সঞ্জয় সরকার, কলকাতা: ফুটবল মাঠে বাংলাকে ফের টেক্কা দিল কেরল। সদ্য আই লিগ চ্যাম্পিয়ন গোকুলাম এফসি’র কাছে অসহায় আত্মসমপর্ণ এটিকে মোহন বাগানের। আর এই ফলের পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে উঠল এক পোস্ট, ‘গরীবের ফুটবল বনাম বড়লোকের ফুটবল...। দিনের পর দিন শুধুই ভালো টেলিকাস্ট, ভালো মাঠ আর কাড়িকাড়ি টাকার বিনিময়ে ভারতীয় ফুটবলকে রসাতলে ঠেলে দিচ্ছে এক সংস্থা। অথচ খেলার মানের কোনও উন্নতি হচ্ছে না।’ ঠিকই বলেছেন সেই পোস্টের মালিক। 
ভুলে ভরা রক্ষণ। উইং ব্যাকদের বোঝাপড়ার অভাব। মাঝমাঠ অথৈবচ। আপফ্রন্টে সুযোগ নষ্টের প্রদর্শনী। আর তাই এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই মুখ থুবড়ে পড়ল এটিকে মোহন বাগান। আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের কাছে এই হার বহুদিন মনে রাখতে হবে প্রীতম কোটালদের। কেরলের ক্লাবটির হয়ে জোড়া গোল লুকা মাজচেনের। এছাড়া স্কোরশিটে নাম তোলেন যথাক্রমে রশিদ ও জিতিন। মোহন বাগানের দুই গোলদাতা প্রীতম কোটাল ও লিস্টন কোলাসো। 
প্রথমার্ধেই তিন গোলের লিড নিতে পারত সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। দু’বার গোলের কাছাকাছি পৌঁছেও লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ রয় কৃষ্ণা। ১৮ মিনিটে তাঁর শট পোস্টে ধাক্কা খায়। প্রথমার্ধের শেষলগ্নে তিরি চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তেই সমস্যা বাড়ে ফেরান্দো-ব্রিগেডের। জানা গিয়েছে, লিগামেন্টে চোট লেগেছে স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের। ফলে আট মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। দ্বিতীয়ার্ধের ১৫ মিনিটের স্পেলে ম্যাচ পকেটে পুরে নেয় গোকুলাম। ৫০ মিনিটে রক্ষণের ব্যর্থতায় প্রথম গোল হজম মোহন বাগানের। জামানের পাস পেয়ে জাল কাঁপাতে ভুল হয়নি লুকার (১-০)। আশ্চর্যের বিষয়, সেই সময়ে বাগানের কোনও ডিফেন্ডারই জায়গায় নেই। পিছিয়ে পড়ার তিন মিনিটের মধ্যেই সমতায় ফেরে মোহন বাগান। লিস্টনের কর্নার থেকে গোল প্রীতমের (১-১)। তবে সমতায় ফেরার চার মিনিটের মধ্যেই ফের গোল হজম সবুজ-মেরুনের। ৫৭ মিনিটে ফ্লেচারের পাস ধরে অমরিন্দরকে হার মানান রশিদ (২-১)। ৬৫ মিনিটে দলের তৃতীয় তথা নিজের দ্বিতীয় গোল লুকার (৩-১)। ম্যাচে দু’গোলে পিছিয়ে পড়ে মরিয়া চেষ্টা চালায় মোহন বাগান। ৮০ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে দর্শনীয় গোলে ব্যবধান কমান লিস্টন কোলাসো (৩-২)। তবে ৮৯ মিনিটে মোহন বাগান কফিনে শেষ পেরেকটি পোঁতেন জিতিন (৪-২)। 
ম্যাচের পর আইএসএলের সমালোচনায় মুখর হন গোকুলামের কোচ ভিনসেঞ্জো আলবার্তো। তিনি বলেন, ‘এই ফল প্রমাণ করল, আইএসএল এবং আই লিগে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। অথচ জাতীয় দলে ব্রাত্য আমাদের ছেলেরা। এবার এটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।’  এটিকে মোহন বাগানের কোচ হুয়ান ফেরান্দোর মন্তব্য, ‘প্রথমার্ধে প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ফল অন্যরকম হতেই পারত। তিরির চোট পেয়ে মাঠ ছাড়াটাই টার্নিং পয়েন্ট। তবে এই হার ভুলে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।’ 
এটিকে মোহন বাগান: অমরিন্দর, প্রবীর, তিরি (আশুতোষ/রবি বাহাদুর), প্রীতম, শুভাশিস, লিস্টন, লেনি (কিয়ান), কাউকো, মনবীর, উইলিয়ামস, রয় কৃষ্ণা।