আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় দিনটি শুভ। স্বামী/ পত্নী/ সন্তানের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ। ... বিশদ
গ্রীষ্মের দাবদাহে ঘাম ও অস্বস্তি এড়ানো এককথায় অসম্ভব। এই প্রবল গরম শুধু হিট স্ট্রোক, র্যাশ, ঘামাচি ও গরমগোটা দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, বরং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ইদানীং বদলে গিয়েছে নানা ঋতুর হাবভাব, তার সঙ্গেই বদলেছে আমাদের শরীরের উপর তাদের প্রভাব। যেমন এই গরম আমাদের অজান্তেই তার চোরাগোপ্তা আক্রমণ শানাচ্ছে পায়ের নীচের ত্বকে। ত্বকবিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ক্লিনিকে ক্লিনিকে পা ফাটার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই ভরগরমেও অস্বস্তিতে ফেলে পা ফাটার সমস্যা।
গোটা শীতকাল জুড়ে ত্বকের এই বিড়ম্বনা সইতে হয় কমবেশি সকলকেই। ত্বক স্পর্শকাতর হলে আরও নাজেহাল হতে হয়। তবে গরমেও এমন নাকাল হতে হচ্ছে অনেককেই। অনেক সময় পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে পা ফেটে রক্ত বেরয়। আবার যত্নের অভাবেও গোড়ালি ফাটতে দেখা যায়।
পা ফাটা রুখতে সেই আদ্যিকাল থেকেই নানা ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করে এসেছেন আমাদের আগের প্রজন্ম। তখন কথায় কথায় স্যালোঁ বা পার্লারে যাওয়ার উপায়ও ছিল না। ঘরোয়া উপায়েই ভরসা করতে হতো। এখনও নিজেই একটু সময় বের করে পায়ের যত্ন করলে পা ফাটা এড়াতে পারবেন সব ঋতুতেই। তবে সেসবের আগে পায়ের যত্নের মূল কিছু নিয়ম মেনে চলার কথা বলেন ত্বকের চিকিৎসকরা।
• শীত-গ্রীষ্ম বা বর্ষা, বাইরে থেকে ঘুরে এলে পা ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
• মার্বেলের মেঝে হোক বা অন্য ধরনের মেঝে, ঘরের মধ্যেও হাওয়াই চটি পরে হাঁটতে হবে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগী হলে পা যেন না ফাটে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নইলে ফাটা অংশে জীবাণু ঢুকে ডায়াবেটিক ফুট হওয়ার শঙ্কা অনেকটা বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস থাকলে তো অবশ্যই চটি পরুন ঘরে। হেমম্ত বা শীতের শিশিরের উপর দিয়ে হাঁটলে বা ভেজা ঘাসে হাঁটলে অনেক অসুখ ভালো হয়। তা পা ফাটা প্রতিরোধেও ভালো কাজ দেয়। তবে ডায়াবেটিসের রোগীরা কখনও খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটবেন না।
• শরীরে ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ই-এর অভাবেও গোড়ালি ফাটে। তাই সারাবছর পা ফাটার সমস্যা থাকলে অবশ্যই ক্যালশিয়াম পরীক্ষা করান।
• অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, সেডেন্টারি লাইফস্টাইলের ছাপ পড়ে ত্বকে। অকালে পা ফাটার সেটিও একটি বড় কারণ।
• ঠিক মাপের ও পায়ের বন্ধু এমন উপকরণে তৈরি জুতো পরুন। জুতোর মাপ ভুল হওয়ায় ও পায়ে খারাপভাবে চাপ পড়ার কারণেও পা ফাটে।
কারণ না হয় জানা হল, সচেতন হওয়াও না হয় হল। এবার? সমাধানের অঙ্কও কিন্তু লুকিয়ে আপনার ঘরেই।
মোম ও নারকেল তেল: নারকেল তেল দু’চামচ ও একটি ছোট মোমবাতি সলতে খুলে টুকরো টুকরো করে নিন। এবার অল্প আঁচে ওই মোম ও নারকেল তেল গরম করে নিন। এবার ওই গলা মোম ও তেলের মিশ্রণ পায়ের ফাটা জায়গায় লাগিয়ে পা ঢেকে শুয়ে পড়ুন। কিছুক্ষণ বাদে ওই তেল ও মোমের মিশ্রণ আপনিই পা থেকে ঝরে যাবে। তবে তার জেরে পা খুব নরম থাকবে ও ফাটা জায়গা জুড়তেও সাহায্য করবে।
নারকেল তেল: পা ফাটার সমস্যা থাকলে এক চামচ নারকেল তেল গরম করে ফাটা জায়গায় লাগিয়ে নিন। তারপর পা ঢেকে শুয়ে পড়ুন। দিন ১০-১৫ একটানা এই নিয়ম মানলে ফল পাবেন হাতেনাতে।
লেবুর রস: একটি গামলায় গরম জল নিন। এবার তাতে বডি ওয়াশ বা শ্যাম্পু ও একটি গোটা লেবুর রস মেশান (চাইলে এক চিমটে বেকিং সোডাও মেশাতে পারেন)। এই জলে ১০ মিনিট পা ডুবিয়ে বসে থাকুন। এবার গোড়ালি ঘষার পাথর (পিউমিক স্টোন) দিয়ে গোড়ালি ঘষে নিন। এতে ত্বকের মৃতকোষ ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে। পা ভালো করে মুছে কোনও ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে রাখুন।
রোজ এই নিয়ম মানলে পা ফাটার সমস্যা অনেকটাই কমবে।
পেট্রোলিয়াম জেলি: ঠোঁট ফাটা থেকে গোড়ালি ফাটা— পেট্রোলিয়াম জেলির কাছে কিন্তু এসব সমস্যার আশু সমাধান লুকিয়ে। রোজ শ্যাম্পু মেশানো গরম জলে পা ভালো করে ডুবিয়ে রেখে পিউমিক স্টোন দিয়ে ঘষে পায়ের মৃতকোষ ঝরিয়ে নেওয়ার পর পায়ে ভালো করে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন। তারপর কয়েক ঘণ্টা মোজা পরে থাকুন। এতেও পা ফাটা দ্রুত নিরাময় হবে।
মধুরেণ: পা নরম ও কোমল থাকলে পা ফাটা থেকে অনেকটা নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। পা ডোবানো যাবে এমন পরিমাণ গরম জলে আধ কাপ মতো মধু মেশান। এবার মিনিট ১০ সময় ধরে সেই জলে পা ডুবিয়ে রাখুন। তারপর শুকনো করে পা পরিষ্কার করে অ্যালোভেরা জেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন।
ঘরোয়া উপায়ে যত্নে কিন্তু খুব বেশি উপকরণ বা শ্রম লাগে না। দরকার শুধু মিনিট ১০-১৫ সময়। পছন্দের কোনও ওটিটি দেখতে দেখতে বা নিছক ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে উঁকিঝুঁকি দিতে দিতেও এই যত্ন সারা যায়। বরং গরম জলে পা ডুবিয়ে ঘরোয়া স্পা নিতে নিতে কোনও সিরিজ বা সিনেমা দেখতে বসলে তা বাড়তি আনন্দ যোগ করবে মনে। তাই পদচর্চায় বাড়তি সময়ের প্রয়োজনই নেই, বরং বিনোদন যাপনের সময় কাজে লাগিয়েই গোড়ালিকে করতে পারেন নিষ্কলুষ!