গুরুজনের চিকিৎসায় বহু ব্যয়। ক্রোধ দমন করা উচিত। নানাভাবে অর্থ আগমনের সুযোগ। সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় ... বিশদ
বুধবার বুড়ি মা পুজোর মধ্য দিয়ে তপন দিঘী সংস্কারের কাজ শুরু হয়। এদিন পুজো দিয়ে কাজের শুভারম্ভ করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী বাঁচ্চু হাঁসদা। উপস্থিত ছিলেন তপনের বিডিও সোগেল মোক্তার সহ আরও অনেকে। জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র পড়ে তুলতে রাজ্য সরকারের মৎস্য দপ্তরের তরফে ৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে দিঘি সংস্কার, দীঘির চার পাশে ইটের প্রাচীর তৈরি করা হবে। পাশাপাশি মৎস্যজীবিদের জন্য বানানো হবে হিমঘর। দীর্ঘদিন এই হিমঘরে মাছ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন তাঁরা। এছাড়া ওই এলাকায় একটি রাস্তা তৈরি করে সেটি সাজিয়ে তোলা হবে। সেই রাস্তার ধারে হবে সুন্দর রেস্তোরাঁ। এমন পরিবেশে পর্যটকদের থাকার সুব্যবস্থা করা হবে। একেবারে ইকো পার্কের আদলে তপন দিঘিকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি দিঘির চার পাশে যে জমিগুলি দখল হয়ে আছে তা দখল মুক্ত করার জন্য বাসিন্দাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ মানা না হলে সেই জায়গা দখল মুক্ত করতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও প্রশাসনের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাচ্চু হাঁসদা এদিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তপন দিঘি সংস্কারের অভাবে মজতে বসেছিল। আমাদের সরকার এসে এই দিঘি সংস্কারের উদ্যোগ নিল। ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ের দিঘির সংস্কার করে ইকোপার্কের আদলে এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। মৎস্যজীবিরা যেমন তার ফলে উপকৃত হবেন, তেমনি জেলার পর্যটনের চিত্রটাও বদলে যাবে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রায় ৮৭ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এই তপন দিঘি। কথিত আছে, গঙ্গারামপুরের বান রাজার আমলে এই জলাশয়টি খনন করা হয়েছিল। তবে ঠিক কবে নাগাদ এই জলাশয় খনন করা হয়েছিল, সেব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট নথি নেই। জনশ্রুতি রয়েছে, এই বান রাজা এক সময়ে তপন দিঘিতে তর্পণ করতে আসতেন। সেই তর্পণ থেকেই এলাকার নাম হয় তপন। এর পরবর্তী সময়ে এই বিশাল জলাশয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে জনবসতি। এই দিঘির উপর নির্ভরশীল ছিলেন একটা বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। একটা সময়ে এই ব্লকের বহু মানুষের নিত্যদিনের জলের যোগান আসত এই দিঘি থেকেই।
ধীবর সম্প্রদায়ের বহু মানুষ ওই দিঘি থেকেই মাছ ধরে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতেন। এছাড়া শীতকালে শুরু হতেই বহু প্রজাতির পরিযায়ী পাখিরা এখানে ভিড় জমাতে আসত। কিন্তু সেসব আজ অতীত। দীর্ঘদিন যাবৎ এই দিঘি সংস্কার না হওয়ার ফলে কার্যত হারিয়েই গিয়েছে তার গৌরব। এমনকি সেই দিঘির অস্তিত্বই প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে। আবর্জনা ও কচুরিপানায় ঢাকা দিঘিতে মাছ ধরার সুযোগও কমে যায়। বহু ধীবর সম্প্রদায়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন। দিঘির আশপাশে পরিযায়ী পাখিদের ভিড় কমতে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা খোকন হালদার বলেন, এই তপনদিঘিতে মাছ ধরে আমরা সংসার চালাতাম। কিন্তু দিঘি মজে যাওয়ার ফলে এখন আর তাতে মাছ নেই বললেই চলে। আমরা সংসার চালানোর জন্য অন্য পথ বেছে নিয়েছি। তবে দিঘি সংস্কারের কাজ শুরু হলে আমাদের ভাগ্য ফিরতে পারে। তখন আবার আমরা মাছ ধরতে পারব।