উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য, ব্যবসায় গোলোযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
সাক্ষিস্বরূপ আত্মায় আরোপিত সমস্ত কল্পিত বাস্তব বোধ বা মিথ্যাত্ববোধ করিতে পারিলে এই জীব স্বয়ং পূর্ণ অদ্বয় অক্রিয় পরব্রহ্মরূপে প্রতীত হয়।
সৎস্বরূপ নির্বিকল্প পরমাত্মা ব্রহ্মে চিত্তবৃত্তি সমাহিত হইলে নামরূপাত্মক এই সংসার আর কিছু মাত্র দেখা যায় না। ব্রহ্মানুভূতির পর দৃশ্যপ্রপঞ্চ নামে মাত্র অবশিষ্ট থাকে। (উহা আর আত্মদৃষ্টির বাধক হয় না।) এক ব্রহ্মবস্তুতে ‘জগৎ আছে এইরূপ কল্পনা’ মিথ্যা। অপরিণামী কার্যকারণশূন্য এবং নাম-জাতি-গুণ-ক্রিয়াশূণ্য ব্রহ্মে ভেদ কোথা হইতে আসিবে? নির্বিকার নিরাকার নির্বিশেষ এবং দ্রষ্টা-দর্শন-দৃশ্য প্রভৃতি-ভাবশূন্য এক ব্রহ্মবস্তুতে ভেদ কোথা হইতে আসিবে?
নির্বিকার নিরাকার নির্বিশেষ এবং মহাপ্রলয়কালীন সমুদ্রের ন্যায় অত্যন্ত পরিপূর্ণ এক ব্রহ্মবস্তুতে ভেদ কোথা হইতে আসিবে? আলোকের মধ্যে অন্ধকারের ন্যায়, যাহাতে ভ্রমের কারণ অজ্ঞান একেবারে বিলীন হইয়া যায়, সেই অদ্বিতীয় নির্বিশেষ পরম তত্ত্বে ভেদ কোথা হইতে আসিবে? অদ্বিতীয় পরমতত্ত্বে ভেদের প্রসঙ্গ কিরূপে উঠিতে পারে? সুখরূপা সুষুপ্তিতে কে ভেদ দর্শন করিয়া থাকে? আত্মজ্ঞানলাভের পূর্বেও সৎস্বরূপ নির্বিকল্পে ব্রহ্মে [কোন কালেই] বিশ্ব বর্তমান থাকে না; যেমন রজ্জুতে-দৃষ্ট-সর্প রজ্জুতে কোন কালে ছিল না, নাই ও থাকিবে না; যেমন মরীচিকায় এক বিন্দু জলও কোন কালে থাকে না সেইরূপ (আত্মাতে জগৎ কোনও কালে থাকে না)।
দৃশ্যমান ভেদ মিথ্যা (অনির্বচনীয়), অদ্বৈত ব্রহ্ম বস্তুই সত্য; স্বয়ং শ্রুতি এই উপদেশ দেন। ভেদ যে মিথ্যা ও এক অদ্বৈতই আছেন সুষুপ্তিকালে তাহা সকলের অনুভব হয়। বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ রজ্জুসর্পাদিতে আরোপিত বস্তুকে অধিষ্ঠানের সহিত অভেদরূপে দর্শন করিয়া থাকেন। বিকল্প ভ্রমকে আশ্রয় করিয়া বর্তমান থাকে। এই বিকল্প (জগৎপ্রপঞ্চ) চিত্তকে আশ্রয় করিয়া বর্তমান থাকে। চিত্ত না থাকিলে কোন ভেদ দৃষ্ট হয় না। অতএব তোমার যথার্থ-স্বরূপ পরমাত্মায় চিত্তকে সমাহিত কর।
ব্রহ্মনিষ্ঠ সাধক সমাধিকালে অচিন্ত্যমাহাত্ম্য জ্ঞানস্বরূপ দুঃখরহিত সুখস্বরূপ উপমারহিত অসীম নিত্যমুক্ত ক্রিয়ারহিত সীমাহীন-আকাশতুল্য নিষ্কল নির্বিকল্প পূর্ণব্রহ্মকে অন্তঃকরণে (স্বীয় স্বরূপের সহিত অভিন্নরূপে) অনুভব করেন। বিদ্বান্ ব্যক্তি সমাধিকালে কার্যকারণের অতীত (কার্যকারণের দ্রষ্টা), অবিষয়রূপে জ্ঞেয়, নির্বিকার, নিরুপম, প্রমাণের অবিষয়, বেদপ্রমাণসিদ্ধ, সর্বদা অহংবোধের মধ্যে প্রকাশিত পূর্ণব্রহ্মকে অন্তরে অনুভব করেন। অজর, অমর, অভাববোধবর্জিত, অচঞ্চল-সমুদ্রতুল্য, অবর্ণনীয়, গুণদোষরহিত, শাশ্বত, শান্ত এবং অদ্বিতীয় পূর্ণব্রহ্মকে বিদ্বান্ ব্যক্তি হৃদয়ে অনুভব করেন। একাগ্রচিত্তে স্বীয় প্রত্যগাত্মাতে অখণ্ড-আনন্দরূপ-ঐশ্বর্যযুক্ত পরমাত্মাকে অনুভব করিয়া জন্মজন্মান্তরের সংস্কাররূপ-দুর্গন্ধযুক্ত ভববন্ধন ছিন্ন কর। সাধনাসহায়ে মনুষ্যজন্ম সফল কর। সকল উপাধিশূন্য, সচ্চিদানন্দ, অদ্বয়, নিজের মধ্যে বর্তমান আত্মাকে চিন্তা কর। [এই প্রকার স্বরূপচিন্তনের ফলে] আর সংসারে পুনরায় জন্মগ্রহণের সম্ভাবনা থাকিবে না।
মৃতদেহে যেমন অভিমান থাকে না, সেইরূপ ব্যবহারকালেও প্রারব্ধ কর্মফলের অনুভব বশতঃ ছায়ার ন্যায় আভাসরূপে পরিদৃষ্ট এই শরীরে ব্রহ্মনিষ্ঠ ব্যক্তি পুনরায় অভিমানবশতঃ আসক্ত হন না।