উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য, ব্যবসায় গোলোযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
আমার সেই মা তুমি। যেই মা আমার ব্রহ্মাণ্ড-ব্যাপিনী, সেই মা-ই তুমি। যেই মা আমার ব্রহ্মাণ্ড-পালিনী, সেই মা-ই তুমি। যেই মা দেশের দুর্ভাগ্য ঘুচাইবে, সেই মা যে তুমি! যেই মা জাতির অশ্রু মুছাইবে, সেই মা যে তুমি! ছোট বড় সকলকে যে মাতৃ-স্নেহ দান করিবে, সকলকে যে বুকের স্তন্যে জীবন্ত করিবে, সকলকে যে অফুরন্ত ভালবাসা দিয়া মানুষ করিবে, সেই মা যে তুমি। তোমারই নিকটে জাতির ভিক্ষা জ্ঞান, জাতির প্রার্থনা শক্তি, জাতির দাবী অখণ্ড-মনুষ্যত্ব।
জ্ঞানরাজ্যের অধিকার আমাদের ন্যায় তোমাদেরও অবারিত। তোমরা নারী বলিয়া জ্ঞান আহরণে বাধা দিবার অধিকার কাহারও নাই। জ্ঞানপথে তোমাদের সমক্ষে যত বাধা আসিয়া জুটিয়াছে, তোমার মা সেইগুলিকে আজ আস্বীকার কর। যত বিঘ্নই জ্ঞানার্জ্জনকে কষ্টকর করিয়া থাকুক না কেন, সিংহ-বাহিনীর বিক্রমে সব-কিছু অগ্রাহ্য কর। জ্ঞান লাভের জন্য আজ উন্মাদিনী হও, জ্ঞানের পরশমণি আজ নারী-সমাজের আমূল পরিবর্ত্তন সাধিত করুক।
শিক্ষার যখন সময়, তখনই তোমরা সংসারধর্ম্ম গ্রহণ করিয়া বিষয়-ব্যাপারে বিজড়িত হইয়া পড়িতেছ। ইহা তোমাদের জ্ঞান-সাধনার এক অতি প্রবল অন্তরায়। কিন্তু এই বাধাকেও সুকৌশলে এড়াইতে হইবে। উচ্চাকাঙ্ক্ষার শক্তিতে তোমাদিগকে এই বাধাও জয় করিতে হইবে। নিজের বিদ্যানুরাগের দ্বারা স্বামীর বিদ্যানুরাগকে প্রজ্জ্বলিত করিতে হইবে এবং অবিবাহিত অবস্থায় যে জ্ঞানকে অনুশীলন করিতে হইত একাকিনী, বিবাহিত অবস্থায় তাহার অনুশীলন করিতে হইবে সমবেত ভাবে। সংসার-ধর্ম্ম জ্ঞানের বাধা কিন্তু সংসার সত্ত্বেও জ্ঞানলাভ অসম্ভব নহে।
দাম্পত্য জীবনে জ্ঞানের সাধনাকে অধিকতর সহজ ও সম্ভব করিয়া তুলিবার জন্য তোমাদের মধ্যে আরও একটা জিনিস চাই। তাহা হইতেছে সংযম। তোমাদিগকে প্রাণপণ প্রযত্নে সংযমের শক্তি অর্জ্জন করিতে হইবে। যে অসংযমের বিষময় ফলে স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক ভালবাসা একটা কদর্য্য মনোবৃত্তি মাত্রে পরিণত হয়, যার অকল্যাণময় প্রভাবে অবাঞ্ছনীয় সন্তান-সন্ততির দল একপাল শূকরছানার মত প্রাদুর্ভূত হইয়া গার্হস্থ্যমন্দির বিষ্ঠামূত্রে অপবিত্র করে, সেই অসংযমের সকল কারিকুরি তোমাদিগকে ভাঙ্গিয়া দিতে হইবে,—অসংযমের বিষদন্ত তোমাদিগকে অতি যত্নে, অতি সন্তর্পণে উৎপাটিত করিতে হইবে।