুই বাকি থাকল না আমাদের। আমাদের বাড়ির মেয়ে অসভ্যের মতো প্রেম করে বেড়াচ্ছে, তাও আবার একটা উড়নচণ্ডী, বাউণ্ডুলে ছেলের সঙ্গে!’
‘তোমরা সারাদিন কী কর? মেয়েটার ওপর একটু নজর রাখতে পার না,’ দাদুর গম্ভীর গলা কানে এল রূপার।
‘এরপর কী হবে সেটা একবার ভেবে দেখেছ কেউ? আমরা আর পাড়ায় মুখ দেখাতে পারব? ছোটখুকিকে আর কোনও ভদ্রবাড়ির ছেলে বিয়ে করবে মনে করেছ? আর আমাদের ছেলেমেয়েরা? তারা কী শিখবে? না, না এ সব চলতে পারে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর একটা বিহিত হওয়া দরকার,’ আবার মেজোকাকার উত্তপ্ত গলা শোনা গেল।
‘আমার মনে হয়, লোক জানাজানি হওয়ার আগে সেজোখুকির বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলাই ভালো,’ ধীরস্থির ভাবে নিজের মতামত জানিয়ে দিল বাবা।
‘তুমিই তাহলে ওর জন্য পাত্রের খোঁজ করো।’
‘আমার অফিসের নিবারণবাবু ওর শ্যালকের জন্য একটি ভালো পাত্রী খুঁজছেন। ছেলেটা ব্যাঙ্কে চাকরি করে। যৌথ পরিবার। আমাদের পাল্টি ঘর। কাল একবার নিবারণবাবুর সঙ্গে কথা বলে দেখব। যদি মেয়ে পছন্দ হয় তাহলে মাস দুয়েকের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে দেবে ওরা।’ দাদুর প্রস্তাব সমর্থন করে পাল্টা প্রস্তাব দিল বাবা।
‘যত তাড়াতাড়ি ওর বিয়ে হয়ে যায় ততই মঙ্গল।’ কথাগুলো বলার সময় কি দাদুর দীর্ঘশ্বাস পড়ল?
‘বড় বউমা, যতদিন না ওর দিয়ে হচ্ছে, ততদিন তুমি ওকে চোখে চোখে রাখবে। দেখবে ও যেন বাড়ির বাইরে পা না দেয়।’ দেখতে না পেলেও রূপা বুঝতে পারে দাদুর জারি করা ফরমানের উত্তরে মা ঘাড় হেলিয়ে সম্মতি জানিয়েছে।
‘তোমরা এবার আসতে পার।’ সভাভঙ্গের নির্দেশ দিল দাদু।
বারান্দা থেকে চলে এল রূপা। ভাইবোনেরা এখনও দালানে দাঁড়িয়ে জটলা করছে। ওর দিকে কারও নজর পড়েনি। ও আস্তে আস্তে ছাদে উঠে এল। জামরুল গাছের ডালপালাগুলো ছাদের ওপর এসে পড়েছে। সবুজ পাতাগুলোর ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে জামরুল ফুলের ছোট্ট সাদা সাদা কুঁড়িগুলোকে। অন্য সময় হলে দু’-একটা কুঁড়ি ছিঁড়ে নিত রূপা। নাকের কাছে নিয়ে গিয়ে অনাগত জামরুলের গন্ধ নেওয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু আজ আর ও সব করতে ইচ্ছা করছে না। খুব মনখারাপ লাগছে ওর। বার বার সেজোপিসির কান্নাভেজা মুখটা মনে পড়ছে। অন্য ভাইবোনেরা যদি ওর মতো জানতে পারত, সেজোপিসির বিয়ের কথা হচ্ছে তাহলে এতক্ষণে হুলস্থুল করে ফেলত। কে কী জামা পরবে, কেমন করে সাজবে-গুজবে, কী কী খাবে সেইসব নিয়ে এখন থেকেই চলত অগ্রিম পরিকল্পনা। কিন্তু রূপার সেসব কিছুই করতে ইচ্ছা করছে না। ধীরপায়ে জামরুল গাছটার দিকে এগিয়ে যায় রূপা। পরম যত্নে হাত বোলাতে থাকে কুঁড়িগুলোর গায়ে।
সেজোপিসিকে দেখতে খুব সুন্দর, তাই একবার দেখেই পাত্রপক্ষের পছন্দ হয়ে গেল। মাস দেড়েকের মধ্যেই একটা শুভদিন দেখে ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল সেজোপিসির। আর তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ঘটে গেল সেই অপ্রত্যাশিত অঘটনটা।
তখন সন্ধে হব হব। মায়ের সঙ্গে গানের স্কুল থেকে সবেমাত্র বাড়ি ফিরেছে রূপা। বাড়িতে তখন লঙ্কাকাণ্ড চলছে। শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে সেজোপিসিকে। বিয়ের আগে সেজোপিসির সঙ্গে একটা বাউণ্ডুলে ছেলের প্রেমের ব্যাপারটা কীভাবে যেন ওদের কানে পৌঁছেছে।
কিছুদিনের মধ্যেই সেজোপিসির ডিভোর্স হয়ে গেল। তারপর একদিন সকালে বৈঠকখানায় দেখা দিল এক সুদর্শন যুবক। সেজোপিসির সেই বাউণ্ডুলে প্রেমিক। করজোড়ে দাদুর কাছে সেজোপিসির পাণিগ্রহণের প্রস্তাব করছে। না, দাদু সে প্রস্তাবে রাজি হননি। ওই ছেলেকে তিনি কোনওদিনই জামাই হিসাবে মেনে নেবেন না। সেজোপিসির মন আগেই ভেঙে গিয়েছিল এবার শরীরটাও ভাঙতে শুরু করল। ক্ষয়রোগ বাসা বাঁধল পিসির শরীরে। ক্ষয়রোগ খুবই ছোঁয়াচে তাই খুব কাছের লোকেরাই পিসির ছোঁয়াচ থেকে দূরে থাকতে শুরু করল। অনাদরে, অবহেলায় অপরাধীর মতো পৃথিবীর মায়া কাটাল সেজোপিসি।
(৩)
‘কথাবার্তা যখন সব পাকা হয়েই গেল তখন সবাই এবার একটু মিষ্টিমুখ করো।’ হাসতে হাসতে সন্দেশের প্লেটটা টি-টেবিলের ওপর রেখে দিল ছোটকাকিমা। পাছে ওই অত বড় বাড়ির মেরামতির দায়ভার ঘাড়ে এসে পড়ে সেই ভয়ে বছর দুয়েক আগেই ভাড়াবাড়িতে উঠে এসেছে ছোটকাকা। তাই দাদুর বাড়িটা বিক্রি করার গরজ ওদেরই সবচেয়ে বেশি। ছোটকাকার ছেলে পলাশ নিজেই উদ্যোগ নিয়ে প্রোমোটার ঠিক করেছে। বাকি সব অংশীদারেরা আসবে বাড়ি হাতবদল হওয়ার সময়।
নিজেদের নাম সই করে বখরার পাই-পয়সা বুঝে নেবে। দাদুর বাড়িটা ভেঙে ফেলে শান্তনু ওখানে একটা ফ্ল্যাটবাড়ি বানাবে। একমাত্র ছোটকাকা ছাড়া আর কেউই ওখানে ফ্ল্যাট নিতে ইচ্ছুক নয়, তারা ভাগের টাকাটা পেলেই খুশি। রূপাও ব্যতিক্রম নয়। ওর ছেলে বড় হচ্ছে। এবার ছেলেকে একটা আলাদা ঘর দিতে হবে। কিনতে হবে একটা তিন কামরার ফ্ল্যাট। এখন যদি এখান থেকে কিছু টাকা পাওয়া যায় তাহলে আর রোজরোজ পতিদেবতার কাছে রোজগার না করার জন্য মুখনাড়া শুনতে হবে না।
‘ফ্ল্যাটের কী নাম দেবেন কিছু ঠিক করেছেন?’ শান্তনুকে প্রশ্ন করে রূপা।
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, ফ্ল্যাটের নাম আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছে। আমার বাবা-ই ঠিক করেছে আমার প্রথম প্রজেক্টের নাম কী হবে।’
রাগে আপাদমস্তক জ্বলে উঠল রূপার। দীপু পালের মতো একটা লোক ঠিক করবে ওর দাদুর বাড়ির নতুন নাম।
‘তা কী নাম ঠিক করেছেন আপনার বাবা?’
‘দীপশিখা’
‘দীপশিখা!’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করল রূপা।
‘হ্যাঁ, আসলে এটা শুধু আমার নয় আমার বাবারও ড্রিম প্রজেক্ট। বাবা-ই আমাকে আপনাদের বাড়িটার কথা বলেছিল,’ হাসতে হাসতে জবাব দেয় শান্তনু।
রূপার বুকের ভিতর এতকাল ধরে যে, আগুনটা জ্বলছিল আজ শান্তনুর কথা শুনে সেটা একেবারে নিভে গেল। সেই ছোটবেলায় যখন দাদুর বৈঠকখানায় প্রথমবার দীপু পালকে দেখেছিল, সেই তখন থেকেই লোকটার ওপর একটা অপরিসীম রাগ ছিল রূপার। এই লোকটার জন্যই সেজোপিসিকে এত শাস্তি ভোগ করতে হল। একে ভালোবেসেছিল বলেই দাগী আসামির মতো পৃথিবী থেকে অকালে বিদায় নিতে হল সেজোপিসিকে। কিন্তু আজ, আজ মনে হচ্ছে দীপু পাল সত্যিই ভালোবেসেছিল সেজোপিসিকে। নাহলে কি আর ড্রিম প্রজেক্টের জন্য এই ‘দীপশিখা’ নামটা সাজেস্ট করত?
দীপু পাল মানে বাউণ্ডুলে, উড়নচণ্ডী দীপক ভালোবেসেছিল রূপার সেজোপিসি শিখাকে। কিন্তু রক্ষণশীলতার ঘেরাটোপে ওদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি। শিখা অকালে চলে গেলেও তার স্মৃতি এতদিন ধরে পরম যত্নে মনের মণিকোঠায় আগলে রেখেছে দীপক। আর এখন সুযোগ পেয়েই সম্পৃক্ত করতে চেয়েছে ওদের সেই অসম্পূর্ণ ভালোবাসাকে।
সেজোপিসি আর দিপু পালের সেই অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা ভেবে চোখে জল এসে গেল রাজরূপার। বৈষয়িক আলোচনায় ব্যস্ত মানুষগুলোর অলক্ষে ঝরে পড়া সেই লবণাক্ত আনন্দধারা শাড়ির আঁচলে ধরে রাখল রূপা।
অলঙ্করণ: সোমনাথ পাল