যারা বিদ্যার্থী তাদের মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। নানা বিষয়ে খুঁতখুঁতে ভাব জাগবে। গোপন প্রেম থাকলে ... বিশদ
এটা যদি একটা অধ্যায় হয়, তবে ভোটের বিহারে অপর চরিত্র হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্রেনের সহযাত্রী থেকে শুরু করে রাজগীরের টাঙাচালক, চা বিক্রেতা থেকে শুরু করে লালুপ্রসাদ যাদবের বাড়ির সামনে হাজির থাকা আরজেডির সমর্থক—দিদির খবর জানতে চেয়ে প্রশ্নের কোনও শেষ নেই তাঁদের। এই তালিকায় রয়েছেন এখানকার বহু নেতাও।
রাবড়ি দেবী, তেজস্বী যাদব, মিশা ভারতীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য লালুপ্রসাদের বাড়ির সামনে নিত্য দিন সকাল থেকেই ভিড় থাকে সাংবাদিকদের। আর থাকেন নানা সমস্যা নিয়ে আসা সাধারণ মানুষ, দলীয় সমর্থকরা। বাঙালি সাংবাদিক বুঝতে পেরে নিজে থেকেই পরিচয় করলেন আরজেডি কর্মী জনসন পেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর আগ্রহের শেষ নেই। তাঁর কথায়, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে কেমন বলছেন দেখেছেন! বলছেন, ক্ষমতায় এসে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে মেপে নেবেন। আমি তো সোশ্যাল মিডিয়ায় দিদির বক্তব্য শুনি।’ তারপরই প্রশ্ন, ‘আচ্ছা, দিদির আসন এবার কত বাড়বে? আর বিজেপির? দিদি তো বলছেন, ওরা শূন্য পাবে!’ বাংলার রাজ্য-রাজনীতি নিয়ে এত নিখুঁত অধ্যবসায় সত্যিই চমকে দেওয়ার মতোই।
কিন্তু, চমকের তখন সবে শুরু। সোশ্যাল মিডিয়া তো দূরের কথা, নিজের মোবাইলে ইন্টারনেটও নেই রাজগীরের টাঙাচালক ছোটু যাদবের। দু’এক কথার পর বললেন, ‘এখানে কাজ তো হচ্ছে। স্টেশন থেকে বেরিয়েই ঝাঁ চকচকে রাস্তা। এটা নাকি চার লেনের হবে। হবে চিড়িয়াখানা, স্টেডিয়াম। কিন্তু জানেন তো, এখানে জাতপাতের অঙ্কে ভোট হয়। কে জিতবে বলা কঠিন।’ এরপরই সোজা চলে গেলেন বাংলায়। বললেন, ‘বাংগালে কী হবে এবার? বিজেপির আসন বাড়বে আদৌ? মমতা দিদি কিন্তু দারুণ লড়ছেন।’ কথায় কথায় শুনিয়ে দিলেন, ‘এখানে ঘোড়ার গাড়ির বদলে টোটো চালু করতে চেয়েছিল। আমরা রাজি হইনি। ঘোড়ার গাড়ি এখানকার ঐতিহ্য। এর টানেই কত মানুষ আসেন। ঘোড়ার গাড়ি আমরা বন্ধ করব না।’ বিহারের মতো বাংলায় জাতপাতের অঙ্কে কতটা ভোট হয়, তা নিয়ে বেজায় আগ্রহ দেখিয়েছেন আর এক টাঙাচালক। অবশ্য একইসঙ্গে জানিয়েদিলেন, ‘বিহারে জাতপাতের বেড়া ক্রমেই আলগা হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রদায়ের পাশাপাশি মানুষ উন্নয়নকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন।’ বিজেপির রাজ্য দপ্তরের বাইরে কথা হচ্ছিল গেরুয়া শিবিরের কিছু সমর্থকদের সঙ্গে। বাংলায় জমাট বাম সংগঠন কেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল, তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। সেই প্রসঙ্গে বিহারের সঙ্গে তুলনা চলছিল বাংলার। বিহারেও একসময় বামেদের বেশ শক্তিশালী সংগঠন ছিল। নালন্দা রেল স্টেশনে কথা হচ্ছিল সিন্টু কুমার, রামপ্রসাদদের সঙ্গে। তাঁদের কথায়, ‘বাংলায় ভোট নিয়ে শুনেছি খুব উৎসাহ থাকে। ভোটদানের হারও বেশি।’ তাঁদের প্রশ্নও, ‘ওখানে বিজেপির আসন কী এবারে বাড়বে? মানুষ কি চাইছে?’ আর মমতার প্রসঙ্গ উঠতেই আলোচনায় যোগ দিলেন আরও কয়েকজন। কিন্তু রাজগৃহ এক্সপ্রেসের ঘোষণায় তাল কাটল।
কেবল সাধারণ মানুষ নন, পাটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজ্য দপ্তরগুলিতে নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বিহারের রাজনীতির পাশাপাশি সাবলীলভাবে উঠেছে বাংলার রাজনীতির কথাও। কেউ বলেছেন, বাংলায় ভোট দু’দলের মধ্যে ‘পোলারাইজ’ হওয়ার কথা, তো কেউ জানতে চেয়েছেন বাম-কংগ্রেসের সাম্প্রতিক হাল। কেন বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট ভেস্তে গেল, জোট হলে পরিস্থিতি কোনদিকে যেত, তাও উঠেছে তাঁদের বক্তব্যে। রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের মুখে মমতার পাশাপাশি এসেছে জ্যোতি বসু থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের কথাও।
সব মিলিয়ে এবারের ভোটে ‘মমতার বাংগাল’-এ কী হবে, তা নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই পাটনা তথা বিহারবাসীর।