কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। উপার্জন ভাগ্য ভালো। কর্মে উন্নতির যোগ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা মিলবে। ব্যবসা ... বিশদ
মহারাজ—হচ্ছে না, হবে কি করে? ঠাকুর যা বলছেন, তা করছ? আর বলছ ব্যাকুলতা হচ্ছে না? কি করে ব্যাকুলতা হবে? ঠাকুর যা যা বলেছেন, সেগুলো করে দেখো। নিজে নিজে করতে হবে। অনেক জন্মের সাধনার পর সিদ্ধি লাভ করে। যতদিন বাঁচবে, অনন্তকালের তুলনায় তা এক ফোঁটাও না। অনন্তকালরূপ মহাসমুদ্র। আঁতে ঘা লাগলে ভক্তি-টক্তি উবে যাবে। বহুজন্ম চেষ্টা করতে করতে ক্রমে তাঁতে রুচি হয়, তাঁর কথা চিন্তা করতে করতে তাঁতে ভক্তি হয়। ভক্তির পরাকাষ্ঠায় তাঁর কাছে গিয়ে পৌঁছায়। তাঁকে লাভ করার যে চেষ্টা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যে চেষ্টা তার নাম সংগ্রাম। চেষ্টা করবে, বাকীটা ঠাকুর করে দেবেন। চেষ্টা করলে তিনিই সহায় হবেন।
ভক্ত—৫০-৬০ বছর এই সংসার করেছি, আবার ঠাকুরের নামও করেছি।
মহারাজ—৫০-৬০ বছরতো ফালতু কাটিয়েছ সংসার করেছ, প্রতিপালন করেছ। ঠাকুরের নাম যা করেছ তা অতি সামান্য। কেউ বাঁধেনি। ‘নিজ হস্তে রজ্জু করে আকর্ষণ।’ একজন লোক একটা ভাল্লুককে থাম ভেবে জাপটে ধরে চিৎকার করছে যে ভাল্লুকটা ছাড়ছে না। তখন ভাল্লুকটা বলল, ‘আরে ভাই, ম্যায় তো তুমকো ছোড় দিয়া, তুম তো মুঝে নেই ছোড়া।’
ভক্ত—চিন্তা করতে করতে দর্শন হলে কি বোধে বোধ হয়?
মহারাজ—চিন্তা করতে করতে মন শুদ্ধ হয়। মন এবং ইন্দ্রিয়ের এক যোগে যে কাজ হয়, তখন মন কাজ করে, অনেক সাধনার পর মন শুদ্ধ হয়। সেই মন যখন আত্মা তখন তাতে আত্মতত্ত্ব ছাড়া কিছু চিন্তা হয় না, তখন তা শুদ্ধ মন। এই শুদ্ধ মনে যে ভগবানের চিন্তা হয়, তাকে বলে বোধে বোধ হওয়া।
ভক্ত—মনের জোর কি করে বাড়ে?
মহারাজ—Exercise করলে যেমন গায়ের জোর বাড়ে, তেমনি exercise করলে মনের জোর বাড়ে। অশুভ চিন্তা আসছে, তাকে আসতে দেব না। শুভ চিন্তা দিয়ে তাকে ঢেকে দেব। হরি মহারাজ বলতেন যতক্ষণ না ঘুমিয়ে পড়বে ততক্ষণ বেদান্ত চিন্তা দিয়ে মনকে ভরিয়ে তুলবে যাতে অশুভ চিন্তা মাথা চাড়া দিয়ে না ওঠে।
ঠাকুর বলেছেন মনটা হচ্ছে ধোপা ঘরের কাপড়, তাকে যে রঙে চোবাবে সেই রং হবে। সেইজন্য যাতে ভাল রং মনটায় ঢোকে তার চেষ্টা করতে হবে। খারাপ বই পড়লে সেই সব চিন্তা মনে আসে, খারাপ সিনেমা দেখলে মনে সেই সব কথা আসে। তাই ঠাকুর সাধুসঙ্গ, সৎসঙ্গের ওপর জোর দিয়েছেন। সাধু মানে সন্ন্যাসী নয়, যারা ভগবানের কথা চিন্তা করে। সৎসঙ্গ যত করবে, তত মনটা সদ্ভাবে ভাবিত হবে।
অনেকে বলেন, এখানে যখন আসি মনটা ভাল লাগে, কেন? কারণ এখানে কোন খারাপ আলোচনা হয় না। এইজন্য বাড়িতেও প্রতিজ্ঞা করবে সবসময় ভাল প্রসঙ্গ আলোচনা করব। ওরকম একটা বাতাবরণ সৃষ্টি করবে। যাতে যা দরকার তা দিলে তবে তা বেড়ে উঠবে।
ভক্ত—বাড়িগুলোকে কি আশ্রমের মত করা যায় না?
মহারাজ—করা তো দরকার, নিশ্চয়ই দরকার। বাড়ীকে তো আশ্রমই বলি, গৃহস্থ-আশ্রম যাকে আশ্রয় করে মানুষ ভগবানের দিকে যায়। আগে নিয়ম ছিল প্রত্যেক বাড়ীর একজন গৃহদেবতা থাকবে। পূজা-অর্চনা হোত, সবাই প্রসাদ পেত। একটি অগ্নি বাড়ীতে জ্বলত,—অগ্নি পতি। দেবতাকে কেন্দ্র করে সব, তিনিই সব। এটা বাড়ীতে করতে হবে। আমার আমার করলেই আমার আমার হবে, তাঁর তাঁর করলেই তাঁর হবে।
ভক্ত—কৃপা কি সাধন সাপেক্ষ নয়?
মহারাজ—না, তিনি কৃপা করবেন কি করবেন না তাঁর উপর। তুমি সাধন করবে কি করবে না তোমার উপর। বাইবেলে আছে, দিন মজুরে এত পাবে,—কেউ সকালে, কেউ দুপুরে, কেউ সন্ধ্যায় কাজ করতে এসেছে। মজুরি সবাই এক রকমই পেল, আগে যারা এসেছে তারা ক্ষুব্ধ। মালিক বললেন, ‘বাপু, তোমাদের তো কম দিইনি?’ আবার গল্প আছে, একজন জঙ্গলের ভিতর বিপন্ন হয়ে গাছে উঠেছে। দেখল, শবসাধক শবের উপর বসে জপধ্যান করছে, বাঘে এসে তাকে নিয়ে গেল। সে ভাবল, এই তো সুযোগ, আমি বসে যাই। মায়ের দর্শন হল।