বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
পুলিস তদন্তে জানতে পারে, জিয়াগঞ্জে এসে সপরিবারে শিক্ষককে খুন করার সময়ও তার মোবাইল বন্ধ ছিল। সবকিছুই ঠিক পথেই এগচ্ছিল। কিন্তু একটি ভুলই সব কিছুর পর্দা ফাঁস করে দেয়। সে খুন করে যাওয়ার পর আজিমগঞ্জেই মোবাইল আবার সুইচ অন করে। সিআইডি আগে থেকে মোবাইলের টাওয়ার ডাম্প করে রেখেছিল। সন্দেহভাজনদের প্রত্যেকের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পুলিস সংগ্রহ করে। সাহাপুর গ্রামের যারা ওই শিক্ষকের কাছে পলিসি করেছিলেন তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়। সবার কাছেই জানতে চান ঘটনার দিন তাঁরা কোথায় ছিলেন। তাঁরা ঠিক কথা বলছিলেন কিনা তা মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে আধিকারিকরা মেলাচ্ছিলেন। উৎপলকে জেরার সময় সে তদন্তকারীদের জানায়, ঘটনার দিন সে সাগরদিঘিতে মোবাইলের একটি যন্ত্রাংশ লাগাতে এসেছিল। কিন্তু তার টাওয়ার লোকেশন দেখে পুলিস জানতে পারে সে ওইদিন আজিমগঞ্জে এসেছিল। কিন্তু বারবার জেরা করার পরও সে বলতে থাকে দশমীর সকালে সে আজিমগঞ্জ যায়নি। এক সময় তদন্তকারীরা বিশ্বাস করে নেয় হয়তো সাগরদিঘিতে থাকলেও তার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন আজিমগঞ্জ দেখাচ্ছিল। এমনটা হতেই পারে। কিন্তু তার উপর সেই থেকেই সন্দেহ হয়েছিল আধিকারিকদের। তাই পরের বার জেরার সময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া চটি এবং ব্যাগও পুলিস নিয়ে আসে। সেদু’টিও তার নয় বলে জানিয়ে দেয়। পরে এক আধিকারিক ডায়েরি খুলে দেখেন, প্রথমবার জেরার সময় সে বলেছিল দশমীর দিন আজিমগঞ্জ এসেছিল। পুলিস সেসময় প্রত্যেকের বয়ান লিখে রাখছিল। সন্দেহ হওয়ায় তাকে চতুর্থবারের জন্য জেরা করা হয়। সেসময় ওই আধিকারিক বলেন, তুই প্রথমবার জেরার সময় বলেছিলি দশমীর সকালে আজিমগঞ্জে গিয়েছিলি। কিন্তু এখন মিথ্যা বলছিস কেন? সেসময় সে ফের বলে, না স্যার প্রথমবার আমি ভুল বলেছিলাম। ওইদিন আমি সাগরদিঘিতেই ছিলাম। এরপরেই এক আধিকারিক তাকে সপাটে চড় মারতেই সে ভেঙে পড়ে। তারপরেই ধীরেধীরে খুনের কথা স্বীকার করে নেয়।
তার নিখুঁত পরিকল্পনা দেখে তদন্তকারীরা অবাক হয়ে গিয়েছেন। প্রতিটি পদক্ষেপ সে সতর্কভাবে নিয়েছে। কুপিয়ে খুনের পর তার জামায় রক্ত লাগতে পারে। সেটা সে আগেই অনুমান করেছিল। সেকারণেই দু’টি জামা এবং প্যান্ট পরে এসেছিল। পোশাক দু’টি কোথায় ফেলা হবে সেটাও সে আগে থেকে ঠিক করে রেখিছিল। পুলিসকে সে জেরায় জানিয়েছে, জিয়াগঞ্জের ওই শিক্ষকের বাড়ি সে আগে আসেনি। তবে পরিবারের সকলেই তাকে চিনত। এলাকার লোকজনদের কাছ থেকে অবস্থান জেনে সে রেইকি করে গিয়েছিল। খুনের দিন কাউকে কোনও কিছু জিজ্ঞাসা না করেই সে ওই শিক্ষকের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল। এক আধিকারিক বলেন, এত বড় ঘটনার পরেও তার তেমন হেলদোল নেই। তবে তাকে পরিবারের কথা বলে আধিকারিকরা কোনও কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে ভেঙে পড়ছে। কারণ তার পরিবারের একমাত্র সেই রোজগেরে ছিল। তার আয়ের টাকাতেই সংসার চলত। তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, তার বাবা তাকে শিক্ষকের কাছে পলিসি করতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু উৎপল বাড়ির ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই ওই শিক্ষকের কাছে পলিসি করে। ১১বছরের টার্ম ছিল। প্রতি বছর ২৪হাজার টাকা দিতে হতো। কিন্তু দ্বিতীয়বার টাকা জমা দেওয়া নিয়েই শিক্ষকের সঙ্গে তার বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল।