নিজস্ব প্রতিনিধি, তালিত: ভোটের মুখে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা বিজেপির কাছে কার্যত ব্যুমেরাং হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষকতার চাকরি হারিয়েছেন। আদালতের রায়ের এক সপ্তাহ আগে বিজেপি নেতারা ‘বোমা’ ফাটানোর বার্তা দিয়েছিলেন। শিক্ষকদের চাকরি গেলে তাঁদের রাজনৈতিক সুবিধা হতে পারে বলে বিজেপি নেতাদের অনেকেরই ধারণা ছিল। কিন্তু সেটা উল্টো হয়ে গিয়েছে। সেই কারণে রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে এই ইস্যুতে সহানুভূতির বার্তা শোনা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে। তালিতের সভা থেকে তিনি বলেন, যে সমস্ত যোগ্যদের চাকরি গিয়েছে তাঁদের পাশে দল থাকবে। আইনি সহযোগিতা দেওয়া হবে। লিগ্যাল সেল খোলা হবে। নিয়োগ দুর্নীতিতে অনেক যোগ্য প্রার্থী সমস্যায় পড়েছেন। দুর্নীতিগ্রস্তদের জন্য তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের পাশে দাঁড়াব। এটা মোদির গ্যারান্টি।
এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা জবাব দিয়ে রায়না ও সমুদ্রগড়ের সভা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা কোর্টে কেস লড়ছি। শিক্ষাদপ্তর লড়ছে। শিক্ষক শিক্ষিকাদের চাকরি খেতে দেব না। ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি আপনি খেয়েছেন। আপনার দল খেয়েছে। সিপিএমকে টাকা দিয়ে কোর্টে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। আপনার দলের থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। আপনার প্রয়োজন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নেই। সবাই চোর, দুর্নীতিগ্রস্ত আর আপনি সাধু? আপনাদের মতো বড় চোর কেউ নেই।
এদিন রায়নার মাধবডিহির মঞ্চে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাকে ভাতে মারার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গর্জে উঠেছেন। বিজেপি আর কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবে না। মানুষ ওদের জবাব দেবে।
বঞ্চনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীও প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছেন। আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখেছেন। বাংলার মানুষও আপনাদের ভোট দেওয়া বন্ধ করে দেবে। এদিন প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেন, তৃণমূল সব প্রকল্পের নাম বদলে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার বিনামূল্যে রেশনের চাল দিচ্ছে। জনধন যোজনা প্রকল্পে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন হিসেব দিয়ে ফের বলেন, বিনামূল্যে রেশন রাজ্য দিচ্ছে। বিজেপি মিথ্যা বলে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তালিতের সভা থেকে বলেন, আত্মনির্ভর ভারত বানানোর সংকল্প নিয়েছি। দেশের সেবা করতে চাই। আমাদের সবার স্বপ্ন পূরণ করা আমার উদ্দেশ্যে। দেশ থেকে গরিবি হটাব। তৃণমূল নেত্রী কটাক্ষ করে বলেন, উনি সব বিক্রি করে দিচ্ছেন। শুধু দেশটা বিক্রি করতে বাকি রয়েছে। সমস্ত ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। মানুষ বাঁচবে কীভাবে!
এদিন জেলার দুই প্রান্তে যযুধান দু’পক্ষের সভা ছিল। নিয়োগের ইস্যুতে দু’পক্ষের সুর চড়া ছিল। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ খোলা ছাড়া উপায় ছিল না। যোগ্য বহু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি যাওয়ার পর তাঁরা বেকায়দায় পড়ে গিয়েছেন। এরজন্য বিজেপিকে দোষারোপ করে চাপে ফেলে দেয় তৃণমূল। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী যোগ্যদের পাশে থাকার আশ্বাস দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। তিনি বলেন, সৎ মানুষের পাশে আমরা সবসময় দাঁড়াই। যোগ্যদের পাশে থেকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে।