উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা...। ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় এই প্রার্থনাই তো করেন সব বোন বা দিদি। ছোট থেকে বড় বা বড় থেকে বুড়ো হয়েও ভাইফোঁটার দিনটি থাকে একইরকম আবেগে পূর্ণ।
আশি ছুঁয়ে ছোড়দিদি অর্থাৎ বর্ণকুমারীর (মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠা কন্যা) কাছ থেকে ফোঁটা নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চিত্রা দেবের ‘ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল’ থেকে জানা যায়, ‘খুব বৃদ্ধ বয়সেও ভাইফোঁটার দিন জোড়াসাঁকোয় এসে কবিকে ফোঁটা দিয়ে যেতেন বর্ণকুমারী। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু পর্যন্ত তাঁদের যোগাযোগ অটুট ছিল।’ রবীন্দ্রনাথের শেষ ভাইফোঁটা সম্পর্কে রানী চন্দের বয়ান: ‘সে এক অপূর্ব দৃশ্য। আজও ভাসে ছবি চোখের সামনে— গৌরবর্ণ একখানি শীর্ণ হাতের শীর্ণতর আঙ্গুলে চন্দন নিয়ে গুরুদেবের কপালে কাঁপতে কাঁপতে ফোঁটা কেটে দিলেন। দুজন দুপাশ হতে ধরে রেখেছি বর্ণকুমারী দেবীকে।’
বিভিন্ন লেখাপত্রে উঠে এসেছে, সেবার ফোঁটা দেওয়ার পর অসুস্থ রবীন্দ্রনাথের বিছানার পাশে চেয়ারে বসেন কবির থেকে তিন-সাড়ে তিন বছরের বড় দিদি বর্ণকুমারী। ভাইয়ের বুকে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে বলেন, ‘দেখ রবি তোমার এখন বয়স হয়েছে, এক জায়গায় বসে থাকবে, অমন ছুটে ছুটে আর পাহাড়ে (কালিম্পং) যাবে না কখনও।’ স্বভাবরসিক কবি তাঁর ছোড়দিদির সঙ্গে রসিকতা করে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘না কক্ষনও আর ছুটে ছুটে যাব না। বসে বসে যাব এবার থেকে।’ বর্ণকুমারী দেবী অবশ্য বলতে থাকেন, ‘না রবি যা বলছি শোন। ছুটে ছুটে আর কোথাও যাবে না তুমি।’ কবি অসুস্থ থাকলেও চারপাশ তখন অনেকটা হাল্কা হয়ে যায় এই ঠাট্টায়।
ভ্রাতৃদ্বিতীয়া চিরকালই বাংলা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবু এসময়ে এসে যেন এই চিরকালীন রীতি খানিক কোণঠাসা। কর্মসূত্রে বা শিক্ষার তাগিদে অনেক পরিবারেই ভাই বা দাদা কিংবা বোন বা দিদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। কালীপুজোর পরে এই দিনটিতে একটা সময় ঘরোয়া হুল্লোড়ে একজোট হতো সব খুদে। বড়বেলায় গুনতিতে কম পড়েছে তারা। দুর্গাপুজোর টানে প্রবাসীরা ঘরে ফেরে ঠিকই। কিন্তু ভাইফোঁটা পর্যন্ত থাকার সময় হয়তো হাতে থাকে না। শুধু ভাইফোঁটার জন্য আসাও হয় না। তাই এখন ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার অনুষ্ঠান বদলাচ্ছে। এপ্রজন্মের প্রতিনিধি ও অভিনেত্রী লহমা ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা হচ্ছিল।
কথায় কথায় লহমা বলছিলেন তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা। তবে নিজের ভাই বা দাদা না থাকুক, তুতো বা সম্পর্কিত দাদা বা ভাইদের সঙ্গে ভাইফোঁটা পালন করেন জমিয়ে। সেখানে সকলে খাওয়াদাওয়া, হইহই করাটাই মুখ্য। অতীত থেকে বর্তমান প্রজন্ম সকলেই যোগ দেয় তাতে। এবছর লহমার মন একটু খারাপ। কারণ ভাই বা দাদাদের সকলেই প্রায় বাইরে। কেউ দেশের বাইরে, কেউ বা শহরের। লহমার কথায়, ‘এবার ভাইরা কেউ নেই। এই প্রজন্মের আমিই একমাত্র যে এখনও দেশে বা এই শহরে রয়েছি। তবে ভাইফোঁটা হবেই। আমাদের আগের প্রজন্মের সবাই আছেন। তাঁদের সঙ্গেই আনন্দ করব।’
তাহলে ভাইদের সঙ্গে কি ভার্চুয়ালি যোগাযোগ হবে? প্রশ্নটা শুনে একরকম লুফে নিলেন লহমা। বললেন, ‘হ্যাঁ এইটা দারুণ প্রস্তাব তো! এটা চাইলে করাই যাই। স্কাইপে সবাই একসঙ্গে আড্ডা দিলে ভাইফোঁটার দিনের খারাপ লাগাটা কাটিয়ে ফেলা যায়। সামনাসামনি না হোক, সবার সঙ্গে সবার মোবাইলেই দেখা হবে! না হলে সত্যিই খুব মিস করব।’
লহমা জানালেন, ভাইফোঁটা রীতি-আচার মেনে হওয়ার পরে আসল মজা খাওয়াদাওয়া ঘিরেই। তাঁর ঠাকুরমা বেঁচে থাকতে প্রত্যেকে নিজের পছন্দমতো খাবার চাইলে সেটা হাজির হতো পাতে। এখন ঠাকুরমা না থাকলেও সেই রীতি বজায় আছে।
ভাইফোঁটায় উপহার আদানপ্রদানও একটা দিক। উপহার নিয়ে কতটা মাথা ঘামান? লহমার কথায়, ‘আমার থেকে যারা ছোট, তারা কিছু দিলেই অসম্ভব ভালো লাগে। দাদাদের কাছে আবদার থাকে। আমার ভালো লাগে বই। দাদারা সাজগোজের জিনিস অত বোঝে না, তাই গল্পের বই সেফ অপশন। একবার এক দাদা ভালো পেন গিফট করেছিল। এখন পেশার তাগিদে চকোলেট খাওয়া বন্ধ। তাই ওরা ভালোই জানে আমায় চকোলেট দিয়ে লাভ নেই। বরং চকোলেটের বদলে আমি কী পাব সেই দরদস্তুর চলতে থাকে ভাইবোনের মধ্যে!