বিএনএ, ভগবানগোলা: জন্ম সার্টিফিকেট পেতে ধাইমাদের ঘোষণাপত্র থাকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় সুদিন ফিরেছে তাঁদের। ১৯৮৯সালের পর যাঁরা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছেন তাঁদের জন্ম সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ভগবানগোলা-১ ব্লক। কৃষক বাজারে চারটি কাউন্টার করে তারা আবেদনপত্র জমা নিচ্ছে। এনআরসি আতঙ্কে সেখানেও ভিড় উপচে পড়েছে। আতঙ্কে ৭০বছরের বৃদ্ধও জন্ম সার্টিফিকেটের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ১৯৯০সাল থেকে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন তাঁদেরই সার্টিফিকেটের জন্য আবেদনপত্র নেওয়া হবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আবেদনপত্রে ধাইমাদের ঘোষণাপত্র ছাড়াও কোর্টের হলফনামা, ধাইমার ভোটার এবং আধার কার্ডের প্রতিলিপি, পাঁচজন স্থায়ী বাসিন্দার ঘোষণাপত্র। যিনি সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করছেন তাঁর ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এবং রেশন কার্ডের জেরক্স কপি দরকার হচ্ছে। আবেদনকারীরা বলেন, বাকি সব তথ্য দিতে কোনও সমস্য নেই। কিন্তু ধাইমাদের কাছে সার্টিফিকেট নিতে গেলেই তাঁরা ৫০, ১০০ আবার কখনও ১৫০টাকা ফিজ হাঁকছেন। তা না দেওয়া হলে তাঁরা বেঁকে বসছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আবেদনকারী সাইমা খাতুন বলেন, ধাইমার কাছে ৫০ টাকা দিয়ে ঘোষণাপত্র নিয়ে এসেছি। উনার কাছে অনেকেই যাচ্ছেন। সবার কাছেই তিনি ফি নিচ্ছেন। শেখ হেলালউদ্দিন বলেন, ভাইঝির জন্ম সার্টিফিকেট নেই। ঘরেই তাঁর জন্ম হয়েছিল। এখন সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য ধাইমার ঘোষণাপত্র দরকার হচ্ছে। সবাই টাকা নিচ্ছে, ওরাই বা বিনামূল্যে পরিষেবা দেবে কেন। এক ধাইমা বলেন, এখন আর কাজ নেই। পাঁচ থেকে ছ’বছর আগেও ডাক আসত। কিন্তু এখন বছরে তিন চারটি ডাকও আসে না।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, জন্ম সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই অফিসে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল। সেকারণেই ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কৃষক বাজারে এলাকার কবে কোন পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা আবেদন জমা দিতে পারবেন তা আগে থেকেই নোটিস করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মহিষাস্থলী পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের আবেদনপত্র নেওয়া হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য ভোর থেকে লোকজন লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই পঞ্চায়েতের সদস্য রিন্টু শেখ বলেন, এলাকার অধিকাংশ পরিবারের কোনও রকমে দিন চলে। আবেদনপত্র জমা দিতে তাঁদের অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। কোর্টের হলফনামা নিতে টাকা দরকার হচ্ছে। ধাইমারাও টাকা নিচ্ছেন। মানুষজন নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। দিনমজুরের কাজ করার জন্য অনেকে পরিবার নিয়ে ভিনরাজ্যে রয়েছেন। কাজ বন্ধ করে তাঁরাও আবেদনপত্র দিতে আসছেন। ভগবানগোলা-১ ব্লকের বিডিও পুলককান্তি মজুমদার বলেন, সব সময়ই জন্ম সার্টিফিকেটের জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়া যায়।
আধিকারিকরা বলেন, আগে জন্ম সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য এত হুড়োহুড়ি পড়ত না। কিন্তু সিএএ বিল পাশ হওয়ার পর তা নেওয়ার জন্য ব্লক অফিসগুলিতে লম্বা লাইন পড়ে যাচ্ছে। সার্টিফিকেটের চাহিদা বাড়তেই ধাইমাদের মুখে হাসি ফুটেছে। তাঁদের কাছে কেউ ঘোষণাপত্র নিতে এলেই তাঁরা সাফ জানাচ্ছেন, দিতে পারি। কিন্তু তারজন্য ফি লাগবে।