বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
গতকালই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেছিলেন, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে আমেরিকা। তাঁর সেই আশঙ্কাই বোধহয় সত্যি হতে চলেছে। কারণ, বৃহস্পতিবার আমেরিকায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ছুঁয়েছে এক হাজার। পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। আগেই ২ লক্ষ কোটি ডলারের বিশেষ প্যাকেজ নিয়ে সহমত পোষণ করেছে মার্কিন কংগ্রেস। নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন, লাওয়া, লুইজিয়ানা, উত্তর ক্যারোলিনা, টেক্সাস এবং ফ্লোরিডায় জনস্বাস্থ্যের উপর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
প্রতি মুহূর্তে নিউ ইয়র্কের করোনা পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, নিউ ইয়র্ক ঘাতক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চারিদিকে শুধুই মৃত্যু আর মৃত্যু। ৩০০ ছুঁই ছুঁই মৃতের সংখ্যা। আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৩০ হাজার। ভালো নেই নিউ ইয়র্কের পড়শি শহরগুলিও। নিউ জার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান বা ফ্লোরিডা এখন করোনা সংক্রমণের ‘হটস্পট’। নিউ জার্সিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৪০২ জন। মারা গিয়েছেন ৬২ জন। ক্যালিফোর্নিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার। মৃতের সংখ্যা ৬৫। করোনা ভাইরাসের ছোবলে প্রথম মৃত্যু হয় ওয়াশিংটনে। সেখানে এখন কোভিড-১৯ পজিটিভ মানুষের সংখ্যা ২ হাজার ৫৮৮। প্রাণ হারিয়েছেন ১৩০ জন। ফ্লোরিডা, টেক্সাস, জর্জিয়া সহ একাধিক শহরও করোনায় কাহিল।
এদিন হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা সর্বশক্তি দিয়ে নিউ ইয়র্কের পাশে দাঁড়াব। এই মুহূর্তে করোনার সঙ্গে লড়াই করাটাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।’ শুধু মুখের কথা নয়। গোটা আমেরিকা জুড়ে করোনা পরীক্ষার পরিকাঠামো আমূল বদলে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। করোনা রোধে লকডাউন চলছে আমেরিকায়। প্রায় ১০ কোটি মানুষ গৃহবন্দি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, লকডাউনের মোকাবিলা করতে নাগরিকদের জন্য ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। বছরে যাঁদের ৯৯ হাজার ডলারের কম আয়, তাঁদের অ্যাকাউন্টে এই টাকা পাঠানো হবে। বেকার যুবক-যুবতীদের সঙ্কটকালীন ভাতাবাবদ ২৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার খরচের অনুমোদন মিলেছে। করোনার জেরে যাঁরা কর্মহীন হয়েছেন তাঁরা যাতে মাসিক বেতনের পুরোটাই পান, তারও আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার খরচ করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রেজারি সচিব স্টিভেন মাচিন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ধরে নিচ্ছি, করোনার সঙ্গে আমাদের তিনমাস যুদ্ধ করতে হবে। আশা করি, এই সময়ের মধ্যে আমরা জয়ী হব। ভেঙে পড়া অর্থনীতিকেও আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সবরকমের চেষ্টা চলতে থাকবে।’ ট্রাম্পও বলেছেন, ‘আমেরিকাবাসীর আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি থাকবে না।’
করোনার মোকাবিলায় চীন ঘুরে দাঁড়ালেও নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে। বৃহস্পতিবার ২০ জনের দেহে কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ গত দু’দিনে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭ জন। তবে তাঁদের কেউই চীনের নাগরিক নন বলে দাবি করেছে সেদেশের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। আক্রান্তরা সবাই বিদেশি। সেই সঙ্গে স্বস্তির যেটা, তা হল হুবেই প্রদেশ ও তার রাজধানী উহানে নতুন কোনও সংক্রমণের খবর মেলেনি। তবে মৃত্যুমিছিল চলছেই। গতকালও করোনা আক্রান্ত ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত চীনে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৮৭। স্বাস্থ্য কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, হুবেই প্রদেশে ৫৮ জন এবং চীনের অন্যান্য প্রদেশ মিলিয়ে ১৫৯ জন করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। হুবেইয়ের স্বাস্থ্য কমিশন সূত্রে খবর, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৯১৪ জন। তাঁদের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়াও ২৮৭ জন অতি সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
এদিকে, স্পেনের অবস্থাও ভয়াবহ। মৃত্যুমিছিলে ইতালির পর চীনকে টেক্কা দিয়ে ফেলেছে স্পেন। মৃতের সংখ্যা ছুঁল ৪ হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার বলি হয়েছেন ৬৫৫ জন। অভাবনীয়ভাবে গৃহবন্দি গোটা স্পেন। তার পরেও এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যুতে স্বভাবতই উদ্বেগ বাড়ছে। স্পেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়েছে ৫৬ হাজার। সঙ্কটের একবারে চরম সীমায় পৌঁছে নতুন ভোরের সন্ধান পাচ্ছে ইতালি। সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দাবি, মঙ্গলবার কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর তালিকা নিম্নমুখী। ইতালিতে প্রথম করোনায় মৃত্যু হয় ২১ ফেব্রুয়ারি। তারপর আর মৃত্যু মিছিল থেমে থাকেনি। এখনও চলছে। চারিদিকে শুধুই মৃত্যুপুরী। করোনায় মৃত্যুতে বিশ্বরেকর্ডও গড়ে ফেলেছে ইতালি। একদিনে ৭৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দিনটি ‘ব্ল্যাক স্যাটারডে’ বলে মনে রাখবে শিল্প-শিল্পীর দেশের আগামী প্রজন্ম। এদিন অবশ্য কিছুটা আশার কথা শুনিয়েছেন সিভিল প্রোটেকশন সার্ভিসের অ্যাঞ্জেলো বোরেলি। তিনি বলেছেন, সোমবার থেকে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ছোট হচ্ছে মৃত্যুর দৈনন্দিন তালিকাও। করোনা হানায় বিধ্বস্ত ইরান ও ফ্রান্স। বৃহস্পতিবার ইরানে মৃত্যু হয়েছে ১৫৭ জনের। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ২,২৩৪। ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের মুখপাত্র কিয়ানুস জাহানপোর জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২,৩৮৯। ফ্রান্সের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। মঙ্গলবারই ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা একলাফে বেড়েছে ২৪০। মৃতের তালিকা বেড়ে হয়েছে ১, ১০০। সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ৩০০ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। আক্রান্তরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা সঙ্কটজনক। ফলে মৃতের তালিকা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।