সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মক্ষেত্রে বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার ... বিশদ
নানাখেড়া বাসস্ট্যাণ্ড থেকে সকালে হল রোড শো। কালভৈরব শ্মশান পর্যন্ত। দেবেন্দ্র ফাড়নবিস বারংবার বললেন, কংগ্রেসের মিথ্যাচারের কথা। পাঁচ মাস আগেই বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্ষমতায় এসে কৃষিঋণ শোধ করে দেবে। ক্ষমতায় তো তাদের আনলেন আপনারা। কোথায়? কতজন পেলেন ঋণ মকুবের চেক? আমাদের মহারাষ্ট্রে আসুন। দেখে যান যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তাই পালন করেছি। সব কৃষিঋণ মকুব। ফাড়নবিসের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনিল ফিরোজিয়া। বিজেপির নতুন প্রার্থী।
মিথের শহর উজ্জয়িনী।
শিপ্রা নদীর তীরে সন্ধ্যার আরতী দেখতে মনোহর লাল পাওয়ার বললেন, এখানে কেউ ভুখা থাকে না জানেন তো? সে যত ভিক্ষুক কিংবা দরিদ্রই হোক , উজ্জয়িনী নগরীতে একবার মহাকালের শরণাপন্ন হলে খাবার কিন্তু জুটবেই। একদিন পরীক্ষা করে দেখবেন সকাল থেকে নিজে খাবেন না। দেখবেন কীভাবে যেন কোনও মন্দিরের পাশে ভান্ডারা কিংবা আচমকা প্রসাদ পেয়ে যাবেনই। ৫৬ বছর ধরে আছি এই শহরে। কেন জানেন তো? তার দিকে তাকাতেই মনোহর বললেন, এক কুলটা নারী গোটা নগরীর খাবার একাই খেয়ে নিচ্ছিলেন। তাঁকে রাজা বিক্রমাদিত্য অবশেষে শহর থেকে বহিষ্কার করলেন। তার সঙ্গেই চলে গেল অনাহার। সেই রীতি আজও চলছে। কেউ না খেয়ে থাকে না। হাত বাড়িয়ে কাকে যেন ডাকলেন মনোহর লাল। শিপ্রা নদীর ঘাটে সব আলো জ্বলছে। যে লোকটি এসে দাঁড়ালেন তাঁর নাম ওমপ্রকাশ। মনোহর বললেন, এই যে, এই প্রকাশের সঙ্গে আগামীকাল ভোরে যাবেন, ও আপনাকে দেখিয়ে আনবে ভুখা মাতার মন্দির!! সেকি? অনাহারেরও আবার দেবী? তাঁরও মন্দির আছে উজ্জয়িনীতে। মনোহর লাল বললেন কী নেই এখানে? একটা ডুব দিয়ে আসুন শিপ্রায়। দেখবেন অর্ধেক রোগ চলে গেল!
মিথের শহর উজ্জয়িনী।
বিক্রমাদিত্য কিংবা মহাকাল অথবা শিপ্রা নদীমাতাকে ঘিরে থাকা মিথের তো কমতি নেই। কিন্তু এতকাল ধরে রাজনৈতিক মিথ ছিল বিজেপিকে কেউ হারাতে পারে না। বছরের পর বছর লোকসভাই হোক, বিধানসভাই হোক কিংবা পুরসভা, উজ্জয়িনী বরাবর বিজেপির দুর্গ। অথচ সেই মিথ ধরে রাখতে আপাতত সবথেকে টেনশনে নরেন্দ্র মোদির দল। কারণ অশনি সঙ্কেতের মতো বার্তা দিয়েছে সাম্প্রতিক বিধানসভা ভোটের ফলাফল। বিজেপি এই প্রথম দেখা যাচ্ছে লোকসভার মধ্যে থাকা সবকটি বিধানসভা আসনের মিলিত ভোট মিলিয়ে আড়াই হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়েছে। এই বিস্ময়কর ঘটনা এতটাই স্নায়ুকে নাড়িয়ে দিয়েছে যে জয়ী এমপিকেই সরিয়ে দিয়েছেন মোদি। কংগ্রেসের টাউন উপ সভাপতি নরেন্দ্র পচৌরি বললেন, চিন্তনলাল মালব্যকে যদি এবার বিজেপি টিকিট দিতো তাহলে পরাজয় নিশ্চিতই ছিল। কারণ সেই পাঁচ বছর আগে প্রচারে তাঁকে একবার দেখা গিয়েছিল। আর কখনওই তাঁকে উজ্জয়িনীতে চোখে পড়েনি। তাই তাঁর ব্যর্থতা ঢাকতে এবার জয়ী এমপিকেই সরিয়ে নতুন মুখ এনেছে বিজেপি। আর কী অবস্থা দেখুন। স্থানীয় কাউকে পেল না বিজেপি। সেই ৪০ কিলোমিটার দূরের জনপদ তারানার বাসিন্দা, সেখানকার বিধায়ককে উজ্জয়িনীর লোকসভা আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। সুতরাং আবার বোঝা যাচ্ছে তাঁকে ভোট দিলে একই দশা হবে। আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কংগ্রেসের প্রার্থী বাবুলাল মালব্যও বাইরের মানুষ। তিনিও স্থানীয় নয়। এটাই হল আমাদের স্ট্যাটাস। বিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোহিতাশ্ব সিং বললেন, উজ্জয়িনীকে স্রেফ একটা ট্যুরিস্ট স্পট হিসাবেই দেখা হয়। অথচ পাশের শহর ইন্দোর দেখতে দেখতে দেশের মধ্যে একটা এত বড় উন্নত নগরী হয়ে গেল। আমরা একেবারে লাগোয়া এবং বহু প্রাচীন হওয়া সত্ত্বেও কোনও গুরুত্বই পেলাম না।
কার্যত আজ উজ্জয়িনীতে কোনও কাজ নেই। একটা সময় ছিল অসংখ্য কারখানা আর ক্ষুদ্র শিল্পের ইউনিট। গোটা শহরের যুবকরা কাজে যেত। সব শিল্প বন্ধ। ইন্দোর যতই আধুনিক হচ্ছে, বিজনেস সেন্টার হচ্ছে, উজ্জয়িনী ততই ডুবে যাচ্ছে হতাশায়। কারণ হাজার হাজার একর জমি। অথচ একটিও শিল্প হচ্ছে না। তাই আজও উজ্জয়িনীর একজনই রক্ষাকর্তা। অটোচালক থেকে মাহেশ্বরী শাড়িবিক্রেতা প্রত্যেকের একটাই জবাব, মহাকাল মন্দিরের জন্যই জীবিকা বেঁচে রয়েছে। সুতরাং মিথের শহর উজ্জয়িনীতে স্থায়ী মিথ একটাই। মহাকাল!