কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। উপার্জন ভাগ্য ভালো। কর্মে উন্নতির যোগ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা মিলবে। ব্যবসা ... বিশদ
এই ভক্তদিগের মধ্যে প্রত্যেকের ভাব স্বতন্ত্র প্রকার। কাহাকেও কালী, কৃষ্ণ, গৌরাঙ্গ প্রভৃতি সাকার উপাসনা করিতে ও কাহাকেও শঙ্কর প্রভৃতি জ্ঞানপথাবলম্বী সাধকদিগের পদচিহ্নানুক্রমে গমন করিতে দেখা যাইতেছে, এবং কাহাকেও বা পরমহংসদেবকে জীবন-মরণের একমাত্র অবলম্বন, সহায়, সম্পত্তি, গুরু, ঈশ্বর ও পরিত্রাতা বলিয়া নিশ্চিন্তে, নিরুপদ্রবে, নির্বিঘ্নে, আনন্দে জীবনযাত্রা নির্বাহ করিতে দেখা যাইতেছে।
এই ভক্তগণ ব্যতীত তাঁহার আরও ভিন্ন ভিন্ন ভাবের অসংখ্য ভক্ত আছেন। কতকগুলি মুসলমান (একজন আমরা জানি, তিনি ডাক্তার), খ্রীস্টান (দুইজনের সহিত আমাদের পরিচয় আছে, একজনের নাম পি.ডি. মিসির, ইনি সন্ন্যাসি-বিশেষ, মৎস্যমাংসত্যাগী, ইহার যোগাদি অভ্যাস আছে, নামেও ভাব হয়; অপর ব্যক্তির নাম উইলিয়ম, ইনি ভক্তিপ্রধান প্রকৃতির লোক, পরমহংসদেবের নিকট অভিপ্রেত আকাঙ্ক্ষা মিটাইয়া এক্ষণে পার্বত্যপ্রদেশে যোগাভ্যাস করিতেছেন), এবং বাউল, কর্তাভজা নবরসিক প্রভৃতি অনেক ভক্তই আছেন। তাঁহারা আপন আপন ভাবেই গুপ্ত সাধন করেন। পরমহংসদেব এইরূপে অনুমান শতাধিক ভক্ত লইয়া কিছুদিন আনন্দের তরঙ্গ ছুটাইয়াছিলেন। কোন দিন বাদ নাই, কোন রাত্রি বাদ নাই, ভক্তসঙ্গে সদাই আনন্দে থাকিতেন। প্রতি সপ্তাহের শনিবারে কোন একজন ভক্তের বাটীতে আসিতেন। তথায় কীর্তন, নৃত্য ও উচ্চ হরিধ্বনিতে সে বাটী ও পল্লী পুলকার্ণবে ভাসাইয়া যাইতেন। তাঁহার হরিনামসঙ্কীর্তনে যে কত পাষণ্ড দলিত হইয়াছে, তাহার সীমা নাই।
পরমহংসদেবের অতিশয় অন্তর্দৃষ্টি ছিল। যাহার যাহা মনে হইত, যে যাহা মনে মনে প্রার্থনা করিত, তিনি তখনই তাহা সম্পূর্ণ করিয়া দিতেন। প্রত্যেক ভক্ত এই বিষয়ে বিশেষ আশ্চর্যান্বিত হইয়াছেন। তাঁহার এই শক্তি পরীক্ষা করিবার জন্য জনৈক বীরাচারী ভক্ত নিজ বাটীতে বসিয়া তাঁহাকে মনে মনে আহ্বান করিবামাত্র পরমহংসদেব তৎক্ষণাৎ তথায় আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিলেন। সুরেশবাবু তিনদিন পরীক্ষা করেন। একদিন তাঁহাকে দেখিবার জন্য সুরেশবাবুর মন বড়ই চঞ্চল হইয়া উঠে। তিনি আফিসে যাইয়া কাজকর্ম করিতে পারিলেন না। সুতরাং তাঁহাকে দক্ষিণেশ্বরে যাইতে বাধ্য হইতে হইয়াছিল। তিনি তথায় উপস্থিত হইয়া দেখিলেন যে, পরমহংসদেব একখানি গাড়ি আনাইয়া সুরেশবাবুর বাটীতে আসিবার উদ্যোগ করিতেছিলেন। সুরেশকে দেখিয়া বলিলেন, ‘‘তুমি যদি আসিয়াছ, তবে আর কেন যাইব? তোমায় দেখিবামাত্র বড়ই উতলা হইয়াছিলাম।’’ সুরেশবাবু তাঁহাকে সমভিব্যাহারে লইয়া নিজ বাটীতে আসিয়াছিলেন আরও দুইদিন তিনি পরমহংসদেবের সাক্ষাৎকার প্রয়োজন বিবেচনায় কাঁদিয়াছিলেন; তিনি দুই দিবসই আসিয়া প্রয়োজন সিদ্ধ করিয়াছিলেন।
পরমহংসদেব এইরূপে শিষ্টের পালন এবং পাষণ্ড দলন করিয়া ভগবৎ গুণাকুকীর্তনপূর্বক দিনাতিবাহন করিতেছিলেন। ঠাকুরবাড়ির সকল কর্মচারীরাই পরমহংসদেবকে পূর্বের ন্যায় শ্রদ্ধা-ভক্তি করিত। মথুরবাবুর পুত্র ত্রৈলোক্যবাবুও ভক্তির ত্রুটি করিতেন না; কিন্তু পিতার যে প্রকার ভক্তি ছিল, তাহার শতাংশের একাংশও তিনি দেখাইতে পারেন নাই। বিষয়ী লোকেরা যেমন সচরাচর হইয়া থাকে, ইনি সেই প্রকার ছিলেন। ঠাকুরবাড়ির উদ্যানটি তিনি দুইভাবে ব্যবহার করিতেন। তাঁহার সহিত কলিকাতার অনেক রকমের লোকই যাইতেন। তাঁহারা বাগানে আমোদ-আহ্লাদেই দিন কাটাইতেন, এবং মধ্যে মধ্যে পরমহংসদেবকে তথায় ডাকাইয়া পাঠাইতেন।