উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
বহরমপুর শহরের মোহনরায় পাড়ার বাসিন্দা বিজয়কৃষ্ণ সাহা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বাড়িতেই মুদি দোকান চালান। তাঁর স্ত্রী মিতালীদেবী গৃহবধূ। এই দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে নীলমণি বড়। তিনি উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে অষ্টম স্থান পাওয়ার খবর প্রকাশ হতেই অখ্যাত মোহনরায় পাড়ার নাম এখন মুখে মুখে ঘুরছে। সেই পরিবারেও এখন প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের ভিড়। দীর্ঘদিন আগে তৈরি দোতলা বাড়ির একটি ঘরে বসে বিট্টু পড়াশোনা করেন। পড়াশোনার ফাঁকে দোকানে বসে বাবাকেও সহযোগিতা করেন। নীলমণি বলেন, উচ্চমাধ্যমিকে ছ’জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তাম। আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা জানার পর কয়েকজন শিক্ষক তেমন বেতন নিতেন না। গৃহশিক্ষক ও স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতায় রাত জেগে পড়াশোনা করে এই সাফল্য পেয়েছি। এখন চিকিৎসক হয়ে সমাজসেবা করতে চাই। কিন্তু, ডাক্তারি পড়তে গেলে প্রচুর খরচ। তা কীভাবে জোগাড় করব তা ভাবতে পারছি না। তাই উচ্চশিক্ষায় কী নিয়ে পড়ব তা এখনও ঠিক করতে পারিনি।
স্ত্রী ও দুই ছেলে ছাড়াও বিজয়কৃষ্ণবাবুর সংসারে তাঁর অসুস্থ বাবা তুষারধর সাহা রয়েছেন। তাঁর বাবার আমলেই এই বাড়ি তৈরি। তিনি হার্টের রোগী। বিজয়কৃষ্ণবাবু বলেন, দুই ছেলের পড়াশোনা এবং বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয়। এতদিন পর্যন্ত কোনও রকমে ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেছি। এখন ছেলের স্বপ্ন কীভাবে পূরণ করব তা ভাবতে পারছি না। এজন্য আত্মীয়দের এবং ছেলের স্কুলের শিক্ষকদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। মিতালীদেবী বলেন, আমি ও আমার স্বামী দু’জনের কেউই তেমন পড়াশোনা করিনি। তাই বিট্টুর পড়াশোনার উপর বিশেষ নজর দিতে পারিনি। বিট্টু নিজের চেষ্টায় এবং শিক্ষকদের সহযোগিতায় এই সাফল্য পেয়েছে। এতে আমরা গর্বিত। বিজয়কৃষ্ণবাবু ও তাঁর স্ত্রী মিতালীদেবী দু’জনেই বলেন, এখন রাজ্য সরকার পাশে দাঁড়ালে ভালো হয়। তবে, যে ভাবেই হোক ছেলের স্বপ্ন পূরণ করবই। নীলমণি বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করব।
প্রসঙ্গত, শহরের জগন্নাথ অ্যাকাডেমিতে পঞ্চম শ্রেণী থেকেই পড়তেন নীলমণি। মাধ্যমিকে তিনি ৬৬২নম্বর নিয়ে পাশ করার পর স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় ৬৪শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। এবার তিনি ৪৮৮নম্বর(সেরা পাঁচটি বিষয়)পেয়ে রাজ্যে অষ্টম হয়েছেন। বাংলায় ৮৩, ইংরেজিতে ৯৮, জীববিদ্যায় ৯৬, রসায়নে ৯৭, পদার্থবিদ্যায় ১০০ এবং অঙ্কে ১০০নম্বর পেয়েছেন। পড়াশোনার বাইরে তিনি ক্রিকেট খেলতে ও গোয়েন্দা কাহিনী পড়তে ভালোবাসেন। তাঁর প্রিয় ক্রিকেটার এমএস ধোনি। তিনি বলেন, বন্ধুদের মতো আমার কাছে স্মার্টফোন নেই। তাই পড়াশোনার প্রয়োজনে বাবার ফোন ব্যবহার করতাম। সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও অনেক সুবিধা পেয়েছি। জগন্নাথ অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, ওর পরিবারের অবস্থা জানি। উচ্চশিক্ষায় ওকে আমরা সবরকম সহযোগিতা করব।