ঐকতানে হস্তশিল্প মেলা
হস্তশিল্প বাংলার গৌরব। বাংলার হারিয়ে যাওয়া চারুশিল্প ও কারুশিল্পের প্রদর্শন তাও আবার একই ছাদের তলায় যা বিধাননগরবাসীর কাছে এক বিশাল পাওনা। বেশ কয়েক বছর ধরে হস্তশিল্প মেলা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে যে মায়ের আগমনের দিন এগিয়ে এল বলে। আট থেকে আশি সকলের একপ্রকার পুজোর কেনাকাটার শুরু হয়েই যায়। সল্টলেকের পূর্বাচল সংস্কৃতি কেন্দ্রে শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ হস্তশিল্প মেলা। মেলা ঘুরে দেখার শখ কার নেই। মেলায় ঘোরা মানেই দেখা-দরদাম আর সব শেষে কিন্তু কিন্তু করে কিনে ফেলা। কেনাকাটার আনন্দ দিতে এবার বিভিন্ন জেলা থেকে নানারকমের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। মেলার আয়োজক ‘ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ এবং বস্ত্র দপ্তর’ (পশ্চিমবঙ্গ সরকার)। প্রায় ১০০টির মতো স্টল রয়েছে ৩টি প্যাভেলিয়নে। মেলার গেটের সামনে ছাতা, টি শার্ট, ওড়নায় আঁকা পেন্টিং, মধুবনি প্রিন্টিং পটচিত্র প্রথমেই আপনাদের নজর কাড়বে। একের পর এক প্যাভেলিয়নের স্টলগুলিতে পাবেন নানারকমের বাহারি ও প্রয়োজনীয় জিনিস। অসাধারণ কাঠের সামগ্রীর সম্ভার, বর্ধমানের কাঁথাস্টিচের শাড়ি, কুর্তি, পাঞ্জাবি, ব্লাউজ পিস, মেদিনীপুরের মাদুরের তৈরি টেবিল ম্যাট, মাদুর, আসন, ঝিনুকের চামচ, কানের দুল, শাঁখা, হার, সিঁদুরদানি, দঃ ২৪ পরগনার স্টলে আছে তাল, নারকেল, খেজুর গাছের পাতা, ছাল, শোলা, লোহার তার দিয়ে তৈরি কালারফুল আর্টিফিসিয়াল ফুল। কৃষ্ণনগরের টেরাকোটার গয়না, শোপিস। শাড়ির জন্য বিভিন্ন বুটিকের স্টলে পাবেন কটন, সিল্ক, হ্যান্ডলুম, পিওর শিফন, মটকা সিল্ক, বিষ্ণুপুরি সিল্ক, লিনেন শাড়ি। শাড়ির পর গয়নার জন্য পাবেন বেশ কয়েকটি কস্টিউম জুয়েলারির স্টল, এডি স্টোনের জুয়েলারি। পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জুটের ব্যাগ, জুতোর নতুন নতুন ডিজাইনও বেশ পছন্দসই। এই মেলা চলবে আগামী ২১ জুলাই পর্যন্ত। ঐকতানে হস্তশিল্প মেলা খোলা প্রতিদিন দুপুর ২টো থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
জমজমাট রথের মেলা
আধুনিকতার সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছি আমরা ছোটবেলার প্রাণখোলা আনন্দ, মজাকে। কোথাও যেন সেই নস্টালজিক মাহেশের রথের গল্প, পুরীর রথের জনজোয়ার অজান্তেই মন ভরিয়ে দেয় অফুরান ভালোলাগায়। রথযাত্রা, রথের মেলার আমেজটাই যেন ফিকে হয়ে আসছে। সেই ফিকে হয়ে যাওয়া উৎসবে রামধনু রঙের ছোঁয়া মিলেছে করুণাময়ীর মেলা প্রাঙ্গণে। এ বছরও বিধাননগর শ্রীচৈতন্য ভাগবত সমাজের পরিচালনায় ৩০তম বর্ষের রথের মেলার আয়োজনে জমজমাট হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার ৩টি গেটের বাইরে যেমন বসেছে পাঁপড় ভাজা, বাঁশি, জিলিপি, কটকটি, ফুচকা, বেলুন তেমনি প্রাঙ্গণের ভিতরে রয়েছে সারি সারি স্টল। যেখানে দৈনন্দিন জিনিস থেকে শুরু করে ঘর সাজাবার সামগ্রী, হাতের কাজ, কস্টিউম জুয়েলারি, নানারকমের বুটিক কী নেই! মেলার এক প্রান্তে থাকা রথের রশিতে সকলেই টান দিয়ে পুণ্য অর্জনের আশায় ব্যস্ত। আর পাশে মন্দিরে থাকা শ্রীজগন্নাথ, শ্রীবলরাম, সুভদ্রাদেবীর বিগ্রহ দর্শন ও মহাপ্রসাদ পাওয়ার জন্য লম্বা লাইনও দেখার মতো। মেলায় আছে বাংলাদেশের স্টলে নানা রকমের জামদানি, বিহারের স্টলে আছে ভাগলপুরি সিল্ক, ফুলিয়ার স্টলে হ্যান্ডলুম শাড়ি, লখনউ চিকনের শাড়ি, শুদ্ধ খাদি গ্রামোদ্যোগ ভাণ্ডারের নানারকম কালেকশন ও গভঃ অব ওড়িশার বয়নিকার স্টলে পাবেন তসর। সম্বলপুরি, কটকি, বমকাই, বিচিত্রাপুরি, ড্রেস মেটেরিয়াল। এছাড়া আছে নানারকমের বুটিক যেমন দেবযানী’স শ্রীমতী বুটিক, বিয়াস বুটিক, মীরা’স কালেকশন, দিয়াশা বুটিক, ব্রততী বুটিক, কৃষ্ণাশ্রী বুটিক আরও অনেক। এবারের ফ্যাশনে খুব চলছে ডিজাইনার ব্লাউজ। তা কিনতে হলে আসতেই হবে মেলায়। নতুন নতুন ডিজাইনের কস্টিউম জুয়েলারির সঙ্গে ফেব্রিকের কাজের গয়না অসম্ভব সুন্দর। বাড়ির চেহারা বদলে দিন টেরাকোটার শোপিস, সিল্ক, উলের পাপোশে। মডার্ন হোম ডেকরের খোঁজ করলে পেয়ে যাবেন মডিউলার কিচেন, চিমনি, গ্যাস ওভেন, মাইক্রোওভেন। কেনাকাটার পর ছোটদের জন্য চলে যেতে পারেন রাইড কর্নারে। ছোটরা উপভোগ করবে রথের মেলার আনন্দকে। সন্ধের টিফিন থেকে শুরু করে রাতের ভুরিভোজ বাদ থাকছে না কোনও কিছুই। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হলে একটু জিরিয়ে নিতে পারেন মেলামঞ্চের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সামিল হয়ে। মেলা চলবে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত। সময় বেলা ১টা থেকে রাত ৯টা।
ছবি: সুফল ভট্টাচার্য