বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
বিএনপি যখন শপথ প্রশ্নে কঠোর অবস্থানের বার্তা দিচ্ছিল, বলছিল, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, তা নির্বাচিত সব এমপি মেনে নেবেন। যখন খবর বেরল ‘শপথ না নেওয়ার ওয়াদা করলেন বিএনপির নির্বাচিত ২ জন’, তখন সবকিছুকে তামাশা বানিয়ে ২৯ এপ্রিল হঠাৎ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির ছাড়া বিএনপির জয়ী ৬ সাংসদের বাকি ৪ জনই শপথ নিয়ে নিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের বিএনপি সাংসদ আব্দুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩-এর হারুনুর রশিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২-এর আমিনুল ইসলাম এবং বগুড়া-৪ আসনের মোশারফ হোসেন সংসদে এসে স্পিকার শিরিন শর্মিন চৌধুরীর কাছে শপথ নেন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছিল, ৯০ দিন সময়সীমার মধ্যে জয়ী প্রার্থীরা সাংসদ হিসাবে শপথ না-নিলে কেন্দ্রগুলিকে ‘শূন্য আসন’ বলে ঘোষণা করে ফের ভোটের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। সেই হিসেবে ৩০ এপ্রিল ছিল সময়সীমার শেষ দিন। মজার কথা হল, শপথ না নেওয়ার ঢক্কানিনাদ ভুলে রাতারাতি ডিগবাজি খেয়ে বিজয়ীদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ বিএনপির শীর্ষ নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই। বিএনপির রাজনীতি কোন পথে চলবে তা বলা কঠিন। তবে আপাতত দলের সকলের রাজনৈতিক পাঠের ভিত্তি এটুকুই যে, লন্ডনের ইচ্ছেতেই ঢাকায় শপথ। এখনও দলের একমাত্র ফোকাস দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি।
প্রশ্ন হল, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা কি করে আশা করেছিলেন নির্বাচিতদের শেষ পর্যন্ত সংসদে যাওয়া থেকে তারা বিরত রাখতে পারবেন? বাংলা ভিশন-এর সিনিয়র নিউজ এডিটর মাসুদ কামাল লিখছেন, এমপি হতে গিয়ে, মনোনয়ন প্রাপ্তি থেকে শুরু করে প্রচার চালানো ইত্যাদি বাবদ একজনকে কত বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়— সেটা তাদের অজানা থাকার কথা নয়। এসবই তো বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এক ধরনের বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠান বছরখানেক আগে এক সমীক্ষা করেছিল, তাতে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশে একজন সংসদ সদস্য যদি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে নাও জড়ান, তারপরও প্রতি বছর তাঁর প্রায় দেড় কোটি টাকার মতো আয় হয়। পাঁচ বছরে সাড়ে সাত থেকে আট কোটি টাকা। আর যদি একটু ডানে বামে তাকান, উন্নয়ন কাজগুলো থেকে অল্পস্বল্প কমিশনও নেন, সে আয় কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এমন নিশ্চিত আয় ওই এমপিরা কেন ছাড়তে চাইবেন?
বিএনপির চারজন একসঙ্গে শপথগ্রহণের পর এক এমপি বললেন, দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমানের নির্দেশেই তারা শপথ নিয়েছেন। তিনি যে অসত্য বলেননি সেটা টের পাওয়া গিয়েছিল প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভি জানিয়েছিলেন, সেই কথা সত্য। সঙ্গে সঙ্গে দু’টি প্রশ্ন অবধারিত হয়ে দেখে দিয়েছিল। প্রথম প্রশ্ন, তাহলে চারজনের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির নেই কেন? তারেক রহমানের নির্দেশ কি মহাসচিবের কাছে পৌঁছেনি? লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন কি দলের মহাসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি? নাকি মহাসচিব অবাধ্য হয়েছেন? আর দ্বিতীয় প্রশ্ন, এখন জাহিদুর রহমানের কী হবে? যে অপরাধে তাকে মাত্র একদিন আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হল, সেই একই অপরাধ করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন থেকে নির্দেশ কী করে দেন বাকি পাঁচজনকে? এত ‘বড়’ একটা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কি এমন দ্বিধাদ্বন্দ্ব মানায়? ২৪ ঘণ্টা আগেও দলটির সর্বোচ্চ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের টিকিটে নির্বাচিত এমপিরা শপথ নেবেন না, সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ শপথ নিলে তার বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই ব্যবস্থা কতটা চরম হতে পারে তার প্রমাণও দিলেন তারা, দল থেকে বহিষ্কার করলেন চারদিন আগে শপথ নেওয়া জাহিদুর রহমানকে। এমনকি প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হল। অথচ স্থায়ী কমিটির নেওয়া এমন কঠিনতম সিদ্ধান্ত পাল্টে গেল মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই।
অনেকেই বলছেন, দলকে নিশ্চিত ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতেই তারেক রহমান শেষ মুহূর্তে ছয়জনের শপথের বিষয়ে আর অনড় থাকেননি। এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সাংবাদিক আনিস আলমগির লিখছেন, জনমনে এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, বিএনপি আসলে একটি পলিটিক্যাল পার্টি নাকি খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের ফ্যামিলি প্রোপার্টি? শোনা যাচ্ছে দলের ‘কঠোর সিদ্ধান্ত’ রাতারাতি বদল করে এই চারজনকে সংসদে যোগ দেওয়ার অনুমতির বিনিময়ে ‘ভাইয়াকে’ তাদের দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এটি মোটেও কারও কাছে অবিশ্বাস্য নয়। গত নির্বাচনে বিএনপি আজান দিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। এক আসনে একাধিক ব্যক্তিকে টিকিট ধরিয়ে দফা-রফার মাধ্যমে একজনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ধামরাইয়ে আতাউর রহমান সাহেবের ছেলে ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, সোনারগাঁওয়ে অধ্যক্ষ রেজাউল করিম এবং নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকারসহ অনেকের মনোনয়ন বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। রেজাউল করিমের আসন বিক্রি হয়েছিল পাঁচ কোটি টাকা। এক বালু ব্যবসায়ী তা কিনে নিয়েছে বলে অভিযোগ ছিল।
কিন্তু সবই কি অভিযোগ? নাকি, বিএনপি এবার ভাঙার অপেক্ষায়?