বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
শোনা যাচ্ছিল, ক্রমশ খোঁয়াড়ে পরিণত বাইশ গজে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে নাকি একশো পেরনোও মুশকিল। কে ভেবেছিল, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যাবতীয় বিচার বিশ্লেষণ এভাবে ধুলোয় গড়াগড়ি খাবে! ক্রিকেট দিগ্গজদের হেলাফেলার চিত্রনাট্যকে অদূরে গঙ্গায় ডুবিয়ে ছাড়বেন দুই কিউয়ি ওপেনার? দিনের শেষে স্কোরবোর্ডটাকেই অবিশ্বাস্য দেখাচ্ছে। ভারতের ৩৪৫ রানের জবাবে নিউজিল্যান্ড বিনা উইকেটে ১২৯। স্পিনের স্বর্গরাজ্যে ৫৭ ওভার হাত ঘুরিয়েও অশ্বিন, অক্ষর, জাদেজাদের প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য।
পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছর আগে ভাইজাগে শেষবার বিদেশি দল হিসেবে ওপেনিং জুটিতে পঞ্চাশের গণ্ডি টপকেছিল ইংল্যান্ড। আর এদিন দুই কিউয়ি ওপেনারই ফিফটি প্লাস রানে অপরাজিত, যা অবধারিতভাবে রাতের ঘুম কাড়বে কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের। এমন নয় যে অশ্বিনরা খারাপ বল করেছেন। আসলে উইল ইয়ং ও টম লাথাম ধৈর্যের পরীক্ষায় রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দৃঢ়তার সামনে ভারতের তিন স্পিনার মিলে ৪১ ওভার বল করেও উইকেটহীন থেকেছেন। আবার রিভার্স স্যুইং না মেলায় ইশান্ত, উমেশকেও নির্বিষ লেগেছে। কে বলবে, কোনওরকম প্রস্তুতি ম্যাচ ছাড়াই টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন উইলিয়ামসনরা? ভাবাই যায়নি, এমন দাঁতে দাঁত চাপা লড়াই ফুটে উঠবে ইয়ং-লাথামের ব্যাটে। আচমকা নীচু হচ্ছিল ডেলিভারি। গড়িয়ে যাচ্ছিল বল। ফুটমার্কে বল ফেলে ভারতের দুই ‘রবি’র বিধ্বংসী মূর্তি দেখার অপেক্ষায় বাজছিল ঢাক, ঢোল, ভেঁপু। নীল রঙের জার্সিতে জাতীয় পতাকা হাতে উৎসবের আমেজে ছিলেন দর্শকরা। পড়ন্তবেলায় বেলুনে পিন ফোটার ভঙ্গিতে চুপসে গেল!
অথচ, সকালে বোঝাই যায়নি ভারতীয় শিবিরকে এমন টেনশন উপহার দেবে নিউজিল্যান্ড। শ্রেয়স আয়ারের দাপটে চড়চড় করে উঠছিল রানের মিটার। দিনের প্রথম বলটাই পায়ের কাছে পেয়েছিলেন মুম্বইকর। নিমেষে বাউন্ডারিতে পাঠাতে ভুল করেননি তিনি। সেই ছন্দ বজার রেখে ডিপ পয়েন্টে বল ঠেলে দু’রান নিয়ে অভিষেকেই পূর্ণ করেন শতরান। স্পর্শ করেন গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের নজির। ১৯৬৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই গ্রিন পার্কেই আবির্ভাবে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ভিশি। ৫২ বছর পর তারই পুনরাবৃত্তি ঘটালেন শ্রেয়স। তবে দুরন্ত ইনিংসের পরও থাকছে আপসোস। শ্রেয়সের কাছে প্রত্যাশা ছিল ‘ড্যাডি সেঞ্চুরি’র, যা কিনা ভারতকে পৌঁছে দেবে চারশোর ওপারে। কিন্তু, তা হল না। টিম সাউদিকে চামচে মারতে গিয়ে কভারে ক্যাচ তুলে কিউয়িদের ম্যাচে ফেরার পথ খুলে দেন তিনি। টেস্টের একনম্বর দল হাতছাড়া করেনি সেই সুযোগ। ৮৭ রানে পড়ল ভারতের শেষ ছয় উইকেট। টানা ১১ ওভারের দুরন্ত স্পেল করলেন সাউদি। নিলেন কেরিয়ারের ১৩তম পাঁচ উইকেট। যার মধ্যে থাকল ঋদ্ধিমানের খোঁচাও। বঙ্গসন্তানের সফল প্রত্যাবর্তনের রাস্তায় যা কাঁটা ছড়িয়ে দিল অনেকটাই!
এখনও ভারতের ঝুলিতে রয়েছে ২১৬ রানের লিড। তবে ভুললে চলবে না, উইলিয়ামসন, রস টেলরের মতো অভিজ্ঞরা নামবেন এরপর। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তাজ যে সহজে আসেনি, তা বুঝিয়েই চলেছে কিউয়িরা। অবশ্য শনিবার সকালে চটজলদি দুটো-তিনটে উইকেট ম্যাচে ফেরাতেই পারে ভারতকে। তখন আবার চাপে পড়ে যাবে বিপক্ষ। গ্রিন পার্কের প্রথম টেস্ট আপাতত সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলির মেজাজেই এগিয়ে চলছে।
দ্বিতীয় দিনের স্কোরবোর্ড-ভারত (২৫৮-৪ থেকে): শ্রেয়স ক ইয়ং বো সাউদি ১০৫, জাদেজা বো সাউদি ৫০, ঋদ্ধিমান ক ব্লুন্ডেল বো সাউদি ১, অশ্বিন বো আজাজ ৩৮, অক্ষর ক ব্লুন্ডেল বো সাউদি ৩, উমেশ অপরাজিত ১০, ইশান্ত এলবিডব্লু আজাজ ০, অতিরিক্ত ১২, মোট ১১১.১ ওভারে ৩৪৫ । উইকেট পতন: ৫-২৬৬, ৬-২৮৮, ৭-৩০৫, ৮-৩১৩, ৯-৩৩৯, ১০-৩৪৫। বোলিং: সাউদি ২৭.৪-৬-৬৯-৫, জেমিসন ২৩.২-৬-৯১-৩, আজাজ ২৯.১-৭-৯০-২, সোমেরভিলে ২৪-২-৬০-০, রাচীন ৭-১-২৮-০।
নিউজিল্যান্ড: লাথাম অপরাজিত ৫০, ইয়ং অপরাজিত ৭৫, অতিরিক্ত ৪, মোট ৫৭ ওভারে বিনা উইকেটে ১২৯। বোলিং: ইশান্ত ৬-৩-১০-০, উমেশ ১০-৩-২৬-০, অশ্বিন ১৭-৫-৩৮-০, জাদেজা ১৪-৪-২৮-০, অক্ষর ১০-১-২৬-০।