কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
শীত আর গ্লিসারিনের দারুণ বন্ধুত্ব। শীত মানেই ত্বকচর্চায় ক্রিম, লোশন, গ্লিসারিন ইত্যাদি। আধুনিক রূপচর্চার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ অনেকেই বলছেন প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহারই ত্বকের যত্ন নেওয়ার সেরা উপায়। এই বিষয়ে রূপ বিশেষজ্ঞ কেয়া শেঠ জানালেন, ‘গ্লিসারিন শুধু ত্বকের জন্যই নয়, চুলের জন্যও খুবই ভালো। আর শুধু শীতই বা কেন? সারা বছরই ত্বকচর্চায় এই উপাদান ব্যবহার করা উচিত।’ তাই বলে গ্লিসারিন সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়, বললেন কেয়া। তাতে নাকি লাভ কম হয়। আসলে গ্লিসারিন খুবই ঘন একটা তরল। তা সরাসরি ত্বকে লাগালে ভিতর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। অতএব এই উপাদান দিয়ে ত্বকের বা চুলের যত্ন নিতে চাইলে তা কোনও মিডিয়ামের মাধ্যমে ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ অন্য কোনও তরলের সঙ্গে মিশিয়ে তবেই ব্যবহার করতে হবে গ্লিসারিন। এতে বেশি উপকার।
জলে দুধে মিলেমিশে
কেয়া শেঠ জানালেন, সাধারণত আমরা জলের সঙ্গে মিশিয়েই গ্লিসারিন ব্যবহার করি। কিন্তু সাধারণ জলের বদলে গোলাপ জলে গ্লিসারিন মিশিয়ে তা যদি মুখে লাগানো যায় তাহলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। যাঁদের ত্বক খুবই শুষ্ক তাঁরা সারা বছর নারকেল তেলের সঙ্গে এক চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে তা গা-হাতে-পায়ে ও মুখে লাগাতে পারেন। ত্বক নরম ও উজ্জ্বল হবে। শীতে যদি ঠান্ডার জায়গায় বেড়াতে যান তাহলে ক্রিমের সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে ত্বকে লাগান। চামড়া একটুও ফাটবে না। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য দুধের সঙ্গে এক চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে তা মুখে লাগিয়ে নিতে পারেন। ত্বকের পক্ষে এই দুই-ই খুব উপকারী। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বেশিক্ষণ থাকবে।
আর্দ্রতা বজায় রাখুন
গ্লিসারিন ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। তাই চল্লিশোর্ধ্বদের রোজই রাতে শুতে যাওয়ার আগে নাইট ক্রিম বা নারকেল তেলের সঙ্গে এই উপাদান মিশিয়ে মুখে, হাতে, পায়ে লাগানো উচিত। এতে ত্বকের বয়স অনেকদিন পর্যন্ত ধরা থাকবে। চামড়ায় কুঞ্চন ধরবে দেরিতে। তাই বলে সারাদিনে বারবার গ্লিসারিন মুখে লাগাবেন না। দিনে দু’বার তা ব্যবহার করাই যথেষ্ট। গরমকালে একবার করলেও উপকার পাবেন। ত্বকের যত্ন নিতে আমরা টোনার ব্যবহার করি, সেই টোনারের সঙ্গেও গ্লিসারিন মিশিয়ে নিতে পারেন।
দাগ ছোপ দূর করে
ত্বকে অনেক সময় দাগ ছোপ থাকে সেক্ষেত্রেও ওই দাগ বা ছোপের উপর একটু পুরু করে গ্লিসারিনের প্রলেপ দিন। দেখবেন উপকার পাচ্ছেন। চর্মরোগের ক্ষেত্রেও এই উপাদান ভালো কাজ করে। এগজিমা বা ছুলি থাকলে সেই অংশে গ্লিসারিন লাগাতে পারেন। অবশ্যই কোনও মেডিকেটেড ক্রিম, তেল ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে।
চুলের যত্নে
শ্যাম্পু করার পর ১ মগ জলে ১ চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে তা দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুলের জেল্লা বাড়বে। যে কোনও বয়সেই এই টোটকা কাজে লাগবে।
শুধু তাই নয়, গ্লিসারিন দিয়ে চুল ধুলে খুশকিও দূর হয়। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন ব্যবহার করতে পারেন।
রুক্ষ চুলের পক্ষেও গ্লিসারিন খুবই ভালো। চুল নরম হয় এর নিয়মিত ব্যবহারে।
চুলে যদি কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করানো হয়, তাহলেও নিয়মিত গ্লিসারিন লাগালে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে।
হেয়ার প্যাক
নারকেল তেল বা অন্য কোনও চুলে লাগানোর তেল আধ শিশি নিন। বাকি শিশির এক চতুর্থাংশে গ্লিসারিন ঢেলে দিন। ভালো করে ঝাঁকিয়ে তা তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ সপ্তাহে একদিন চুলে লাগান। সারারাত রেখে পরের দিন শ্যাম্পু করতে পারলে সবচেয়ে ভালো ফল পাবেন, নাহলে অন্তত ঘণ্টা তিনেক রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে। দেখবেন চুল মোলায়েম হবে।
মেকআপ সহযোগী
মেকআপ বেস হিসেবেও গ্লিসারিন খুবই ভালো কাজ করে। এতে দুটো উপকার পাওয়া যায়। প্রথমত গ্লিসারিন বেসের উপর মেকআপ ভালো বসে। অনেকক্ষণ স্থায়ী হয়। তা ফুটে ওঠে না। আর দ্বিতীয়ত মেকআপ লাগালে ত্বকের যে ক্ষতি হয় গ্লিসারিন বেস তা খানিকটা হলেও কমিয়ে দেয়। ফলে ত্বক ভালো থাকে। মেকআপ বেস হিসেবে যখন গ্লিসারিন ব্যবহার করবেন তখন তিন ভাগ গ্লিসারিনের সঙ্গে এক ভাগ জল মিশিয়ে বেস তৈরি করে নিন। তাহলেই তা মেকআপের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করবে।
ফাটা গোড়ালির সমাধান
শীতে পা ফাটলে মা কাকিমাদের দেখতাম গ্লিসারিন লাগাতে। কেয়া জানালেন, শুধু পা-ই নয় মুখ, ঠোঁট ইত্যাদি ফাটলেও গ্লিসারিন সমান উপকারী। এতে ক্ষতটা সারে তো বটেই, চামড়াও নরম হয়। ফলে ফাটার প্রবণতা অনেকটাই কমে। ঠোঁট ফাটলে যদি গ্লিসারিন ব্যবহার করতে চান তাহলে তা কিন্তু সরাসরি করতে হবে, বললেন বিশেষজ্ঞ। তখন আর জলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যাবে না। তাতে ফল পাবেন না। এক্ষেত্রে সরাসরি গ্লিসারিন লাগালে অনেক বেশিক্ষণ পর্যন্ত ঠোঁট নরম থাকবে।