কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। উপার্জন ভাগ্য ভালো। কর্মে উন্নতির যোগ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা মিলবে। ব্যবসা ... বিশদ
এরপর ধ্যানের পথ বা রাজ-যোগ। এতে মূল সংগ্রাম হলো মনে যে ইন্দ্রিয় বিষয়ের চিন্তা ওঠে তাকে নিরোধ করা ও মনকে উচ্চতর চিন্তার খাতে প্রবাহিত করা। অধিকাংশ মানুষের কাছেই এটি অসম্ভব সাধনা। পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া এই সাধনা প্রচেষ্টায় মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই এই পথের প্রধান ব্যাখ্যাতা, পতঞ্জলি, একে পর পর কয়েকটি স্তরে ভাগ করেছেন। প্রথমে ‘যম’ ও ‘নিয়ম’ অর্থাৎ সাধারণ ও স্বতন্ত্রভাবে নৈতিক আচরণ। সাধক সর্বদা অহিংসা, সত্য, ব্রহ্মচর্য, অস্তেয় (অচৌর্য) ও অপরিগ্রহ অভ্যাস করবেন; তিনি স্বাবলম্বী হতে শিখবেন; শুচিতা ও সন্তোষ অভ্যাস করবেন: তত্ত্বগুলি গভীর অধ্যয়ন, মনন ও নিদিধ্যাসন সহায়ে আয়ত্ত করবেন; সর্ব-যোগেশ্বর পরমেশ্বরে সবকিছু সমর্পণ করবেন। ঐ সব আয়ত্ত করার পর সাধক নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে আসন করে বসে শ্বাস-ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ শিখবেন; এর অর্থ বিশ্বশক্তির যে প্রবাহ চলছে শরীর ও মনের অভ্যন্তরে তার (প্রাণের) নিয়মন করবেন। একেই বলে প্রাণায়াম। বেশ কিছু ব্যক্তি এর ওপর অত্যধিক বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলে—এর ভিতর যে সব শক্তি ক্রিয়া করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ফলে সাময়িক অথবা চিরস্থায়ী মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটে যায়। পতঞ্জলি তাই তাঁর আধ্যাত্মিক জীবন-চর্যায় প্রাণায়ামের উপর কেবল অল্প গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজযোগের পরবর্তী সোপান দুটি হল—বাহ্য-বস্তু থেকে ইন্দ্রিয়ের প্রত্যাহার করে কোন একটি আধ্যাত্মিক তত্ত্বে মনকে একাগ্র করে রাখা। যখন এই একাগ্রতা গভীরতা লাভ করে তখন সাধক নিজেকে পুরুষ বা আত্মারূপে উপলব্ধি করে।
তৃতীয় পথ ভক্তি-যোগ। এখানেও সাধনার প্রয়োজন আছে। এতে ভক্তের সমস্ত প্রেরণাকে ঈশ্বরের দিকে মোড় ঘুরিয়ে দেবার উপর জোর দিতে বলা হয়েছে। জগতের প্রতি ভালবাসাকে ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসায় পরিণত করতে হবে। ত্যাগের দ্বারা ঘৃণাকে এবং ঈশ্বরে আত্ম-সমর্পণের মাধ্যমে ভয়কে জয় করতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে সর্বদা ঈশ্বরের স্মরণ মনন চাই। এর জন্য ভক্ত শব্দ প্রতীক বা মন্ত্র জপের সহায়তা নিতে পারেন। মন্ত্র হলো সংক্ষিপ্ত গূঢ় সূত্র। এছাড়া আছে স্তব ও ভক্তিমূলক সঙ্গীত একটু বেশি সময় দিয়ে করতে হয়। এসবের সহায়তায় ভক্তকে সর্বদা ঈশ্বরের স্মরণ মনন করতে হবে। এর পরিণতি, তিনি ঈশ্বরের কৃপায় আধ্যাত্মিক জীবনে সকল বাধা অতিক্রম করে তাঁর দর্শন লাভ করেন।
জ্ঞান-যোগের ক্ষেত্রে আমরা দেখি আত্মোপলব্ধি অর্থাৎ দুঃসাহসিক আধ্যাত্মিক অভিযানে অগ্রসর হতে গেলে সাধকের অধিকতর পবিত্রতা ও যোগ্যতা প্রয়োজন। আত্ম-সংযম, অনন্ত সহিষ্ণুতা ও বিশ্বাস তাঁর থাকা চাই; আর চাই মনের একাগ্রতা সাধনের ক্ষমতা। আরও চাই নিত্য ও অনিত্য বস্তুর পার্থক্য বুঝার ক্ষমতা এবং ইহ পরকালের সকল সুখভোগের ইচ্ছা ত্যাগের সামর্থ্য। সবশেষে তাঁর থাকা চাই ‘মুমুক্ষুত্ব’, সব বন্ধন থেকে মুক্তির তীব্র ইচ্ছা। এসব গুণের অধিকারী হওয়া খুব সহজ কথা নয়।
‘জ্ঞান’ কোন পুঁথিগত বিদ্যা নয়। উপনিষদে দুই প্রকার ‘বিদ্যা’র কথা বলা হয়েছে, ‘পরা’ ও ‘অপরা’—উচ্চ ও নিম্নস্তরের ‘অপরাবিদ্যা’ লাভ হয় ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি ও অনুমানের মাধ্যমে। পুস্তকাদি পাঠ এই বিদ্যার অন্তর্গত। চরম সত্যের বা অক্ষর পুরুষের স্বজ্ঞায় অপরোক্ষ অনুভূতিই হচ্ছে ‘পরবিদ্যা’র বিষয়। জ্ঞানযোগের লক্ষ্যই হলো এই জ্ঞানাতীত অবস্থার অভিজ্ঞতা লাভ—দার্শনিক বিষয়ের চুলচেরা তর্ক বিচারের প্রবণতা নয়, যা প্রায়ই দেখা যায়। প্রথমে আধ্যাত্মিক সত্য সম্বন্ধে গুরুর কাছ থেকে অধ্যয়ন বা ‘শ্রবণ’ করতে হয়। এই সত্যগুলি উপনিষদের চারটি ‘মহাবাক্যে’ সূত্রাকারে উল্লিখিত হয়েছে।